পরশু ছিল ঈদ-উল-আযহা। ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় কারণে আমরা মুসলমান রা পশু কুরবানি দেই। ভাল করে বললে পশু হত্যা করি, সেক্ষেত্রে যদি কারো আবেগ উথলে পড়ে পশুর জন্য, আমি বলব, “যখন আপনি হিংস্র ভাবে শাক কাটেন বা ধান কাটেন, যখন মেহেদী গাছের শরীর থেকে টেনে টেনে পাতা ছিড়েন, আমার কান্না পায়। কত হিংস্র ভাবে আপনারা ডিম খান, আর মাছের ডিম হলে তো কথাই নাই লক্ষ লক্ষ ভ্রুণ কে হত্যা করেন!”
তাও যদি নিতান্ত মানসিক কারণে আপনার পশু হত্যা, খারাপ লেগেই থাকে (আমিও মানুষ, পশু হত্যার সময় আমারো খারাপ লাগে, এটা মানসিক ব্যাপার), তাহলে সেটা মনের মধ্যে রাখুন, আমাদের বাধা দিবেন না, না খেয়ে তো আর মরতে পারব না।
কাল দেখলাম ঢাকার রাস্তা রক্তে লাল হয়ে গেছে, প্রচুর বৃষ্টি আর পশুর রক্তে নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সেটাকে রক্তের বন্যা বলা যেতেই পারে। এমন দৃশ্য হয়তো সারা জীবনেও কেউ দেখেনি, স্বাভাবিক ভাবেই এই আজব দৃশ্য নিয়ে মাতামাতি হয় ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে। ভিনদেশী রা তো রীতিমত চমকে গেছেন এই দৃশ্য দেখে। আগেই বলে রাখা দরকার, পশ্চিমা রা রক্ত নিয়ে খুব সেনসেটিভ। আন্তর্জাতিক জীবনে অংশীদার, যুদ্ধ দেখে অভ্যস্ত বা নেতৃত্ব শ্রেণির নাগরিক দের বিপরীতে পশ্চিমা দেশগুলোর সাধারণ নাগরিক রা একটু সাদাদিধে টাইপ, প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন কবি বা লেখক না সেখানে। এমনকি তাদের ফেসবুক প্রোফাইল গুলোও সব একঘেয়ে, একইরকম। নিজেদের খাওয়ার জন্য ভেড়া, শূকর বা গরু এমনকি মুরগিও তারা নিজেরা কাটে না, প্যাকেটজাত মাংস কিনে খায়। স্বাভাবিক ভাবেই তারা রক্তপাত দেখে অনভ্যস্ত, তাদের কাছে এই রক্তের নদীর ছবি পৈশাচিক লাগবেই। এটাই মনস্তত্য।
টুইটার আর গুগল প্লাসে এই রক্তের বন্যা ভালই সাড়া ফেলেছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ডেইলি মেইল, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের মত সংবাদ মাধ্যমও পশ্চিমাদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।
নিউজ ফিডে ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়লো, এক ব্যক্তি এক আন্তর্জাতিক নিউজ লিংক শেয়ার করেছেন। সেটার ভিউয়ের ক্যাপসন অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “পশু হত্যার দরুণ ঢাকার রাস্তায় রক্তের বন্যা। শান্তির ধর্ম ইসলামের অণুসারীরা আনন্দের সাথে দিন টি উদযাপন করছেন”
সেই পোস্টের কমেন্টে গালির বন্যা বইতে দেখলাম, কেন এই নিউজ প্রচার করা হল সেই নিয়ে একেকজন ক্রোধে ফেটে যাচ্ছেন। গুগল প্লাসেও দেখলাম, পাকিস্তানি রা এটার তীব্র প্রতিবাদ করছে, ভারতের মুসলিম রাও কমেন্টে রাগ প্রকাশ করছেন।
গালি দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত তা বলার প্রয়োজন মনে করছি না, প্রসঙ্গ হল এই সংবাদ আর মানুষের প্রতিক্রিয়া। “পশু হত্যার দরুণ ঢাকার রাস্তায় রক্তের বন্যা।“ – কথাটা তো ভুল না, আমি নিজেই সাক্ষী। “শান্তির ধর্ম ইসলামের অণুসারীরা আনন্দের সাথে দিন টি উদযাপন করছেন” – এটাও ভুল বলে নি। তাহলে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা আমাদের মানসিকতায়। আমার এক নাস্তিক বন্ধু তো বলেই ফেলেছেন, “চুরি করার পর চোর কে চোর বলে গালি দিলে খেপে যায়, আর চুরি না করলে শান্ত ও ভদ্র ভাবে সে অস্বীকার করে, মুসলিম রা কুরবানি দিয়ে রক্তের বন্যা করতে পারে ঠিকই কিন্তু সেটা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেই দোষ হয়ে যায়, এর মানে ওরা মনে মনে অতৃপ্ত , মনে মনে ঠিকই বলে কাজটা আসলেই পৈশাচিক। নাহলে শুধু সত্য ঘটনা প্রকাশ করার কারণে তারা রেগে যাবে কেন?”
আমি এই ঘটনায় মুসলিম দের আক্ষেপ করার কোন কারণ দেখছি না, আর আমি পশু কুরবানি দিয়ে লজ্জিত না, বুক ফুলিয়ে আমি বলতে পারি, আমি মুসলিম। হাজার বার আমি বলতে পারি, আমি মুসলিম। কুরবানি করেছি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, তাতে রাস্তা লাল হতেই পারে তাতে আমি লজ্জিত না, আর ইসলাম শান্তির ধর্ম তাতে কোন সন্দেহ নাই। আল্লাহ প্রদত্ত বিধানই চূড়ান্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৩৮