গোলাম আযমের মনে আজ অনেক আনন্দ। প্রতিদিন সকালে তিনি পঞ্চাশ কদম হাটেন। আজ
আনন্দের অতিশায্যে একশ কদম হেটে ফেলেছেন। আনন্দের কারণ হল, আজ তার পেয়ারে পাকিস্তানের জন্মদিন। এই আনন্দে তার নাচতে ইচ্ছ করছে। একদিকে পাক সার জমিন সাদ বাদ বাজবে , অপরদিকে তিনি উদ্দাম নৃত্য করবেন । আহ!! কিন্তু এইসব এখন আর নেই। কিছুদিন ধরে 'জুম্মে কি রাত, চুম্মে কি বাত' এই গানটাই পাশে কোথাও বাজছে।
কথাগুলোতে একটু
সমস্যা থাকলেও ,গানটি তার
ভালোই লাগে।
তিনি গুণগুণ
করে গানটি গাইলেন।
গোলাম আযম ভাবছেন আজ ইমপ্রুভ ডায়েটের এন্তেজাম করতে হবে। প্রতিবেলাই অবশ্য ইমপ্রুভ
ডায়েট দেয়া হয় , আজ হবে ডাবল ইমপ্রুভ। আজ তার কায়েদে আজম জিন্নাহর কথা খুব মনে পড়ছে। পাকিস্তানের জন্য অবশ্য তার মাঝে মাঝে দুঃখ হয়। ৬৬ টি বছর পরও দেশটা জন্মদিনের
পোশাকেই রয়ে গেছে।
'স্যার, আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছেন।' পুলিশটি জানিয়ে চলে গেল। এই সময় আবার কে এল? তার জন্য অবশ্য বিশেষ ব্যবস্থার কারণে যে কোন সময় তার সাথে লোকজন দেখা করতে পারে।
-তোমাকে তো চিনতে পারলাম না।
-আমি হিমু।
-আমার কাছে কি জন্য
এসেছো?
হিমু তার সামনে একটি সাদাকালো ফটো ধরলো।
-এই ছবির মেয়েটিকে চিনতে পেরেছেন? অনেক দিন আগে তোলা। আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগের।
-না।
-এই মেয়েটিকে আপনি ১৯৭১ সালে তিন মাস আটকে রেখেছিলেন, তার বাবা , মা আর বড় ভাইকে গুলি করে মেরে ছিলেন। এখন মনে পড়ছে?
-না।
-মনে না পড়লেও সমস্যা নেই। এই মেয়েটির বয়স
এখন একষট্টি বছর। উনি আমাকে একটি কাজ দিয়ে পাঠিয়েছেন।
-কি কাজ?
হিমু উঠে দাড়ালো, তারপর গোলাম আযমের
মুখে একদলা থুতু ছুড়ে মারলো। হিমু চীৎকার করে বললো, 'তুই রাজাকার'।
গোলাম আযমের হতভম্ব অবস্থা এখনো কাটেনি। তার চোখের সামনে শুধু
একটি মেয়ের মুখ ভাসছে। মেয়েটির নাম সামিনা, বয়স আঠারো।