২০১৬ সালের জুন মাস,
মেক্সিকোর ফেডারাল ডিস্ট্রিক্ট এর এক মসজিদে তুরস্কের এক দল মুসলিম এসেছে ধর্ম প্রচার করতে। যদিও তাদের ১৫ দিনের সফরে তারা কোন খ্রিস্টান বা ইন্ডিয়ানের সাথে দেখাও করে নাই, তবে ২ টা মসজিদ আর 'কাসা দেস আজুলেসে' এ স্থানীয় সুন্নি নেইবরহুডের সামনে ৫-৬ টা বক্তৃতা, ডকুমেন্টারি দেখিয়ে নিজেদের ইসলাম প্রচারক দাবি করলো। বলে রাখা ভালো এমনিতেই মেক্সিকোতে মুসলিম খুব বেশি নাই। ফেডারাল ডিস্ট্রিক্টে হয়তো দেড় দুই হাজার মুসলমান আছে। তুরস্কের ঐ টিম তাদের কিছু ডকুমেন্টারি আর লেকচার দিল। ১৫ দিন পর তারা চলে গেলে ১ মাসের মধ্যেই স্থানীয় মুসলমানের সংখ্যা নেমে আসলো ১২০০ তে। আপাতত মেক্সিকোর প্রসঙ্গ থাকুক, সময় মত ফিরে আসবো এই টপিকে।
বাংলাদেশে ভার্চুয়াল জগতে বিভ্রান্তিকর কিছু পোস্ট দিয়ে, চিল্লাফাল্লা ওয়াজ মাহফিল করে আর চায়ের দোকানে ধর্মের আসর বসিয়ে কিছু পড়ালেখা না জানা মুসলিম নিজের অজান্তেই ইসলাম কে ভুল ভাবে উপস্থাপন করছে। এর মাধ্যমে নাস্তিক আর ইসলামের শত্রুদের ছাড়া আর কারো উপকার হচ্ছে না। আল্লাহ আর নবী (স.) যদি কিছু বলেন তার মধ্যে নিঃসন্দেহে কোন ভুল নেই কিন্ত আমরা যদি নিজেরাই আয়াত লিখতে বসে যাই তাহলে তাতে ভুল থাকবেই। ধরে নিন আমি আয়াত লিখলাম তারপর সেটা প্রচার করে দিলাম, একজন শিক্ষিত অমুসলিম যখন আমার বাণীকে কুরানের বাণী মনে করে পড়বে আর ভুলটা ধরতে পারবে সে ধরেই নিবে পুরো ইসলাম টাই একটা ভন্ডামি। ইদানীং ভার্চুয়াল জগতে যে হারে নকল আয়াতের প্রকোপ দেখছি আর মফস্বল এলাকার ওয়াজ মাহফিলের গাঁজাখুরি গপ্প শুনছি মনে হয় একেকজন ওহী লেখক হয়ে গেছে। কুরানে বা হাদীসে কোথাও লেখা আছে যে কুরান পুড়ে না? তাও ভন্ড মুসলমান দের দাবি কুরান নাকি পুড়ে না।
মূল ব্যাপার হচ্ছে কোন কিছু পুড়তে অক্সিজেন প্রয়োজন। আর মোটা কোন বই বাইরের দিকে হালকা পুড়লে যে ছাই জমা হয় তার ফলে ভেতরে অক্সিজেন পৌছাতে পারে না। অক্সিজেনের অভাবে কুরান, বাইবেল, মহাভারত সহ কোন মোটা বই ই পুড়ে না। এমনকি আমার গ্রামার বই ও না। গীতা ঠিকই পুড়ে যায় কারণ ওটা সাধারণত চিকন হয়।
মেক্সিকোতে তুরস্কের দল এসে সবাইকে ডকুমেন্টারি দেখিয়েছে মিশরের অমুক মসজিদে আগুন লাগার পরেও কুরান পুড়ে নাই। এই ভিডিও দেখে মুসলিম রা ধরেই নিয়েছে এটা একটা মুজিযা (অলৌকিকতা)। অতি উৎসাহী কিছু মুসলিম খ্রিষ্টান দের টিটকারি দিল যে আমাদের কেতাবটা fire proof আর তোদের টা নকল। এ নিয়ে লেগে গেল ফেসবুকে ধর্মযুদ্ধ। ব্যাপারটা নিউজেও এসেছিল (El Cazon এর জুন মাসের শুরুর দিকের নিউজ গুলো চেক করতে পারেন). এসবের পর কিছু খ্রিস্টান তরুণ মিলে পেট্রল ঢেলে কুরান পুড়িয়ে দিল। তার ভিডিও পোস্ট করলো ইউটিউব - ফেসবুকে (এখন সেগুলো ব্যন করা হয়েছে)। ব্যাপারটা খুব জলদি ছড়িয়ে পড়লো, কৌতূহলী মুসলিম নিজেদের সঠিক প্রমাণ করতে নিজেরাই কুরান পুড়িয়ে দেখলো (তারা ভেবেছিল পুড়বে না, তো পুড়াতে চেষ্টা করলে দোষ কি!)। যখন তাদের সামনেই পেট্রলে ভেজা মহান আল্লাহর বাণী লিখিত কাগজ পুড়ে গেল তারা দেরি না করে ক্যাথেলিজম গ্রহণ করলো। খুবই দুঃজনক। সবারই এতে দোষ আছে তবে এখানে মূল দোষ টা কার? মেক্সিকান মুসলিমের? মেক্সিকান খ্রিস্টানের? না ঐ মূর্খ তুরস্কের দলের?
আমাদের দেশ কি সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে না?
বাংলাদেশে আশংকাজনক হারে নাস্তিক বাড়ছে। এখন কি তাদের কুপিয়ে হত্যা করে সংখ্যা কমাতে হবে?
উত্তর হল "না"। আমরা তাদের অস্ত্র দিয়ে আঘাত করবো, চাপাতি দিয়ে না কুরান নামক জ্ঞানের অস্ত্র দিয়ে। এই অস্ত্র আমাদের বিজ্ঞান, আমাদের পৌরনীতি, আমাদের সমাজবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা...সম্পূর্ণ এবং পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান। এই জ্ঞান চিপায় চাপায় থাকা পীর-ফকিরেরা নিজেরাও বুঝে না আর কাওকে বোঝাতেও পারে না। যেহেতু তারা বোঝাতে না পেরে ব্যর্থ, নাস্তিক তো বাড়বেই।
বাংলাদেশে মুসলিম দুইপ্রকার। প্রথম দল, অশিক্ষিত, বাংলায় কুরান পড়ে না। ইসলাম তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। দ্বিতীয়দল, অতি উচ্চ শিক্ষিত, তারা কুরান পড়ে (শুধু আরবী না)। ইসলাম তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি না, বরং তারা নিজেরা পড়াশুনা করে জেনেছে ইসলাম এর বিজ্ঞান। বাংলাদেশের ৯০% মানুষ প্রথম শ্রেণিভুক্ত। ভাব নেয় খুব বড় মুসলিম কিন্তু ইসলাম নিয়ে কেউ কটুক্তি করলেই গালি দিয়ে নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে দেয়। নবী (স.) কে আর কম কটুক্তি করে নি মক্কাবাসী, তিনি কি গালি দিয়েছিলেন? দেননি কারণ উনি তো আর অল্পশিক্ষিত লোক না। আমাদের দেশে অল্পশিক্ষিত মুসলিম ই সংখ্যাগুরু। এরা আস্তে আস্তে শিক্ষিত হচ্ছে, দেশের সাক্ষরতার হার বাড়ছে। কিন্তু একলাফে তারা অতি উচ্চশিক্ষিত হবে না, যারা কুরান অনুধাবন করে। এই শিক্ষার পথমধ্যে অল্পশিক্ষিত হয়ে তারা যখন বাংলাদেশীয় গতানুগতিক ইসলাম দেখে তারা ধরেই নেয় ইসলাম মানে হল 'আমিন না লিখে যাবেন না', ইসলাম মানে কয়েকটা পীরের পা চাটা আর দারিদ্র মোচন না করে আলিশান মসজিদ বানানো। তারা দেখবে 'মাজহাব' নামক হাতুড়ি মুসলিম উম্মাহ কে খন্ড বিখন্ড করে দিয়েছে। এক পর্যায়ে পুরোপুরি শিক্ষিত হওয়ার আগেই তারা ঈমান হারাবে, প্রকৃত ইসলাম না জেনেই। নাস্তিক এ কারণেই বাড়ছে।
এই ক্রান্তিকালে কুরান শিক্ষার চেয়ে কুরানের অর্থ শেখা অনেক বেশি জরুরি। আসুন রুখে দাড়াই "আমিন না লিখে যাবেন না" সহ সকল বিভ্রান্তিকর পোস্ট, ওয়াজ আর প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে। বিজ্ঞান না বরং ইসলামের ব্যানারে অশিক্ষার অপপ্রচার ই ইসলাম ধ্বংসে দায়ী। আসুন বন্ধ করে দেই অপপ্রচার। ইসলাম অবশ্যই শান্তির আর পবিত্রতার ধর্ম।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:১৭