লিখেছেন : ফজলুর রহমান
কবিতা লিখে জেল খাটা আর জীবন দেয়ার ঘটনা
জগতে খুবই হাতেগোনা। কাজী নজরুল ইসলাম
কবি, তিনি কবিতা লেখার দায়ে ব্রিটিশ ভারতে
জেলবন্দি হয়েছেন। আপন জীবনছন্দে থাকা
নজরুল একদা দেখে শুনে ক্ষেপে
গিয়েছিলেন।
ধরা যাক তিনি এখন এই বাংলাদেশে কবিতা লিখছেন;
এবং দেখে-শুনে ক্ষেপে যাচ্ছেন বার বার।
তখন কাণ্ডটা কী হতো! আমি নিশ্চিত কবিতা
লেখার দায়ে তাকে এই স্বাধীন বাংলাদেশে
জেলে যেতে হতো। কেনো?
১. একজন সাধারণ নাট্যকর্মী সোহাগী আক্তার
তনুর নির্মম হত্যাকাণ্ডে তিনি ‘দেখিনা কী হয়’
ভূমিকা পালন করতে পারতেন না। তিনি আগুন ধরানো
কবিতা লিখতেন, যা শাসককুল সহ্য করতে পারতো
না। অতএব তার নিশ্চিত জেল বাস।
২. গানের মানুষ, সংস্কৃতির মানুষ অধ্যাপক রেজাউল
করিমের মৃত্যু তাকে বিচলিত করতো। তিনি
যন্ত্রণায় ছটফট করতেন। হয়তো ছুটে
যেতেন রাজশাহী। কবিতা লিখতেন। সেই
লেখায় বিব্রত হতো প্রশাসন আরও অনেকে।
ফলাফল: কবির জেলবাস।
৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, এখনো তরুণদের
সাহসের জায়গা। সেখানে প্রখর প্রতিভাবান মানুষ
হুমায়ুন আজাদকে চাপাতির আঘাতে আক্রান্ত করার
ঘটনা ভীষণ পীড়িত করতো নজরুলকে। তিনি
সভ্যতা-ভব্যতা সিকেয় তুলে প্রতিবাদমুখর হতেন।
রাস্তায় নামতেন। মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লিখতেন। যেমন:
লিখেছিলেন তার যৌবনবেলায় ব্রিটিশ-ভারতে। সেই
লেখার আগুন ছড়িয়ে পড়তো সবখানে।
শহরজুড়ে দেশজুড়ে ভীষণ উত্তাল এক
পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। সব ঠাণ্ডা করতে সরকার
বাধ্য হতো নজরুলকে গ্রেফতার করতে।
৪. এক সময়ের সংস্কৃতির শহর, গানের শহর
নারায়ণগঞ্জ। সেই শহরের এক কিশোর সৃষ্টির
স্বপ্নে বিভোর থাকে। কবিতা লিখে খাতার পাতা
ভরে। সেই কিশোর ত্বকীকে ‘একদল দানব’
হত্যা করল। কোন অপরাধে কেউ জানে না।
সেই হত্যার বিচার হলো না। নজরুল এই অরাজকতা
দেখে চুপটি মেরে যাবেন, এমন কবি তিনি নন।
অগ্নিমূর্তি ধরে তিনি এই ঘটনার প্রতিবাদ করতেন।
নতুন নতুন কবিতা আর বিদ্রোহে উত্তাল করে
তুলতেন নারায়ণগঞ্জ, সারা দেশ। তাকে থামাতে
তখন কামান দাগা হতো। জল কামানতো থাকতোই।
শেষমেশ জেল।
৫. নারায়ণগঞ্জে একজন শিক্ষককে মৃত্যুসম
বেদনা দিয়ে অপমান করা হলো। যিনি ঘটনা ঘটালেন
তিনিই এখন বড় গলা করে ধর্মকে তার ঢাল
হিসেবে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে
চলেছেন। রাষ্ট্র আছে, সরকার আছে, প্রশাসন
আছে অথচ এই অন্যায়ের বিচার হচ্ছে না।
শিক্ষকের অপমানে নজরুল কি ‘হালুয়া-রুটি স্বভাবী’
হয়ে ঘরে বসে থাকতেন? হতেই পারে না। তিনি
ছুটে যেতেন শাহবাগের প্রতিবাদী মিছিলে।
ঘুরে বেড়াতেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে
ক্যাম্পাসে। আগুন ধরিয়ে দিতেন রাজপথে। আর
পরিস্থিতি শীতল করতে সরকারকে অনেক কিছুই
করতে হতো, যার অন্যতম হলো নজরুলকে
আটক।
৬. বাবার কাঁধে লাশ হয়ে ঝুলে থাকবে অভিজিৎ
আর দীপনরা এটা কখনোই মেনে নিতে
পারতেন না নজরুল। তিনি বিদ্রোহ করতেন।
জবাবে সরকার কী করতো? জাতীয় কবি, গণ
সঙ্গীতের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আটক
করে জেলে পাঠিয়ে দিতো, নয়তো
দেশান্তরী হতে বাধ্য করতো! কারণ তিনিতো
বার বারই একথা বলতেন,‘কাণ্ডারী! বল, ডুবিছে
মানুষ, সন্তান মোর মা’র!’
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:১৩