প্রায় সময়ই মনে পড়ে যায় ২০১১ সালের কথা। সে সময় আমি এসএসসি পরীক্ষা দেই। এবং সে বছর ইন্টারে ভর্তি হই। এসএসসি পরীক্ষার প্রাপ্ত সেলামী দিয়ে একটি মোবাইল ক্রয় করি। মোবাইল এর নাম ও মডেল হচ্ছে Nokia 5130. এটার দাম ছিলো সে সময় ৭৯৯৯ টাকা। ৮ হাজার না কিন্তু। সাত হাজার নয়শত নিরাব্বই টাকা।
এটা ছিলো সে সময়ের স্মার্ট ফোন। ফেসবুক চালানো, ওয়েব ব্রাউজ, গান শোনা , ভিডিও দেখা সব হতো এই মোবাইল দিয়ে। Nokia 5130 ক্রয় করার সময় একটি মেমরি কার্ড, চার্জার ও হেডফোন ফ্রি দেয়। পরে অবশ্য আমি ২ জিবি মেমোরি ও ৪ (চার) জিবি মেমরি কার্ড ক্রয় করি। ৪ জিবি মেমরি কার্ড ক্রয় করার পর আমি আমার কলেজে ( সে সময়ে) আমি বিখ্যাত হয়ে যাই।
বাজার, বাস স্ট্যান্ড ইত্যাদি স্থানে কম্পিউটারের দোকান থাকতো। সেখান থেকে মোবাইলের মেমরি কার্ড এ গান, সিনেমা, ভিডিও গান, ব্যায়াম এর ভিডিও (ঐ গুলা) লোড করে নিতেন। মাজে মাজে নিদিষ্ট পছন্দের গান ও ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে নিতাম। সে সময় রবিতে ২৩ টাকায় ২০ এমবি ইন্টারনেট পওয়া যেতো। যার মেয়াদ ছিলো ৭ দিন। হেবি ইউজ করলে সেই ২০ এমবি ৩ বা ৪ দিনে শেষ হয়ে যেতো। গ্রামীনে +- ৩৫০ টাকা দিয়ে ১ জিবি ইন্টারনেট পাওয়া যেতো। এই এক জিবি দশ বা পনেরো দিন যেতো আমার।
সে সময় কোন গান ডাউনলোড দিলে ৬ থেকে ৭ মিনিট লাগতো ডাউনলোড হতে। সে সময় এক একটি mp3 ফরমেট এর গান গড়ে ৩ থেকে ১০ এমবি ছিলো। তিন এমবি একটি গান ডাউনলোড হতে গ্রামীন ফোন নেটওয়ার্কে ৮ মিনিট লাগতো।
২০১১ সালে এফএম রেডিও জনপ্রিয় ছিলো। ২০১১ সালে লাভ গুরু, Bhoot-FM জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিলো। Bhoot-FM প্রতি শুক্রবার রাত ১১ টা ৫৯ মিনিটে, রেডিও ফূর্তিতে, অনুষ্ঠিত হতো। এই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন আরজে রাসেল। এক একটি Bhoot-FM এর MP3 ফরমেট এর সাইজ ছিলো গড়ে ২০ থেকে ২৬ MB. অনেকে এই Bhoot-FM ডাউনলোড করে শুনতো। আমাদের গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ থেকে এবিসি রেডিও, রেডিও ফূর্তি ও রেডিও টুডে সম্প্রচার হতো।
সে সময় ইন্টারনেট এর গতি ছিলো গড়ে ২০ kbps থেকে ২৫ kbps. কোনদিন 50 kbps এর উপরে ইন্টারনেট এর গতি অতিক্রম করেতে দেখি নাই। সে সময় আমার Nokia 5130 এ বাই ডিফল্ট ব্রাউজার ছিলো অপেরা মিনি। আমি ওপেরা মিনি দিয়ে ফেসবুক ও অন্যান সাইড ব্রাউজ করতাম।
সে সময় শুধু ঢাকা সহ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ছিলো। তাও এর প্রচার ছিলো খব সীমিত। যাদের কম্পিউটার ছিলো তারা বাংলা লায়ন এর মত ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডর এর মাধ্যমে ইন্টারনেট চালাতো। সে সময় আমি জানতাম না যে, ব্রডবেন্ড কি? আমি মনে করতাম টাওয়ার এর মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিসেবা প্রদান করা হয়।
২০১৫ সালে সারা বাংলাদেশে থ্রি জি সরিয়ে যাবার পর সবার হাতে হাতে এন্ডোয়েট ফোন আসা শুরু করে। ইন্টারনেট এর চাহিদা ও দাম বৃদ্ধি পায়। যার কারনে ফিক্সড মূল্যে ইন্টারনেট এর চাহিদা পূরনের জন্য ব্রডবেন্ড এর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এখন মনে করেন আমার বাসায় দুইটি এন্ডোয়েট ফোন। আমার ও আমার ছোট ভাই এর। আর আমার একটি লেপটপ আছে। ৩৫০ টাকার এক জিবি নেট শেষ হতে ২ ঘন্টা সময় নিবে। তাই ইন্টারনেট এর দাম শ্রাসয় (কেউ বানান ঠিক করে দিয়েন) করার জন্য ব্রডবেন্ড ইন্টারনেট এর লাইন নিতো।
২০১১ সালের দিকে এত ইনফ্রুয়েন্সার, ভাইরাল হবার অসুস্থ প্রতিযোগিতা হতো না। ফেসবুক চালানো ছিলো একটি সম্মান এর ব্যাপার। অনেকে মেয়েদের নাম দিয়ে ফেইক আইডি খুলতো। পরে ২০১৩ সালের ফটো ভেরিফিকেশন এর থাবায় অনেক আইডি নষ্ট হয়ে যায়।
এখন আমার, আম্মুর, আব্বু ও ছোট ভাই এর এন্ডোয়েট ফোন। ও বাসায় দুটি Laptop. আমার ও আমার ভাই এর। আমি দিনে গড়ে ৪ থেকে ৮ জিবি ইন্টারনেট খরচ করি। আম্মু ইউটুব দেখে প্রায় ৫০০ থেকে ৮০০ এমবি ইন্টারনেট খরচ করে। ভাই এর কথা না ই বললাম। এখন প্রায় শহরের ঘরে এন্ডোয়েট টিভি। ও ঘরে ঘরে সিসি টিভি ক্যামেরা। যার কারনে ব্রডবেন্ড ইন্টারনেট চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আজ হঠাৎ কেন যেন Nokia 5130, 2G ইন্টারনেট, ২০১১ সালের কথা মনে পড়ে গেলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৫৯