তপুর চোখ দুটো খোলা। জানালা দিয়ে রাত জাগা চাঁদের আলো হালকা হয়ে ঝড়ে পড়ছে তপুর নোংরা মেসের বিছানায়। এমনিতে এই নগ্ন ময়লা বিছানায় তপুর প্রতিদিন দিব্যি ঘুম এসে যায়, সারাদিন ভার্সিটি আর টিউশনি করা ক্লান্ত শরীর নিজেকে মেলে দেয় পুরনো তুলার আরামে।
এভাবেই জীবন চলছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন তার সাথে পরিচয় ঘটে মিলার। ক্লাসের পড়ানো শেক্সপিয়ার নিয়ে আলোচনা করতে করতে কখন যে তারা একে অপরের রোমিও জুলিয়েট হয়ে যায় তা কেউ বলতেই পারে না। রঙিন পাখি হয়ে উড়তে থাকে দুইজন। একজন আরেকজনের চোখে এঁকে দেয় ভালোবাসার চাদর। একজন অপরজনের বুকে ঝড়ে পড়ে মায়ার বৃষ্টি হয়ে। এই গতকালও তারা টিএসসিতে এক প্লেট ফুচকা ভাগ করে খেয়ে কাঁটিয়েছে ভালোবাসার দুই ঘণ্টা।
কিন্তু আজ, ঘণ্টাখানেক আগে তপু খবর পেল, মিলার সঙ্গে খুব খারাপ কিছু একটা হয়েছে। সুনসান দুপুরে মিলা যখন তার বাসার গলির থেকে বের হচ্ছিল তখন একটা মাইক্রোবাস তাকে তুলে নিয়ে যায়। বিকাল দিকে মিলার লাশ পাওয়া যায় গুলশান লেকের ধারে। তপু খবর পেয়ে সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যালে আসে। এরপর মর্গে মিলার নিথর চোখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, সেই চোখে ঘৃণা ছাড়া আর কিছু নেই। পাশেই ডাক্তাররা বলাবলি করছে, নির্ঘাত রেইপ কেইস, ব্লিডিং দেখে বোঝা যাচ্ছে যারা কাজটি করেছে তারা পশুর চাইতেও নিচে নেমে গিয়েছিলো।
তপু বের হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পুকুর পাড়ে এসে বসে। তার চোখে একটুও জল নেই। মিলাকে যখন পশুরা খণ্ড বিখণ্ড করে উল্লাসে মেতে ছিল, তখন তপু ছিল উত্তরার জামদানী পল্লীতে। টিউশনির অতি কষ্টে জমানো টাকা দিয়ে মিলার জন্য সেখান থেকে লাল টুকটুকু একটা জামদানী কিনেছিল সে। ঠিক এরপর পরই সে মিলার ছোট বোনের ফোন পেয়ে ছুটে আসে ঢাকা মেডিক্যালে।
মিলা তপুকে ডাকছে। তার মায়াবী দুচোখে মিশে আছে অনেক অভিমান , তপুর সাথে যে কথা বলা হয় নি আজ সারাটা দিন। তপু এখনি চলে যাবে মিলার কাছে, যেখানে কেউ কোন মেয়েকে পথঘাট থেকে তুলে নিয়ে শরীর ছিঁড়ে খুঁড়ে খাবে না। নতুন কেনা লাল টুকটুক জামদানী শাড়িটা তপু সুন্দরভাবে ফ্যানে বেঁধে তাতে ঝুলে পড়ে। মিলার ডাকে সারা দেয় সে। রাত গভীর হয়। তপুর নিষ্প্রাণ চোখ এখনো খোলা। সেই চোখে দ্যাখা মেলে এই বীভৎস বাস্তবতা থেকে মুক্তির আনন্দ.......
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৫ রাত ১০:৩১