চার দিন অনশনের পর আমাদের নাক দিয়ে জোর করে খাওয়াতে শুরু করল। মহাবিপদ! নাকের ভিতর নল দিয়ে পেটের মধ্য পর্যন্ত দেয় । আমার নাকে একটা ব্যারাম ছিলো। দুই তিনবার দেবার পরেই ঘা হয়ে গেছে। রক্ত আসে আর যন্ত্রণা পাই।
পাঁচ ছয় দিন পরে বিছানা থেকে উঠার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। ২৫ তারিখ সকালে সিভিল সার্জন সাহেব আমাকে পরীক্ষা করার পর মুখ কালো করে বেরিয়ে গেলেন। বুঝলাম আমার দিন ফুরিয়ে গেছে। কিছু সময় পরে আবার ফিরে এসে বললেন,"এভাবে মৃত্যুবরণ করে কি লাভ হবে? বাংলাদেশ যে আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু
আশা করে।" আমার কথা বলতে কষ্ট হয় , আস্তে আস্তে বললাম , " অনেক লোক আছে। কাজ পড়ে থাকবে না। দেশকে ও দেশের মানুষকে ভালোবাসি, তাদের জন্য জীবন দিতে পারলাম এই
শান্তি।"
তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন "আপনার পরিবারের কাউকে আসতে বলবো?" আমি না করলাম। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে চারটা চিঠি লিখে তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম ,"আমার মৃত্যু হয়ে গেলে , আমার পরিবারের লোকজনের কাছে এগুলো পৌছে দিবেন।"
উপরোক্ত ঘটনাটি বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী থেকে নেয়া। ১৯৫২ সালে কারাগারে বসে অনশনরত বঙ্গবন্ধুর কষ্টটা ছিলো নিদারুণ।
এখন ২০১৪ সাল। বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করা পোষাক শ্রমিকেরা অনশন
করছেন। গত তিনদিনের
অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ১৫ জন শ্রমিক। তোবা গ্রুপের কারখানায় কাজ করেন তিন হাজার শ্রমিক। তাঁরা মে, জুন
ও জুলাই মাসের বেতন
পাননি। বেতন-ভাতার দাবিতে চলছে অনশন।
কিন্তু দাবী পূরণের উদ্যোগ
নিচ্ছে না কেউ। ঈদের দিনেও অনশনরত ছিলো শ্রমিকেরা। পুলিশি বাধায় তারা কেউ ঈদের নামাজ পর্যন্ত পড়তে পারেন নি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি একটু উদ্যোগ নিবেন? আপনার পিতার অনশনের
কষ্টগুলো নিশ্চয়ই আপনি ভালোভাবেই জানেন। এই মানুষগুলো এই বেতনটার উপর নির্ভরশীল। ওরা কিভাবে বাঁচবে আপনিই বলুন।
বঙ্গবন্ধু এই অনশনটি যে কারণে করেছিলেন , তা মেনে নিয়েছিল সরকার। ডাবের পানি দিয়ে বঙ্গবন্ধু তখন অনশন ভঙ্গ করেন। আপনি কি এই শ্রমিকদের মুখে একগ্লাস ডাবের পানি ধরে বলতে পারেন না,
"তোমাদের দাবী মেনে নিলাম , এইবার ডাবের পানিটা পান করে অনশন ভঙ্গ কর।"