বন্ধুত্ব
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বন্ধুত্বের সংজ্ঞা দিতে কিংবা বন্ধুত্ব নিয়ে কোন দার্শনিক তত্ত্ব দেবার জন্যে নয় , এই লেখাটা কেবল আমার বন্ধুদের নিয়ে । আমার মত বৈশিষ্টহীন একজন মানুষ এত অ-সা-ধা-র-ন সব বন্ধুত্বের ছোঁয়া পেয়েছে , এটা আসলেই বিষ্ময়ের ব্যাপার । মাঝে মাঝে দেখি , আমার সাধারন কোন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব নেই ; সবাই অসাধারন ; অনেক বেশি অসাধারন ।
কারেন্ট নেই , বারান্দায় বসে আছি একা । কি প্রচন্ড বাতাস ! চারিদিকে নীরবতা – নির্জনতা যেন আমাকে চেপে ধরল । চোখ বুজতেই আমি যেন পিছিয়ে পড়ছি , অতীত ফিরে আসছে – অথবা আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পেছনে ।
নদীর পাড়ে বালিতে পা ডুবিয়ে বসে আছি । ঢেউগুলো যখন আসছে তখন পা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে । কি ঠান্ডা – কি অসামান্য ছোঁয়া । একা নই , আমার বন্ধুরাও আছে সাথে … কিন্তু সবাই নিশ্চুপ – নদীর বাতাস যখন আমাদের হয়ে এত কথা বলে যাচ্ছে , ফিংগে পাখির ঝাঁক তাতে সায় দিচ্ছে - তখন আর আমাদের কথা বলার কি দরকার !
বন্ধু ভাগ্য বলে যদি কিছু থাকে তবে আমার মত ভাগ্যবান হতে পারা অনেক কঠিন । মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি দেখে তাই আর অবাক হই না ।
ঢাকাতে আমি নতুন – একদম নতুন । কিচ্ছু চিনে না ; একটা ছেলে SSC দিয়ে ঢাকায় পা দিয়েছে । তাও আবার মিরপুরের মত ঢাকার একপ্রান্তে – সেখান থেকে তাকে যেতে হয় মতিঝিল , কলেজে ক্লাশ করতে ।
একটা স্টাফ বাসে প্রথম দিন-ই পরিচয় হল এমন দুই জনের সাথে , মুহুর্তেই মিরপুর যেন আমার বাড়ি হয়ে গেল । আজকে আমি বুয়েটে পড়ছি , নির্দ্বিধায় বলা যায় , নাকিব , রাসেল – ওদের অনেক বড় একটা অবদান আছে । কত ঝঞ্ঝা-ই না পাড়ি দিলাম আমরা একসাথে ! এই তো সেদিন আমরা একসাথে পল্টন থেকে ছুটছি – মিছিলে বাস আটকে গেছে -কলেজে পৌঁছাতে হবে , কুইজ আছে ; অথবা সেদিন HSC পরীক্ষা দিতে বেরিয়ে অসহায়ের মত খুজে বেড়াচ্ছি ট্যাক্সি … কিংবা তার আগে প্রচন্ড বৃষ্টিতে আটকা পরে তিনজন মুক্তির পথ খুজছি । কিংবা শপিং করতে গিয়ে মার্কেট থেকে মার্কেট যাচ্ছি , যার জিনিস তার বাদে বাকিদের সব পছন্দ হয়েই যাচ্ছে …
রাসেল এখন টেক্সটাইলে আর নাকিব রুয়েটে ETE পড়ছে । জানি না আগের মত আমাদের পথের রেখা আবার আগের মত কোথাও মিলবে কি না - ভাল থেক , বন্ধুরা !
নটরডেম কলেজে random সিট প্লানিং হয় । যার যেখানে সিট , সেখানেই বসতে হবে , চুন থকে পান খসলেই … থাক সে আর না-ই বা বললাম । তবে কলেজের স্মৃতির কথা বলতে বসিনি , রাত পার হয়ে যাবে – হাজারো রাত – বরং বন্ধুগুলোর কথাই বলি ।
বন্ধুত্ব তৈরি হয় ধীরে । নতুবা প্রচন্ড চাপে কয়লা যেমন হীরাতে পরিণত হয় তেমনি চাপে । কলেজ জীবনকে এক মুহুর্তের জন্যে চাপ বলে মনে হয় নি – সে তো কেবল এই নিখাদ বন্ধুত্বের জন্যেই ।
একসাথে মিজান স্যারের ক্লাশ ফাকি দিব বলে যখন বাইরে বের হলাম , সামনে মূর্তিমান আতঙ্ক মিজান স্যার কে দেখে , অথবা একটু পরেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে , কেউ গ্রাফ আকছে , কেউ লিখছে , কেউ ক্যাল্কুলেটর টিপেই যাচ্ছে – কুইজের আগে ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের পাশের রুমে কি তীব্র আর ভয়ানক জ্ঞান(?) চর্চা ; আবার হরতাল কি ধর্মঘটের জন্যে কি শুধুই আরেকটু সময় একসাথে থাকার জন্যে সেই মতিঝিল থেকে হেটে চারটি কখনো পাচটা ছেলে চলে আসছে সাইন্স ল্যাব পর্যন্ত …
আমার কলেজের বন্ধুরা , যারা একসাথে বসতাম , নিয়ম করে পাল্লা দিয়ে কড়া নিয়ম গুলো কে ফাঁকি যাবার সফল পরিকল্পনা করতাম ; কিভাবে কিভাবে সবাই যেন পৌছেছি নিজের স্বপ্নে , অন্তত তখন যাকে স্বপ্ন বলতাম – সাফি , আমি , তন্ময় , নিয়ন –আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি , আজন্ম স্বপ্ন ডাক্তার হব – জিহান, দীপ্তি [আসলে দীপ্ত] , হাসিব , ফয়সাল – সবগুলো মেডিকাল কলেজের ছাত্র …
হঠাৎ বন্ধুত্বগুলো এত অদ্ভুত সুন্দর হয় ! Admission কোচিং করতে গিয়ে প্রথম সপ্তাহেই যার সাথে পরিচয় হল ; আমরা একসাথে আছি এখনো । সনিকে ছাড়া আমি এখন বলতে গেলে অচল । কিংবা কলেজের random সিটের পরও কিভাবে এত চমৎকারভাবে আমাদের মিল হল ! অথবা আমি যদি সেদিন স্টাফ বাসে না উঠতাম , হয়ত আজকে আমি এখানে থাকতাম না …
বুয়েটে পা দিয়ে একটু থমকে গিয়েছিলাম – তবে তা ক্ষণিকের জন্যেই । এখানে ‘চাপ’ শব্দটার আমূল পরিবর্তন হয়েছে , সত্য । কিন্তু অসাধারন সব মানুষগুলোর সান্নিধ্য নিমেষেই সব বদলে দিল । বন্ধুত্বের কত রঙ সেটা আর একবার উপলদ্ধ্বি করলাম এখানে এসে । আমার নিয়তি প্রতারণা করেনি আমার সাথে , আবার আমার পাশের মানূষগুলো বরাবরের মতই অসামান্য । সবার সাথে পরিচয় হবার আগে একটা মনে একটা দ্বিধা কাজ করছিল – এরা বুয়েটে পড়ে , সবগুলো মনে হয় ‘আতেল’ ! আবিষ্কার করলাম , অদ্ভুত ভাবে আমার আশেপাশের মানুষগুলো আসলে সম্পূর্ন বিপরীত … ক্লাসের সবাই মিলে শেষ দিনে জমা দিই assignment , ল্যাবের আগে সোহরাওয়ার্দী হলের ক্যান্টিনে বসে ১৪-১৫ জন মিলে রিপোর্ট লিখি … কলেজের আমি আসলে বদলাইনি এতটুকু ; বদলেছে শুধু আমার আশে পাশের মানুষগুলোর মুখ - বদলেছে সময় – জীবনের লক্ষ্য …
আমার স্কুলের বন্ধুদের কথা সবার আগেই বলা উচিত ছিল … কিন্তু আমি যে কখনোই সেই সময়ের স্মৃতি মনে করতে চাই না । ঘন্টা পেরিয়ে যায় – আমার ছেলেবেলার বন্ধুগুলোর কথা ভেবে ভেবে ; নস্টালজিক আমি – হারিয়ে যাই আমার ফ্যান্টাসীতে । সেসময়ের তুলনা কখনি হয় না – হওয়া অসম্ভব ।সব দুয়ার ছিল খোলা , সবগুলো স্বপ্ন তখন সম্ভাবনা । আর ছিল সেই চব্বিশ ক্যারেটের চাইতে খাঁটি বন্ধুত্ব ।
আমার সৌভাগ্য , আমার সবার প্রথম দিকের বন্ধু , আমার ক্লাস টু’য়ের পুরানো সাথী – এখনো আমরা এক সাথে , একই ডিপার্টমেন্টে পড়ছি । চৌদ্দ বছর হয়ে গেল আমরা একসাথে ; ওর দিকে তাকানোর প্রয়োজন-ও হয় না ; আমি বুঝে নিতে পারি ওকে ।
বন্ধুত্বের সীমা ছাড়িয়ে উপরে আর কিছু আছে কিনা আমার জানা নেই । নিশ্চয় নেই ; থাকলে এই চৌদ্দ বছরে আমি আর তন্ময় অবশ্যই তা আবিষ্কার করতাম ।
শেষ কথাঃ
কষ্ট একটাই । আমি যে কেবল নিতেই পারি । সারাটি জীবন ধরে কেবল নিয়েই যাচ্ছি – নিয়েই যাচ্ছি ! এই মানুষগুলোর অকারন ভালোবাসার মর্যাদা দেবার ক্ষমতাটুকুও যে আমার নেই !
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।
কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।
ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।
কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।