অবশ্যই পড়বেন...
আজ আমি আপনাদের সাথে সুরা আনফালের দুটি আয়াত আলোচনা করব।
আয়াত ২১ ও ২২।
এই দুটি আয়াতে আল্লাহ রব্বুল আলামীন শ্রবণের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ বলেন, "আর তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না,
যারা বলে যে, আমরা শুনেছি, অথচ তারা শোনে না।"
অতএব শুধু শুনলেই হবে না, মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।
এই আয়াতে মনোযোগী শ্রোতা হওয়ার ব্যাপারে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আপনারা জানেন যে, আজকাল আমরা মিডিয়ার উপরখুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। আপনি হয়ত একই সময়ে কিছু শুনছেন এবং অন্য কিছু দেখছেন, আবার হয়ত আপনার বাবা-মার কথাও শুনছেন।
আমরা একই সময়ে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে ব্যস্ত আছি, কিন্তু আসলে কোনোটাই মনোযোগ দিয়ে করছি না।
আমাদের এমন ভাবে নিজেদের তৈরি করতে হবে যে, যখন আমরা কিছু শুনব, আমরা যেন তাতে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারি।
আজকাল এটা খুবই সাধারণ ঘটনা যে, এমনকি জুমআহ’র নামাজে, লেকচারে বা ধর্মীয় আলোচনার আসরেও শ্রোতারা মনোযোগ দিচ্ছেন না। এমনকি আপনারা যখন আমার এই লেকচার শুনছেন আপনারা মোবাইলে মেসেজ চেক করছেন। কেউ কেউ হয়ত মোবাইল ঘাঁটছেন বা ফেইসবুক আপডেট করছেন ।এই ভিডিওটিও শুনার সময়ই আপনি হয়ত অর্ধেক মনোযোগ দিয়ে আমার লেকচার শুনছেন। বাকি অর্ধেকটা দিয়ে অন্য কিছু করছেন।
আল্লাহ বলেন, “তাদের মত হয়ো না যারা বলে যে, শুনছি কিন্তু আসলে মনোযোগ দিয়ে শুনে না।” রাসুলাল্লাহকে (সাঃ) তাদের যে সম্মান দেখানোর কথা এখানে তার কথাই বলা হচ্ছে।
তাহলে আয়াতের প্রথম অংশে মনোযোগ দেয়ার কথা বলা হচ্ছে।
প্রথম উপদেশ হচ্ছে যে, “আমরা যখন কারো কথা শুনব…”
দেখুন, এখানে কিন্তু সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি যে, কার কথা শুনব,এখানে এই মুহূর্তে শুধু শিষ্টাচারের কথাই বলা হচ্ছে।
আমাদের ভালো মনোযোগী শ্রোতা হতে হবে। আপনার মা আপনার সাথে কথা বলছেন, ফোন সরিয়ে রাখুন।
আপনার শিক্ষক কিছু বলছেন, ফোনটি সরিয়ে রাখুন। কারণ তা আপনার মনোযোগ কেড়ে নিতে পারে। জানালার দিকে তাকাবেন না। আপনার শিক্ষক যখন কিছু বলছেন, অন্য কাজ করবেন না। শুধুমাত্র মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনুন। যখন আপনার শিক্ষক বলে যে খাতা, কলম, ট্যাব সরিয়ে রাখতে, তখন কথা শুনুন; তখন শুধুমাত্র তাই করুন।
তাদের মত হবেন না, যারা বলে ‘শুনছি’ কিন্তু আসলে শুনে না।
দ্বিতীয় পয়েন্ট হচ্ছে যে, কিছু মানুষ শুনে ঠিকই, কিন্তু উপলব্ধি করে না। আসলে "শ্রবণ" শব্দটি খুবই আকর্ষণীয় সব ভাষাতেই বাংলায় বলুন, বা আরবিতে, ইংরেজিতে, ফার্সিতে কিংবা উর্দুতে। যেমন, আমরা মাঝে মাঝে বলি, “আমি তাকে উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সে শুনেনি।” এখানে তাহলে কী বলা হচ্ছে?
বলা হচ্ছে যে, সে শুনেছে ঠিকই, কিন্তু উপলব্ধি করেনি, বা আপনার কথায় কান দেয়নি। অর্থাৎ তার মধ্যে কোনও পরিবর্তন আসেনি। আমি বলার চেষ্টা করছি, কিন্তু তুমি শুনছ না। মানে তুমি আমার উপদেশ মেনে নিচ্ছ না।
কাজেই তাদের মত হবে না: যে বলে যে, “আমি হাজার বার শুনেছি। এই উপদেশ আমি আগেও পেয়েছিলাম।”
অর্থাৎ তারা উপদেশটি বিবেচনাও করে দেখছে না। আপনি উপদেশটি বাস্তবে আপনার নিজের জন্য আসলেই নিচ্ছেন না। শোনা দরকার তাই আপনি শুনছেন। অনেকটা আনুষ্ঠানিকতার মত, শুধু শুনছে আর কোনই পরিবর্তন হচ্ছে না।
আসলে কি এটা আমাদের সবার বেলাতেই প্রযোজ্য নয়?
আমরা জুম’আহতে যাই, খাতিবের খুতবা শুনি। তিনি যা উপদেশ দেন তার কিছুই কি আমরা আসলে অনুধাবন করি বা কাজে লাগানোর মত করে শুনি? যখন আপনার সাইকিয়াট্রিস্ট, একাউন্টেন্ট বা আপনার ডাক্তার আপনাকে কোনও উপদেশ দেয়, তখন কিন্তু আপনি ঠিকই তা মেনে চলেন। পুলিশ যখন কিছু করতে বারণ করে তখনও কিন্তু আপনি ঠিকই তা মেনে চলেন।
অথচ যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিছু বলেন, আপনার পিতা-মাতা কিছু বলেন বা ইমাম যখন বলেন বা এমনকি কুরআনে যা কিছু বলা হয়, আমরা কি আসলেই তা শুনি?
“তাদের মত হয়ো না” আল্লাহ তা’য়ালা যারা শুনে কিন্তু বাস্তবে শুনে না। তাদেরকে পশুর সাথে তুলনা করেছেন এই আয়াতে।
কেন এই তুলনা? শুধু কি এইজন্যে যে, আল্লাহ তা’য়ালা তাদের উপর রেগে আছেন? আসলে তাদের সাথে খুব মিল আছে এই ব্যাপারে। আপনি যদি কোনও পশুকে কোনও উপদেশ দেন, তার মধ্যে কি কোনও পরিবর্তন আসবে? তাই আল্লাহ বলছেন যে, কোনও ভালো উপদেশ শুনেও যদি তোমার মধ্যে কোনও পরিবর্তন না আসে, তাহলে তোমাকে এই উপদেশ দেয়া আর একটা বানরকে সেই উপদেশ দেয়ার মধ্যে কোনও তফাত নেই। অথবা একটা বিড়ালকে উপদেশ দেওয়ার মত, খুব একটা পরিবর্তন আসবে না উপদেশ দিয়ে। তাই পরের আয়াতে তিনি বলছেন যে, আল্লাহ তা’য়ালার নিকট সর্বনিকৃষ্ট পশু হচ্ছেالصُّمُّ الْبُكْمُ
প্রথমে আল্লাহ তাদেরকে পশুর সাথে তুলনা করলেন এবং পরবর্তীতে বললেন যে, সর্বনিকৃষ্ট পশু হলো: যারা শুনতে পায় না বা কথা বলতে পারে না। বধির আর বোবা। ওরা বধির আর বোবা।
আল্লাহ তায়ালা কেন উল্লেখ করলেন যে, তারা কথা বলতে পারেনা? আমি সবশেষে এটাই আপনাদের সাথে আজকে আলোচনা করব। আপনি যখন কিছু পরিষ্কার করে বা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন না,আপনি কিন্তু সেটা কাউকে বোঝাতেও পারবেন না ভালো করে। ক্লাসে দেখবেন যে শিক্ষক কখনো বলেন যে, ভালো করে শোনো, কারণ কালকে তুমি আমাকে এটা বোঝাবে। আরবিতে একটা কথা আছে, أساء سمعاً فأساء إجابةً” তুমি ভালো করে শোননি, তাই ভালো করে উত্তর দাওনি।
আল্লাহ বলছেন যে, তুমি মনোযোগ দিয়ে না শুনলে সঠিক জবাব দিতে পারবে না।
আমি চাইছি যে, আপনারা এটা খুব ভালো ভাবে চিন্তা করুন। আমি এই মুহূর্তে হয়ত খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু শুনছি না, অথচ আমি ঠিকই কথা বলতে পারছি। কিন্তু হাশরের ময়দানে শুধুমাত্র তারাই কথা বলতে পারবে যারা এই জীবনে ভালো করে মনোযোগ দিয়ে আল্লাহর নির্দেশ শুনেছেন। পরকালে যখন ফেরেশতা এসে জিজ্ঞাসা করবেন যে, “বল তোমার রব কে?” তখন যারা মনোযোগ দিয়ে শুনত, শুধু শুনার জন্য শুনা না যারা অনুধাবন করত, তারাই বলতে পারবেন যে, আল্লাহ আমার রব। যারা আন্তরিকভাবে নেয়নি বিষয়গুলো তারা যদিও বা মুসলিম হয়, তারা তখন জবাব দিতে পারবে না।
তাই আল্লাহ বলছেন যে, সর্বনিকৃষ্ট পশু হলো সেটাই যে কথা বলতে পারে না। তারা অনুধাবন করতে পারছে না, চিন্তাই করতে পারছে না যে, আসলে তারা কী করছে।
আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে চিন্তাশীল হওয়ার তৌফিক দান করুন এবং মনোযোগী শ্রোতা করে তুলুন। এবং আমাদের শক্তি ও ধৈর্য্য ধারণ করার তৌফিক দিন যেন আমরা মেনে চলতে পারি যা শুনি। আমীন। --- উস্তাদ নুমান আলী খান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে