আমি বয়সে কিশোর, এদেশের মাটিতে ১৭ টি বসন্ত পার করেছি। আমার মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জ্ঞান হয়ত খুব নগণ্য। তবুও এ কয়েকদিনে দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সংঘটিত স্পর্শকাতর ঘটনাগুলো সম্পর্কে আমার অনুভূতি আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করছিঃ
১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অর্জিত দেশের গর্বিত নাগরিক আমরা, আমার বাংলাদেশী। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সবচাইতে ঘৃণ্য কালো অধ্যায় এর নাম রাজাকার, যারা আমাদের স্বজাতি হয়েও মেতে উঠেছিলো বাঙ্গালী ধ্বংসের রক্তলিলায়।
আজ অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে, বাংলাদেশ এখন শৈশব কৈশোর পার করে তারুণ্যের মঞ্চে পা রেখেছে। বিভিন্ন অস্থিরতা ও পদে পদে দুর্নীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের ৯৯% শিশু এখন বিদ্যালয়ে যায়, উন্নত বিশ্ব এদেশকে অত্যন্ত অগ্রসরমান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজন করে, সবাই মোটামুটি দুই বেলা দু মুঠো খেতে পায়। এর মধ্যে অনেক হতাশার ব্যাপার ছিল রাজাকারদের বিচার না হওয়া। তবে তাও অনেক আদাজল ঘোলা করে এখন হচ্ছে। আর এ বিচার বন্ধে উঠেপড়ে লেগেছে "জামাত শিবির" নামের তথাকথিত একটি রাজনৈতিক দল, যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রকাশ্য বিরোধী হিসেবে স্বীকৃত ছিল (এই "জামাত শিবির" স্বাধীন বাংলাদেশে কিভাবে রাজনীতি করে তাও বিশাল চিন্তার ব্যাপার)।
যাই হোক, এতদিনের আকাঙ্ক্ষিত যে বিচার, সে বিচারে মহামান্য আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা জনগনের কাম্য ছিল না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমার প্রশ্ন, একজন প্রমাণিত খুনে রাজাকার এর শুধু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কি করে হয়? বাংলাদেশের মানুষের রক্ত চেটে খাওয়া পশু শুধু এত অল্পতেই পার পেয়ে যাবে? একে কি এদেশের মানুষ ফাঁসির কাষ্ঠে কোনদিনই দেখতে পারবে না?
আমার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যে চেতনা রয়েছে তা জাগ্রত করার প্রধান কৃতিত্ব প্রয়াত হুমায়ুন স্যার এর, তাঁর বিভিন্ন বই পড়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে শতবার আবেগে আপ্লুত হয়েছি। তাছাড়া আমার নানাজান (মুক্তিযোদ্ধা), আমাকে ছোটবেলা থেকেই শুনিয়েছেন যুদ্ধের গল্প, রাজাকারদের ঘৃণ্য কর্মের কথা , যার ফলে আমি শিখেছি মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে প্রানের চেয়েও ভালবাসতে, মানুষরূপী হায়না রাজাকারদের ঘৃণা করতে। আমি জানি আমার মতন লাখ লাখ ছেলেমেয়ে আজ দেশের প্রতি প্রগার ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ, তাদের শরীরে ছড়িয়ে আছে রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা, তারা চায় দেশের জন্য কিছু করতে।
তাইতো আজ সবাই জড় হয়েছে শাহবাগের মোড়ে, রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে। এ দাবি এদেশের সাধারন জনগণের, আলোর আশায় থাকা মানুষদের। এ দাবির ঘিরে কোন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থের প্রয়াস করা হলে তা হবে অত্যন্ত লজ্জাজনক। এখন জ্বলন্ত শাহবাগ যে দাবি করছে তা গভীর আবেগ থেকে আসলেও অত্যন্ত যথার্থ।
এবার আমি আমার পক্ষ হতে কিছু প্রস্তাব রাখছিঃ
১/ শাহবাগ এর আলোর মিছিলে একটা দৃষ্টিকটু জিনিস লক্ষ্য করা যায়, তা হল আজান এর সময় ও গান বাজনা চলা। অন্তত ৯০ ভাগ মুসলমান এর এই দেশে আজান এর সময় গান বাজনা বন্ধ রাখার আশা করাই যায়।
২/ প্রতি ওয়াক্ত নামাজের জামাতের ব্যবস্থা করা যায় আলোর চত্বরে, তা না পারলে অন্তত জুম্মার নামাজের জামাত। অবশ্য এত মানুষের অজুর ব্যবস্থা করা একটা সমস্যার ব্যাপার হতে পারে, জানি না তা সম্ভব কিনা। তবে এতটুকু জানি ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব।
৩/ আমরা যেন কোনভাবেই মহান ইসলামের সাথে "জামাত শিবির"কে না মিশিয়ে ফেলি।
অবশেষে বলতে চাই, আসুন আজ সবাই এদেশ থেকে রাজাকার সহ সকল কালো দূর করার প্রত্যয় নিয়ে আলোকিত হই একসাথে.........
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০৪