স্বপ্নগুলো কিভাবে ভেঙ্গে যেতে পারে ! জীবন কিভাবে হঠাৎ থমকে যেতে পারে ! ক্লাস শুরু হয়েছে ২২ তারিখে ; যে বুয়েটে একজনের সারা জীবনের আরাধ্য – সেখানে মাত্র ৫টা দিন ক্লাস করেই এই ভাবে বিদায় ! সবটুকু বাধা পাড়ি দিয়ে যখন একটা ছেলের জীবন সবচেয়ে নিশ্চিত , তখন এইভাবে চলে যাওয়াটা কিভাবে মেনে নিতে পারি !
ঐ একই পথে আজকে আড়াই বছর ধরে যাওয়া আসা করছি । ভেবে পাচ্ছি না , ঠিক কতটুকু অসাবধানতা প্রয়োজন সেখানে এইধরনের একটা দুর্ঘটনা ঘটাবার জন্যে ! নিরাপদ সড়কের জন্যে এত প্রচারণা – এত বিজ্ঞাপন ; আসলে কিছুই কি কোন কাজে আসছে ? কোন আইন কি আটকে রাখতে পারে এক মুহূর্তের অসাবধানতাকে ?
আসলে যে কারো জীবনে যেকোন সময়েই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে । প্রশ্ন হল, আমি নিজে কতটুকু সচেতন । এই যে 1-1 এর ছেলেটা চলে গেল এভাবে ; আমরা হয়ত কয়দিন কালো ব্যাজ পরে আসব ; হয়ত অনেক লেখা লেখি হবে ; বুয়েটের প্রায় চার হাজার পরিবার কয়দিন মন খারাপ করে থাকবে – হয়ত ধরা পড়বে ড্রাইভার – শাস্তি হবে – কিন্তু সম্রাটরা , হামিমরা আর ফিরে আসবে না ।
পথে আমাদের চলতেই হবে । দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্যে উপায় একটাই । নিজেকে সচেতন হতে হবে । এক মুহূর্তের অসাবধানতা এক এক টি পরিবার কে ধ্বংস করে দিচ্ছে ; আর কত পরিবারকে স্বজন হারাতে হবে কে জানে !
দেড় বছর আগের কথা । আসাদ গেটে বাস থেকে রাস্তায় পা দিয়েই বুঝলাম ; বিশাল ভুল হয়ে গেছে ; পেছন থেকে ধেয়ে আসছে আরেকটা বাস । আমি যে আমার বাসে আবার উঠে পড়ব , সে উপায় নেই- বাস আমাকে নামিয়ে দিয়ে আবার চলতে শুরু করেছে । ছুটে রাস্তাটুকু পার হলাম আর তখুনি আমার পেছন দিয়ে বাসটা চলে গেল ।
বাস গুলো আপনাকে তোলার জন্যে ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে পারে ; কিন্তু আপনাকে নামানোর জন্যে ১০ সেকেন্ড সময় দিতে রাজি না । রাস্তার মাঝে কখনোই নামবেন না । সবাই আমার মত ভাগ্যবান নাও হতে পারে ।
মানব বন্ধন হবে শনিবার । জানি এভাবে আমরা ফিরে পাব না সম্রাটকে । তবু , চাই , দোষীদের শাস্তি হোক । তবু যদি একটু টনক নড়ে সেসব চালকদের !
এই লেখাটা যখন লিখছি , তখন জানতে পারলাম , আমাদের ডিপার্টমেন্টের বর্তমান ফার্স্ট , মারুফের ভাই মারা গেছে টাঙ্গাইলে বাস দুর্ঘটনায় ।
সব কেমন যেন এলোমেলো ঠেকছে ! এভাবে কাছের মানুষেরা চলে যাবে কেন ! এত নিষ্টুর কেন পৃথিবীটা ! আমাদের কি কিছুই করার থাকবে না !
--------------------------------------------------------------------
রাস্তায় চলার জন্যে খুব সাধারন কিছু নিয়ম মেনে চললেই হয় । এখানে ‘ব্যাসিক’ কয়টার কথা বলি ।
১) বাস থেকে নামার জন্যে অবশ্যই বাম পা দিয়ে নামতে হবে ।
২) নামার আগে দেখে নিন পেছনে কোন গাড়ি আছে নাকি ।
৩) কখনোই মাথা বা হাত জানালার বাহিরে রাখবেন না ।
আমার এই অভিজ্ঞতা অবশ্য ট্রেনের । তখন নতুন ট্রেন চালু হয়েছে বংগবন্ধু [বা যমুনা বহুমুখী] সেতুর উপর দিয়ে । আমি জানালা দিয়ে মাথা বের করতে যাব ; তখন ই ট্রেনের স্পীকারে শোনা গেল , ‘কেউ মাথা বা হাত জানালা দিয়ে বাহির করবেন না ’ । কথাটা কেন জানি মেনে নিলাম । সাথে সাথেই দেখি ব্রীজের পিলার গুলো জানালার ভয়াবহ রকমের কাছে ; অন্তত অতি কৌতুহলী কারো মাথা গুড়িয়ে দেবার মত কাছে !
৪) রাস্তা পার হবার সময় ব্যস্ত হয়ে উঠবেন না । রাস্তার মাঝে নেমে দাঁড়িয়ে যাবেন না । সম্ভব হলে ওভারব্রীজ ব্যবহার করুন ।
এই শেষ্ জিনিসটার প্রতি আমাদের এত অনীহা !
ঘটনাটা জানার সাথে সাথে ফোন করলাম সাকিবকে । ‘তুই যেভাবে রাস্তা পার হস !’ আসলে আমরা চিন্তাও করি না ; সামান্য একটা মিনিট বাঁচাতে গিয়ে কত বড় ঝুঁকি নিই ।
জানি না আর কত পরিবার কে কাঁদতে হবে । তবে আমাদের একটু সচেতনতা এই দুর্ঘটনা থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে ; জীবনকে সচল রাখতে পারে ।
আসুন , নিজে সচেতন হই , অন্যদের সচেতন করি ।
--------------------------------------------------------------------
সম্রাটের ফেসবুক প্রোফাইলে লেখা ঃ i wnt to njoy life with fun
আর ফেভারিট কোটেশান ঃ life is short so enjoy it ...
Bro , hope you enjoyed your short life ........
প্রথম আলো নিউজ
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১০ রাত ১:১২