somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোলেস্টেরল কি আসলেই অত খারাপ???

০৩ রা মে, ২০১৪ সকাল ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিস্টার আবুল বাজারে এক লিটার সয়াবিন তেল কিনে দোকানীকে হঠাৎ হাক দিল, - আমার ফ্রি'টা কই?

দোকানী আকাশ থেকে পরে, - তেলের সাথে আবার কিসের ফ্রি?

- কেন্‌ বোতলের গায়ে যে লেখা "কোলেস্টেরল ফ্রি"? এখন আমার ফ্রি কোলেস্টেরলটা দাও।

মিস্টার আবুলের মত আমরাও নিশ্চই ফ্রি কোলেস্টেরল নিতে গিয়ে বোকা বনতে যাব না, তাই তাই না? তবে এইসব তেলের কম্পানীগুলো যে আমাদের আরো বড়সড় বোকা বানাচ্ছে তা কি আমরা জানি? কারণ, এগুলো উদ্ভিজ্জ তেল, এবং এগুলোতে আসলে কোলেস্টেরলই থাকে না। কোলেস্টেরল থাকে প্রাণিজ চর্বিতে, যেমন গরুর মাংসে।



তবে আমাদের দেশে সয়াবিন তেলের নামে যে পাল্ম ওয়েল বিক্রি হয় এটা অনেকেই শুনেছি। এই পাল্ম ওয়েল উদ্ভিজ্জ হলেও এতে সেচুরেটেড ফ্যাট আছে উচু মাত্রায় যেটা স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ বলে অনেকে বিবেচনা করেন। আবার অনেক বিশেষজ্ঞ এটাকে ভালো বলে যুক্তি দেবার এক চেষ্টা করে যাচ্ছে ইদানিং। যাই হোক, এটা ভিন্ন বিষয়, মূল আলোচনায় আসি।

আমরা প্রায় সকলেই কোলেস্টেরলকে বাকা চোখে দেখি। কিন্তু এটা কি জানি আমাদের প্রতিদিন প্রায় ৩০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল খেতে বলা হয়? এছাড়াও শরীরের ভিতর কোলেস্টেরল তৈরিও হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সুতরাং, আপনি কোলেস্টেরল খান অথবা না খান, শরীরে কোলেস্টেরল থাকবেই।

আমাদের খাদ্যের ছয় রকম পুষ্টির একটা হল স্নেহ বা তেল-চর্বি। কোলেস্টেরল এই তেল-চর্বি জাতীয় খাবারের অন্তর্গত। এগুলো পানিতে দ্রবণীয় নয় বলে সহজে রক্তে শোষিত হয় না। এর জন্য প্রয়োজন হয় পিত্তথলীর রসে থাকা বিভিন্ন bile acid বা bile salts. এদের কাজ হল তৈলাক্ত খাবারকে emulsify করা, এটা অনেকটা তেলে-জলে মিশ খাওয়ার মত। এ কারণে যাদের পিত্তথলী অপারেশন করে বাদ দেয়া হয়, তাদের জন্য তৈলাক্ত খাবার খাওয়া নিষেধ। আর এই bile acid বা bile salts তৈরি হয় কোলেস্টেরল থেকে, লিভারে বিভিন্ন বিক্রিয়ার মাধ্যমে। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে চর্বি জাতীয় খাবার হজমের জন্য কোলেস্টেরল প্রয়োজন।

এই রক্তে শোষিত হওয়া কোলেস্টেরলসহ অন্যান্য তেল-চর্বি বা লিপিড (lipid) একটা ক্ষুদ্র বলের মত আকৃতি নিয়ে রক্তে ভেসে বেড়ায়, যাদের বলে lipoprotein. বিভিন্ন সময়ে এই lipoprotein থেকে কিছু অংশ আলাদা হয়ে গিয়ে কোষের মধ্যে ডুকে যায়, তাই এর উপাদানের মধ্যে আনুপাতিক পরিবর্তন ঘটে। ফলে পর্যায়ক্রমে এটি পরিনত হয় chylomicrone, VLDL, LDL, এবং HDL-এ । শেষ দুটোর নাম কি পরিচিত লাগছে?

LDL-কে বলা হয় bad cholesterol.
HDL-কে বলা হয় good cholesterol.

বুঝুন অবস্থা, কোলেস্টেরলেরও খারাপ ও ভালো আছে! আসলে HDL শরীরের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা অতিরিক্ত কোলেস্টেরলকে বহন করে লিভারে নিয়ে যায়। সেখানে এগুলোকে বিবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়। আর LDL করে ঠিক তার বিপরীত। অনেক সময় কোলেস্টেরল রক্তনালীতে জমে গিয়ে পথ বন্ধ করে দিতে পারে, HDL এক্ষেত্রে প্রতিরক্ষার ভূমিকা পালন করে।



উপরের আলোচনায় কোলেস্টেরলের একটা খারাপ দিকও উঠে এসেছে। কিন্তু আমরা কি জানি এ কোলেস্টেরল থেকে কত ধরণের হরমোন প্রস্তুত হয়? অ্যাড্রিনোকর্টিকয়েড হরমোনগুলো এর উদাহরণ। এগুলো অনেক দরকারী খনিজদ্রব্য শোষণ-পরিশোষণ, ইত্যাদি কাজে জড়িত। (পরিশোষণ মানে হল কিডনীতে ছাকন হবার পর গ্লুকোজ ও খনিজদ্রব্যসমূহ পুণরায় রক্তে নিয়ে আসা যেন তা শরীর থেকে মুত্রের মাধ্যমে বেড়িয়ে না আসে)। এরা দেহের পানিজাতীয় অংশের ভারসাম্য রক্ষায়ও ভূমিকা পালন করে।

এর বাইরে সকল সেক্স হরমোন কোলেস্টেরল থেকে তৈরী হয়। যেমন FSH, LH যেগুলো যৌনাঙ্গের গঠন, রজঃক্রিয়া বিভিন্ন কাজে জড়িত। আর testosterone, estrogen, progesterone এগুলো তো ছেলে-মেয়ে নির্ধারণ করে। এই হরমোনগুলো ছাড়া "ভালোবাসা-বাসী"র ব্যাপারগুলো তো হবেই না। এরপরও কি কলেস্টেরলকে ভালোবাসবেন নাকি ঘৃণা করবেন সেটা আপনার উপরই ছেড়ে দিলাম।

কোলেস্টেরলের আরেকটা বিশেষ কাজ হল কোষের পর্দার rigidity বাড়ানো। এতে পর্দার উপর সারাক্ষণই ঢেউ খেলে যায়। ফলে অনেক প্রয়োজনীয় বস্তু কোষের ভিতর সহজেই ঢুকে যেতে পারে। যদি কোলেস্টেরল না থাকে, তবে কোষ পর্দা শক্ত বা ভঙ্গুর হয়ে যেত এবং কোষটি মৃতকোষে পরিণত হত।

সুতরাং, কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরূরী একটি উপাদান সন্দেহ নেই। তবে আমি কোলেস্টেরল খাওয়ার জন্য উৎসাহিতও করব না, কারণ সবকিছুরই একটা সীমা থাকা উচিৎ। বৃদ্ধ বয়সে বিশেষত ৪৫-৫০ এর পর হজম শক্তি এমনিতেই কমে যায়, তাই চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। লক্ষ করুণ, কোলেস্টেরলও এ শ্রেণিতে পরছে। সুতরাং, লিপিড জাতীয় খাবারে যেমন সতর্কতা দরকার, কোলেস্টেরলের জন্যও তাই। আপাতত এই কোলেস্টেরলের প্রতি যে ভীতিকর ব্যাপার আমাদের ভিতর কাজ করে, সেটা যে পুরোপুরি সঠিক নয় এটুকুই শুধু বললাম।

অতিরিক্ত খাবার গ্রহণে যে চর্বি জমতে পারে এই ব্যাপারটাই বা আমরা ক'জন জানি? কারণ, অতিরিক্ত গ্লুকোজ বা চিনি, প্রোটিন এগুলো শেষ পর্যন্ত চর্বি হিসেবে জমে গিয়ে ওজন বাড়িয়ে দেয়। তাই পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবার খান, সুস্থ্য থাকুন।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৪ সকাল ১১:৩০
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×