সামনেই বিশ্বকাপ ফুটবল। প্রথমেই স্বীকার করে নিচ্ছি, এটা মোটামুটি একটা বৈশ্বিক আসর, অনেক দেশেই এখন শুরু হয়ে গেছে এ নিয়ে মাতামাতি। আমাদের দেশও এর ব্যাতিক্রম নয়। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, ইটালি বা স্পেন, সকল দেশেরই সমর্থক গোষ্ঠী আছে এই দেশে। অনেকে আবার প্রবল বিক্রম আর উত্তেজনা সহকারে জান প্রাণ দিয়ে সমর্থন করে এসব দেশকে। এই জান প্রাণ দিয়ে সমর্থনের মাঝেই একটা কিন্তু আছে।
আমাদের নিজেদের দেশটার নাম বাংলাদেশ। এদেশের অনেক গর্ব আছে, তার মধ্যে একটা হল ক্রিকেট। এদেশের ছেলেরা ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলে, অনেক বড় বড় দেশকেও কাঁপিয়ে দেয়। তবুও মাঝে মধ্যে প্রচণ্ড অবাক হয়ে লক্ষ্য করি মানুষ বলছে বাংলাদেশের সাথে খেলা হলেও তারা ভারত/পাকিস্তান সাপোর্ট করে, আজীবন সাপোর্টার। যাক, আজকে এই বিস্ময়কর ব্যাপার নিয়ে কথা বলছি না, বলছি অন্য একটি স্পর্শকাতর ব্যাপারে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট খুব ভাল খেললেও আরেকটি বৈশ্বিক জনপ্রিয় খেলা ফুটবলে অনেক বেশি পিছিয়ে আছে। বিশ্বকাপ তো দূরে থাক, এর বাছাইপর্ব খেলারও যোগ্যতা নেই আমাদের, এর পিছে অবশ্য অনেক বড় একটা কারণ আমাদের শারীরিক গঠন। সে যাই হোক, আমাদের দেশের মানুষ ফুটবলে কয়েকটি জনপ্রিয় দেশকে সাপোর্ট করে। কিন্তু শুধু সাপোর্টেই অনেকক্ষেত্রে তা থেমে থাকে না, অনেকে আমি ব্রাজিল তুই আর্জেন্টিনা ক্যান এই নিয়ে মারামারি করে, এমনকি কোন দেশ ভাল (একটাও আমাদের নিজেদের দেশ না) তা নিয়ে খুনাখুনির পর্যন্ত ঘটনা ঘটেছে। আমি এই ব্রাজিল আর্জেন্টিনা নিয়ে অনেক মানুষের এমন আবেগ দেখেছি যে এই আবেগ যদি তাদের মাঝে নিজ দেশের জন্য থাকতো তবে দেশের চেহারাটাই বদলে যেত। একজন একেক দেশ নিয়ে এমন ভাবে গর্ব করে কথা বলে, এমনভাবে তর্ক করে, যে মনে হয়, ওই দেশটাই তার!!!!! এসব দেখে আসলে আমার হাসি পায়। একবার ম্যারাডোনাকে জিগ্যেস করা হয়েছিল, বাংলাদেশের আবেগ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি? তার উত্তর ছিল, বাংলাদেশ কার নাম? আমি নিশ্চিত পেলে কেও এই প্রশ্ন জিগ্যেস করা হলে এর চাইতে ভাল কোন উত্তর পাবো না।
ভাই ও বোনেরা, যে দেশের খেলোয়াড়ের ছবি নিজের প্রোফাইল পিকচার বানিয়েছেন, যেই দেশের পতাকার ছবি নিজের কভার ফটো বানিয়েছেন, সেই দেশের হয়ে তারস্বরে চিৎকার করার আগে একবার হলেও ভাববেন, ৩০ লক্ষ শহীদ আপনাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবছেন, ৭১ এ তারা কি ভুলটাই না করেছিলেন............