এইমওয়ে’র অফার ১ বছরে কোটিপতি!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে ৬ মাসে ২ লাখ টাকা পাওয়া যাবে। এভাবে কোটিপতি হতে সময় লাগবে মাত্র ১ বছর। এক বছরেই হওয়া যাবে কোটিপতি। অবিশ্বাস্য এ প্রস্তাব নিয়ে মাঠে নেমেছে একটি এমএলএম কোম্পানি। ৭ মাস আগে ঢাকাসহ দেশব্যাপী তৎপর হয়ে ওঠা এ কোম্পানির নাম এইমওয়ে করপোরেশন লিমিটেড। এর কর্ণধাররা বলছেন, দেশজুড়ে এখন তাদের গ্রাহক (ডিস্ট্রিবিউটর) সাড়ে ৭ লাখ। এ বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের কাছ থেকে তারা আমানত সংগ্রহ করেছেন অন্তত ২ হাজার কোটি টাকা। এসব গ্রাহকের বেশির ভাগই গ্রামের সাধারণ সহজ সরল মানুষ। তাদের আমানত ফেরতের কোন নিশ্চয়তা নেই। ২০০ পার্সেন্ট হারে লভ্যাংশ দেয়ার কথা বলে আমানত সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী তফসিলি ব্যাংক ছাড়া অন্য কেউ নগদ অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে না। এটি দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এইমওয়ে করপোরেশন নগদ আমানত সংগ্রহ করছে। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখের ধুলো দিতে তারা পণ্য বিক্রির কথা বলছে। বলা হচ্ছে, বাই ব্যাক (ক্রয় ফেরৎ) পদ্ধতিতে তারা টাকা নিচ্ছেন। এর আগে ইউনিপে টু ইউ, রিচ বিজনেস ও ইজেন ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কয়েকটি এমএলএম কোম্পানি এভাবে কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করে উধাও হয়ে যায়। ইউনিপে টু ইউ’র হাজার হাজার গ্রাহক এখনও টাকা ফেরতের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। গত ৭ই জুলাই এইমওয়ে করপোরেশন জয়েন্ট স্টক কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। তবে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কত তা কোথাও বলা হয়নি। এ বিষয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যান সৈয়দ রিদওয়ান বিন ইসহাক বলছেন, এমএলএম কোম্পানি করতে কোন মূলধনের প্রয়োজন হয় না। এইমওয়ে করপোরেশন ৪ ধরনের একাউন্ট খোলার প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। এগুলো হচ্ছে- সিলভার, প্লাটিনাম, গোল্ড ও ডায়মন্ড। প্রস্তাব অনুযায়ী সিলভার একাউন্ট খুলতে লাগবে ২ হাজার ১ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার টাকা কোম্পানির শেয়ার বাবদ অনির্দিষ্টকালের জন্য কেটে রাখা হবে। বাকি ১ হাজার টাকার বাধ্যতামূলকভাবে নিম্নমানের কিছু হারবাল পণ্য কেনার জন্য দিতে হবে। আর ১ টাকা দিতে হবে পরিচয়পত্র বাবদ। একইভাবে গোল্ড একাউন্ট খোলার জন্য লাগবে ৩ হাজার ১০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে কোম্পানির শেয়ার বাবদ নেয়া হবে ২ হাজার টাকা। বাকি টাকার পণ্য। প্লাটিনাম একাউন্ট খোলার জন্য লাগবে ৮ হাজার ১০০ টাকা। এর জন্য শেয়ার বাবদ কাটা হবে ৩ হাজার টাকা। ডায়মন্ড একাউন্ট খুলতে দিতে হবে ৫ হাজার ১০০ টাকা। এর মধ্যে ৪ হাজার টাকা কাটা হবে কোম্পানির শেয়ার বাবদ। বাকি টাকার নিম্নমানের পণ্য গছানো হবে। একাউন্টভেদে ৫ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা রাখা যাবে। সিলভার একাউন্ট হোল্ডাররা দৈনিক ৪০ হাজার, গোল্ডেন একাউন্ট ৯০ হাজার, প্লাটিনাম একাউন্ট ১ লাখ ৮ হাজার ও ডায়মন্ড একাউন্ট হোল্ডাররা দৈনিক ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবেন- এমন অবিশ্বাস্য লোভনীয় প্রস্তাব তাদের। তবে এইমওয়ে কোম্পানির প্রতারণা যাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত না হয় সেজন্য এর কর্ণধাররা বেশ কয়েকটি অখ্যাত এবং নামসর্বস্ব আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকাকে কোম্পানির মুখপাত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওইসব পত্রিকায় কোম্পানির কার্যক্রমের প্রোপাগাণ্ডা লিখে তা বিনামূল্যে বিলি করা হচ্ছে। জাতীয় গণমাধ্যমে তাদের প্রতারণার সংবাদ যাতে প্রকাশ না হয় এজন্য অখ্যাত সুবিধাভোগী ক’জন হলুদ সাংবাদিককে তারা এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করেছেন।
গতকাল সরজমিনে এইমওয়ে কর্পোরেশনের ৫১/১ পুরানা পল্টনের অফিসে গেলে দেখা যায় শ’ শ’ লোকের জটলা। নির্মাণাধীন ভবনটির বিভিন্ন স্থানে এলোমেলোভাবে বসে আছেন কোম্পানির কর্মকর্তারা। একটি ঘরে কয়েকটি ছেঁড়া কার্টনে রাখা হয়েছে প্রসাধনী হিসেবে গছিয়ে দেয়া কিছু হারবাল পণ্য। কোম্পানির নিযুক্ত এজেন্টরা আগন্তুকদের বোঝাচ্ছেন কিভাবে স্বল্প সময়ে লাখ লাখ টাকা আয় করা যাবে।
যত সব প্রলোভন: তারা বলছেন, এইমওয়ে তাদের গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত নিয়ে অনেকগুলো প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। এগুলোর মধ্যে এইমওয়ে হেলিকপ্টার এভিয়েশন সার্ভিস, এইমওয়ে কসমেটিক্স অ্যান্ড ফুড সাপ্লিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, এইমওয়ে মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, এইমওয়ে ব্যাংক, এইমওয়ে ইন্স্যুরেন্স, এইমওয়ে সুপার শপ, এইমওয়ে মিনারেল ওয়াটার, এইমওয়ে গার্মেন্টস, এইমওয়ে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, এইমওয়ে রিয়েল স্টেট, এইমওয়ে মেগাসিটি, এইমওয়ে পর্যটন সিটি, এইমওয়ে ট্রান্সপোর্ট ও এইমওয়ে টেলিভিশন। তবে এসব প্রকল্পের সবই প্রস্তাবিত। এসব প্রকল্পের শেয়ার বিক্রি করা হচ্ছে।
বক্তব্য: এত অল্প সময়ে কিভাবে এত বেশি টাকা আয় করা সম্ভব- এমন প্রশ্ন করা হলে কোম্পানির চেয়ারম্যান রিদওয়ান বিন ইসহাক বলেন, সিস্টেমে চললে সবই সম্ভব। এভাবে আমানত সংগ্রহ করা বৈধ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশে প্রচলিত সব আইন মেনেই আমরা ব্যবসা করছি। আমাদের সঙ্গে অনেক মন্ত্রী-মিনিস্টারও আছেন। বিস্তারিত জানার জন্য তিনি তাদের গণমাধ্যম পরিচালক ইকবাল হোসেন জয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। যোগাযোগ করা হলে ইকবাল হোসেন জয় বলেন, এর আগে অনেক পত্রিকার নিউজই আমরা থামিয়ে দিয়েছি। আপনারও নিউজ করতে হবে না। তিনি বলেন, রাতে আসেন। খুশি করবো। বৈধভাবে ব্যবসা করলে কেন খুশি করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা আমাদের ভাই-ব্রাদার। বেশ ক’জন সিনিয়র প্রতিবেদক ও সাংবাদিক নেতার নাম বলেন তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য তাজুল ইসলাম এমপি’র এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে গত ৬ই ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের বলেছেন, এমএলএম ব্যবসার নামে কিছু কিছু কোম্পানি প্রতারণা ও ঠকবাজি করছে। এসব প্রতারণার জন্য দেশের বিদ্যমান প্রচলিত আইনের সহায়তায় শাস্তি দেয়া যেতে পারে। মন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ যারা হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের বিষয়ে বৈঠক করে ববস্থা নেয়া হবে। গতকাল যোগাযোগ করা হলে তাজুল ইসলাম এমপি এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, এমএলএম কোম্পানির নামে মানি মকিং গেম হচ্ছে। অবৈধ ব্যাংকিং হচ্ছে। কিন্তু যখন বাংলাদেশ ব্যাংকে বলি তারা বলে তাদের কিছু করার নেই। তাহলে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কে নেবে? তিনি বলেন, আমি সংসদে একাধিকবার এ নিয়ে কথা বলেছি, কিন্তু তাদের দৌরাত্ম্য রোধ করা যায় না।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন
মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সত্যি বলছি, চাইবো না
সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেখস্থান.....
শেখস্থান.....
বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন