"....এত ব্যস্ততার মধ্যে গত মডেল টেস্টের খাতা দেখতে পারছি না। প্রাইভেট কোচিং এ এত সময় দিতে হচ্ছে, কিভাবে যে খাতা দেখি!
আবার ২৫ তারিখের মধ্যে খাতা না দেখলে প্রিন্সিপাল স্যার রাগ হবেন। সেইজন্য আপাতত আপনার মেয়েকে পড়াতে পারছি না, ১ তারিখ থেকে দেখব নে" কথাগুলো পুষ্পীর মা কে বলেই লিটন স্যার কোচিং এ ঢুকলেন। আজ আবার বাচ্চাগুলোর ক্যামিস্ট্রি পরীক্ষা, প্রশ্ন ছাপাতে দিয়েছেন পাশের ফটোকপি দোকানে। ইদানীং প্রশ্ন ছাপাতে অনেক খরচ হচ্ছে। লিটন সাহেব একটা প্রিন্টার কিনে ফেলার কথা ভাবছেন। টুটুল স্যারের কোচিং এ নিজেদের প্রিন্টার আছে, সেরকম লিটন স্যারের একটা থাকলে মন্দ হয় না।
কোচিং এ পড়িয়ে, ২ টা প্রাইভেট পড়ানো শেষ করে লিটন সাহেব বাসায় আসলেন। খেয়ে দেরি না করে টিভি অন করে গত মডেল টেস্টের খাতা দেখতে বসলেন। টিভির চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে চোখে পড়লো ৭ টা সৃজনশীল এর দাবিতে আন্দোলন না ফান্দোলন কি যেন হচ্ছে তা নিয়ে নিউজ দেখাচ্ছে। সৃজনশীল ৭ টা হোক আর ১৭ টা লিটন সাহেবের এত মাথাব্যথা নাই। তবে ৭ টা সৃজনশীল হলে প্রতি খাতায় সময় একটু করে বেশি লাগবে, তা নিয়ে কিঞ্চিৎ দুশ্চিন্তিত। খাতা দেখতে দেখতে একটু পিপাসা পেয়ে গেলো।
"জামিলা, চা দিবা একটু?"
"২ চুলায় রান্না, পরে দিব নে"
চা না পেয়ে খাতা দেখতে দেখতে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল লিটন স্যারের। আপন মনেই বললেন,"ঘোড়ার ডিম লিখেছে, যত্তসব। প্রথম প্রশ্ন ১ লাইন করে লিখতে বলেছিলাম। ২ নম্বরের টা লিখবে আধা পৃষ্ঠা, গ নম্বর টা এক দেড় পৃষ্ঠা। আর লাস্টের টা কম করে ২ পৃষ্ঠা লিখতে বলেছিলাম। তা না করে হাদা গুলো কাটা কাটা উত্তর দিয়েছে। প্রশ্নে যেটা চেয়েছে ঠিক সেই উত্তর দিয়েছে, হেহ কি আমার যুক্তিবাদী রে! আরেক ছাগলের খাতা দেখলে মনে হয় কাগজের দাম হাজার টাকা দিস্তা। মূল কথা ছাড়া কিছুই লিখে নাই। বার বার করে বলে দিয়েছিলাম যদি লেখার মত কিছু না পেলে এক কথাই বার বার ঘুরিয়ে পেচিয়ে লিখবি, প্যাচাল না করলে কি খাতার সৌন্দর্য বাড়ে! ধুর খাতা দেখে মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেল।
এইভাবে উত্তর দিলে একটা বড় সমস্যা হচ্ছে প্রতিটা উত্তর পড়ে পড়ে নম্বর দিতে হচ্ছে। আর ভাল ভাবে লিখলে ২০ মিনিটেই ৮-১০ টা খাতা দেখে ফেলতে পারতাম। ১, ১, ২, ২ করে সব খাতায় ঢালাও ভাবে নম্বর দেওয়া যেত। আর পদ্যাংশের প্রশ্ন গুলোর অবস্থা তো আরো করুণ। বার বার বলেছি, ক্লাসে যা পড়িয়েছি সেটাই লিখবি, নিজে না পারলে গাইড বই থেকে শিখে নিবি। সেটা না করে নিজেদের মত করে উত্তর লিখেছে। একই কবিতার নাকি আবার বহুরূপ অর্থ হতে পারে, সবই দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। হেহ! কি আমার বুদ্ধিজীবী রে, আমার চেয়ে বেশি বুঝে ফেলেছে কবিতা।
ধুর ছাই, যাহ সব গুলো কে ০০ দিয়ে দিলাম। এবার বুঝুক লিটনের কথা না শুনলে কি হয়।" আপন মনেই বির বির করতে করতে খাতা দেখে যেতে লাগলেন লিটন স্যার।
দূরে কোথাও কোন আসিফ তখন বকা খাচ্ছে, তার পরীক্ষার নম্বরের জন্য, তার মা খাতা খুলে দেখেন নি, দেখেছেন মলাটের মলিন নম্বর টা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১০