সায়মা হন্তদন্ত হয়ে ক্যান্টিনে প্রবেশ করলো। আমার পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বললো, 'ইমতিয়াজ একটা বিষয়ে একটু পরামর্শ দে।' পরামর্শের কথা শুনে অট্টহাসিটাকে দমন করে মুচকি হাসি দিলাম।
আমার ধারণা আমার মাথার ভেতরটা বাতাস দ্বারা পরিপূর্ণ। মাঝে মাঝে মনে হয় বায়ুপূর্ণ মাথাটা এই বুঝি শরীরের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে উপরের দিকে যাত্রা করলো। ভাগ্যিস অভিকর্ষ নামে একটা ব্যাপার ছিলো। তারপরও আমি চশমার কাচ পরিষ্কার করতে করতে বললাম,
'বিষয়টা কি খুলে বল , নো মাথা,লেজ শুধু সারমর্মটা বল। আর ফ্রীতে পরামর্শ দেয়া যাবে না, চা আর শিঙারা নিয়ে আয়।'
-আবিরের কথা বলেছিলাম তোকে, মনে আছে?
-বরিশাল মেডিকেলের আবির?
-হ্যা। ওর সাথে আমার রিলেশন চলছে।
-এতে সমস্যা কোথায়?
-বাসায় ঝামেলা হচ্ছে। আর আমার কিছু প্রবলেম।
-কি?
-এক বছর আগে বাস দূর্ঘটনায় ওর একটা পা কাটা পড়ে। ঐ সময় তাকে স্বান্তনা দেয়ার জন্য ফোন দিয়েছিলাম। তারপর কেন জানি প্রতিদিনই কথা হত। এভাবে একটা সময় ওর সাথে প্রেম হয়ে যায়।
-পা এর ব্যাপারটা তুই জানতি। তারপরও তুই প্রেম করেছিস , এটা তো ভালো কাজ করেছিস।
-ওর পা হাটুর উপর থেকে কেটে ফেলেছে। ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলে। একা একা বাথরুমেও পর্যন্ত যেতে পারে না। বাসার লোকজন ব্যাপারটা মানছে না। সবচেয়ে বড় কথা আমার নিজেরই এখন ইচ্ছে নেই।
-তোর ইচ্ছে না থাকলে ভিন্ন কথা। কিন্তু তার কাছে তোর কাছ থেকে পাওয়া আঘাতটা ঐ দূর্ঘটনার চেয়েও বড় হবে। এখন সবসময় তার মাথায় একটাই চিন্তা থাকবে যে , তার একটা পা নেই।
-বাদ দে , চল উঠি। স্যারের লেকচার ফটোকপি করতে হবে।
রাস্তায় শুয়ে গান গেয়ে একটি লোক ভিক্ষা করছে। তার পা দুটি হাটু থেকে কাটা। অদ্ভূত ছন্দে সে তার কাটা পা নাচাচ্ছে। সায়মা তার চোখ বন্ধ করে ফেললো। তার চোখ বেয়ে নামছে জলধারা।