স্কুলে স্কুলে আজ আন্দোলন হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক এবং প্রিন্সিপলদের জোর করে পদত্যাগ করাতে বাধ্য করছে উত্তেজিত কথিত প্রতিবাদী ছাত্র। শিক্ষকগণ ভালো হউক বা খারাপ, কোন বিচার, যাচাই বাছাই করে জোরপূর্বক পদত্যাগ করাতে বাধ্য করছে উত্তেজিত ছাত্র।
ছাত্রদের এমন আচরণে আমার সেই ২০০৮ সালের কথা মনে পড়ে গেলো। তখন ফখরুদ্দিন আহমেদ এর তত্ত্ববাধায়ক সরকার ছিলো। দেশে তখন কি কঠিন জরুরী অবস্থা ছিলো তা আপনারা সবাই জানেন। তখন ছিলাম জয়পুরহাটে। পুলিশ লাইন একাডেমী তে পড়তাম।
আমার জন্ম জেলখানায়। অনেক খারাপ মানুষ দেখেছি। অনেক ভয়ংকর দাগী আসামী দেখেছি। আমার দুইটা বন্ধু ছিলো। তাদের চরিত্র ছিলো ঐ দাগী আসামী থেকেও ভয়ংকর। এখন আমার ২৯ বছর চলতাছে। এই ২৯ বছরে যত আসামী দেখছি, তাদের পাপ এর সামনে, আমার বন্ধুদের পাপ যেমন র্সূযের সামনে পৃথিবী। সেই ফ্রেন্ড সার্কেলে একজন কুমিল্লার ছেলে ছিলো। একজন সরকারি জীবীর মেয়ে আরেকজন এলাকার বিশাল বড়লোক বাপের বখাটে মেয়ে। বড়লোক বাপের বখাটে মেয়েকে দেখলে আমাদের স্কুলের রাগী হুজুর স্যার ও থর থর করে কাপতো। হুজুর স্যার সবাইকে পিটালেও ঐ মেয়েকে পিটাতো না।
আসল কথা। আমাদের দুই পাজি বন্ধু পরিকল্পনা করলো স্যারদের সকলের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে নালিশ করবে। তখন আমাদের স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলো পুলিশ সুপার।
একদিন আমি স্কুলে যেতে দেরী হয়েছিলো। স্কুলের পিটি করতে গেলাম। ক্লাসে গেলাম। ক্লাস টিচার আসলো। অন্যান ছাত্রদের কোন খবর নাই। ব্যাঞ্চ এ ব্যাগ আছে কিন্তু ক্লাসে আমরা দুইজন ছাত্র। পরে জানলাম সবাই পুলিশ সুপারের কাছে গেছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নালিশ করতে।
এই ঘটনার কলকাঠি নারতে ছিলো দুই পাজি বন্ধু, সরকারি কর্মকর্তার মেয়ে এবং বড়লোক বপের বখাটে মেয়ে।
পরে একদিন আমাদের স্কুলে পুলিশ সুপার আসলো। শালিশের মত শিক্ষক ও আমাদের বসালো। পরে পুলিশ সুপার শিক্ষকদের যা ইচ্ছা অপমান করলো।
তখন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্যারদের চাকরি খান নি। পদত্যাগে বাধ্য করেন নি। হয়তো উত্তেজিত ছাত্রদের ঠান্ডা করতে এই ব্যাবস্থা করেছিলো।
আমাদের সহপাঠীদের মধ্যে আরো পাজি ছেলে ছিলো। কিন্তু তারা শয়তান ছিলো না। যেমন কৌশিক, বিল্লা (অরুফে বিলাই), বাইট্টা ছাব্বির ওরা দুষ্ট ছেলে ছিলো। কিন্তু তারা সৎ ছিলো। ভালো মানুষ ছিলো।
এখন আরেকটি আসল কথায় আসি। বর্তমানে ছাত্ররা কেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের পদত্যাগ করাতে বাধ্য করছে? তাদের ধারনা প্রতিষ্ঠানের প্রধান দুর্নীতিবাজ, অসৎ, যারা স্যারদের কাছে পড়ে তারাই ব্যাবহারিক পরীক্ষায় বেশী নম্বর পায়। তাদের ধারণা অমূলক।
শেষের কথায় আসি। আমি একদিন পুলিশ লাইনের মসজিদে নামজ পড়তে গেছিলাম। সাথে ঐ শয়তান বন্ধুদের একজনও ছিলো। পরে একজন পুলিশ ঐ বন্ধুদের কাছ থেকে সম্পন্ন ঘটনা জানতে চায়। পরে তাকে উপদেশ দিলো “পরের দোষ পরে ধরো। আগে নিজেরে সংশোধন করো।”
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:০১