যতদিন পর্যন্ত টাকার দরকার হলেই
আব্বুর কাছে বলতাম: আব্বু ৫০০ টাকা
লাগবে, আব্বু ৩০০ টাকা দাও তো
বুঝতাম না ততদিন, সীমিত টাকা দিয়ে
সবকিছু ম্যানেজ করা কতটা কষ্টের
কাজ। বুঝতাম না, দরকার হইলেই টাকা
চাইতাম, আব্বু যেইভাবে হোক, ম্যানেজ
করে দিতো, আব্বু নামক মানুষটা সন্তান
কে কখনো না বলতে জানে না, নিজের
রক্ত পানি করা টাকা দিয়ে সন্তানের
ইচ্ছা পূরণ করে যায়। কখনো বুঝতে দেয়
না, কতটা কষ্ট হচ্ছে এই টাকাগুলা
দিতে, ঈদের সময় পাঞ্জাবি কিনতে
চায় না। কেনার কথা বললেই আব্বু বলে,
একদিনের জন্য পাঞ্জাবি কিনে আমি
কি করবো? আমি তো ঘুরতেও যাই না
কোথাও তুমি একটা কিনে ফেলো।
বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবা ঈদে নতুন
পাঞ্জাবি না হইলে চলে নাকি?
শীতের সময় নতুন সোয়েটার না কিনে
বলে, আরেহ,আমার ঠান্ডা লাগে না।
শাকসবজি আব্বু অনেক প্রিয় মাংস
খেতে বললেই বলে, আমার একদম ভালো
লাগে না মাংস, মনে মনে আব্বু তখন
হিসেব কষতে থাকে, দেড়শো টাকা
দিয়ে কেনা মুরগি দিয়ে কয়দিন ছেলে
মেয়েকে খাওয়ানো যায়, সোয়েটারের
টাকা বাঁচিয়ে কিভাবে বাড়ী ভাড়ার
টাকাটা যোগাড় করা যায়, দিনে ২
কাপ চা, ও ২/৩ সিগারেট কম খেয়ে
কিভাবে কিছু টাকা সঞ্চয় করা যায়।
কিচ্ছু বুঝতাম না, কিচ্ছু না, স্কুল/কলেজ
লাইফে যখন সীমিত টাকার মধ্যে
নিজের মাসের খরচ ম্যানেজ করতে
হতো, তখন কিছুটা বুঝতাম আব্বুর কষ্টটা,
একটা ৫০০ টাকার নোট ভাঙ্গানোর পর
সেটা বাতাসে মিলিয়ে যেতে থাকে।
এক কাপ চা খাওয়ার আগেও চিন্তা
করতে হয়, ৫ টাকা খরচ করা কি ঠিক
হবে? রিকশা ভাড়ার ১০ টাকা
বাঁচানোর জন্য অনেকটা পথ হেঁটে
আসতে আসতে চিন্তাকরি, কোন
সাধারণ মানুষের পক্ষে এইভাবে সবকিছু
ম্যানেজ করা সম্ভব না আব্বু সাধারণ
কেউ না আব্বু ঐ সুপারম্যান কিংবা
ব্যাটম্যান এর চেয়েও অসাধারণ কেউ,
রোদ কিংবা বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে
মাথার উপর যে কেউই ছাতা হতে
পারে, কিন্তু বট বৃক্ষের মত শীতল ছায়া
যে কেউ দিতে পারে না। বটবৃক্ষ হয়ে
মাথার উপর থাকে "আব্বু" যতক্ষণ থাকে,
ততক্ষণ বুঝা যায় না তার মর্ম! মাথার
উপর থেকে ছায়া সরে গেলেই টের
পাওয়া যায়, কঠিন এই জীবনটা কেউ
একজন অনেক সহজ করে দিয়েছিল, জীবন
আসলে এতটা সহজ না। জীবন খুব কঠিন,
যার বাবা নাই, সেই বুঝে, সেই টের
পায়, প্রতি মূহুর্তে টের পায়। বিনম্র
শ্রদ্ধা সেই সকল মহান মানুষদের।
পৃথিবীর সকল বাবা ভালো থাকুক,
আকাশের উপরে কিংবা আকাশের
নিচে, যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক।