আজ থেকে সকল বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা তাদের বর্ধিত বেতন পাওয়া শুরু করল। এই সুবাদে সকল বেসরকারি শিক্ষকের অভাব অনাটনের সংসারে এক পসলা আনন্দের বর্ষণ বয়ে গেলো আর কি।
আমার আব্বাও পেয়েছেন বর্ধিত বেতন। রাত দশটায় আব্বার ফোন। বাবু, তোমার তো বাসা ভাড়া বাকি, আর মাসের চলার টাকাও তো দেই নাই, আর তুমি কিসের যেন কি শিখতেছ, JAVA না কি যেন, ওখানেও তো টাকা দিতে পারো নাই...... তো আব্বা কতো টাকা দিবো তোমাকে?
একজন শিক্ষকের সন্তান না হলে কেউ এই কথা গুলোর মাঝে যে একটা বেদনা সিক্ত আনন্দ আছে, সেটা ধরতে পারবে না।
আমি বললাম, আব্বা, আপনার নাকি অনেক গুলা দেনা আছে, তো আপনি আমাকে এতো গুলা টাকা একসাথে না দিয়ে আস্তে আস্তে দেন না হয়! আব্বা একটু আমতা আমতা করল। মনে হয় বোঝার চেষ্টা করল, আমি কি বলতে চাচ্ছি। তারপরে বলল, আরে নাহ কতো দিবো বল? আমি যে অংকটা বললাম, বলেই লজ্জা পেয়ে গেলাম।
আব্বা হাসলেন, আর বললেন ওকে আমি কাল পাঠিয়ে দিবো। আমি বললাম ঠিক আছে আব্বা!
এই হচ্ছে একজন বেকার পুত্র এবং তাঁর বাবার দেনা পাওনা বিষয়ক কথোপকথন।
আমি তখন মনে মনে ভাবলাম, আব্বা নিশ্চয়ই খুব ই গর্বিত অনুভব করছে। গর্বটা শান্তির। প্রিয় মানুষ গুলোর চাহিদা পুরন করতে পারার শান্তি।
আফসোস, শ্যামল কান্তি এই শান্তি নিতে পারলেন না। তাঁর সন্তানরা আজ যেখানে ঠিক করতো, কার ভাগে কতো পড়ছে। আব্বা আবার চুপ করে বড় টাকে বেশি দিচ্ছে না তো!
সুখের দিনে শ্যামল কান্তি আজ চাকুরি চ্যুত। সে জেলে, লজ্জায় অপমানে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে হয়তো।
আর তাঁর পরিবার? .....................
থাক, মৃত মানুষদের নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে নাহ।
মৃত? হ্যাঁ, মৃত।
"মূর্খের মৃত্যু হয় দেহে অসারে, শিক্ষিতের মৃত্যু হয় অসম্মানে।।"
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:৫৯