এতদিন ছিলো যানজট , আর এই ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়ে মানবজটে আটকা পড়লাম। সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে জিন্দাবাজার পর্যন্ত চলে গেলাম পদযুগলকে কোন কষ্ট না দিয়েই । কিন্তু পিঠের উপর ধাক্কার পরিমাণটা ছিলো পদযুগলের আরামের সমানুপাতিক। এতে অবশ্য একটা লাভ হয়েছে। এই ভীড়ের মধ্যে পেছন থেকে বিভিন্ন বয়সী নারীদের 'এক্সকিউজ মি' শুনতে শুনতে কবে যে আমি ক্ষমাশীল হয়ে পড়েছি তা খেয়াল করিনি। আসলে সব জিনিসেরই ভালো দিক আছে , কিন্তু চক্ষু দুটি সবসময় খারাপটাই দেখে।
এই তো সেদিন দেখিলাম একজন আপু তার শিশুকন্যাকে উপদেশ দিচ্ছেন , পাশের ফ্ল্যাটের কেউ যদি জিজ্ঞেস করে জামা কত দিয়ে কিনেছো, তাহলে বলবে দুই হাজার টাকা। ক্ষণকাল পড়েই আমি উক্ত জামার সমগোত্রীয় আর একটি জামার ট্যাগে মূল্য দেখিলাম এগারোশো টাকা। এই শিশুটি এই অভিনয়ের মধ্য দিয়েই বড় হতে থাকবে। কে যেন বলেছিলেন জীবন নাকি থ্রিডি সিনেমা। আসলেই উনি যথার্থই বলেছিলেন।
এরকম আরো অনেকেই আছে। ধরুন নীলু নামের ছয় বছরের মেয়েটি তার বাবার হাত ধরে যাচ্ছে নতুন জামা কিনতে। নীলু আনন্দে লাফাচ্ছে। আনন্দটা আরো বেড়ে গেল যখন তার বাবা তাকে আইসক্রীম কিনে দিলেন। ভাগ্যিস মা নেই। প্রথম যেখানে তারা জামা কেনার জন্য ঢুকলো সেখানেই নীলুর একটি জামা পছন্দ হয়ে গেল। লাল রঙের জামাটিকে নীলু হাত দিয়ে স্পর্শ করলো। নীলু তার বাবাকে জানিয়ে দিলো যে সে এই জামাটিই নেবে। নীলুর বাবা জামার ট্যাগে লেখা মূল্য দেখেন। এটা তার সামর্থ্যের বাইরে। তিনি মেয়েকে অন্য জামার দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে থাকেন।
একটু পড়েই সেখানে এক শিশুসমেত এক মহিলার আগমন। ঐ শিশুটিও ঐ লাল জামার প্রতি আকৃষ্ট হয়। মহিলা আলতো করে ট্যাগটা তুলে ধরেন। এত সস্তার জামা, না এটা নেয়া যাবে না। কিন্তু শিশুটি এটাই নেবে। অবশেষে ঐ মহিলা ঐ জামাটিই নিলেন।
নীলু থাকিয়ে আছে। তার চোখ জলে টলমল করছে। নীলু চেষ্টা করছে যাতে তার বাবা তার কান্না দেখতে না পায়। সে জানে এতে তার বাবার কষ্ট হবে।
এমনটা কি হতে পারে না? এদেশের প্রতিটি শিশু ঈদের দিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই দেখবে তার বালিশের পাশে নতুন জামা জুতো রাখা। সরকার থেকে লোক নিয়োগ দেয়া হবে যাতে তারা বাচ্ছাদের কার কি জামা পছন্দ সেটা আগেই লিস্ট করে ফেলে। সেই লিস্ট অনুযায়ী সবার জন্য নতুন জামা তৈরী হবে। আশাবাদী হতে দোষ নেই। একদিন হয়তো এমনটাই হবে।