somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিতা হকের বাঙ্গালীয়ানা ও মরু সাম্রাজ্যবাদ

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবীন্দ্রসঙ্গীত
দিকপাল মিতা হক জেনে বা না জেনে
প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছেন- “যেখানে
একটু লোকজনের সমাগম বেশি, যেখানে
ওয়েটিং রুম আছে, লোকজন অপেক্ষা করছে,
সেখানে দেখি যে, একমাত্র আমিই বাঙালি। আমি
শাড়ি পড়ে গেছি আর আমার মাথায় ঘোমটা নেই।
আজকাল তারা এইটুকু মুখ বের করে রাখছে।
এতে তারা আর যাইহোক বাঙালি নয়।” আমি শাড়ি
পড়ে গেছি আর আমার মাথায় ঘোমটা নেই।
আজকাল তারা এইটুকু মুখ বের করে রাখছে।
এতে তারা আর যাই হোক, বাঙালি নয়।”
৭১ টিভিতে ‘সংস্কৃতিজনের রাজনীতি ভাবনা’
শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা
বলেছেন গত ০৯ আগস্ট। এ নিয়ে অনেকে
অনেক মতামত দিচ্ছেন, আমি ইসলামী আঙ্গিকটা
বলছি।
বিষয়টা হচ্ছে, চোখে ঘুলঘুলি রেখে বা শুধু
চোখ খোলা রেখে পুরো চেহারা ঢাকা।
সেটাকে বিকৃত করে ছাপিয়েছে কেউ কেউ,
সেটা আবার বোরখাবাদীরা ছড়াচ্ছে হু হু করে,
মিতা হক নাকি বলেছেন- “যারা মাথায় ঘোমটা দেয়
তারা আর যাই হোক বাঙালী হতে পারে না।” যারা
অতীত-বর্তমানে পেঁচিয়েছে কোরানের
আয়াত আর রসুলের বাণী, শরিয়া-ইমামদের মৃত্যুর
পর শরিয়া-কেতাবে ওই ইমামদের নামেই ঢুকিয়ে
দিয়েছে নিজেদের আইন, সিফফীন যুদ্ধ
থেকে শুরু করে পলাশী হয়ে সাম্প্রতিক হরতাল
পর্য্যন্ত কোরানকে করেছে রাজনৈতিক অস্ত্র,
নারী-নির্যাতন হালাল করেছে কোরান-রসুলের
নামে, তাদের কাছে মিতা হক কোন ছার! ওই
মারাত্মক অপরাধের শত শত সূত্র আছে এখানে।
মিতা হকের কথা সর্বাংশে সত্য। যারা চেহারা
ঢেকে রাখে তারা বাঙালীর ঐতিহ্য নষ্ট করে,
সে কারণেই তারা বাঙালী নয়। হাজার বছরে
সাধারণভাবে বাঙালী নারীর ঐতিহ্যে চেহারা ঢাকা
কোনদিনও ছিল না। তাঁরা মাথায় আঁচলটা টেনে
ঘোমটা দিতেন বিয়ে-নামাজ-আজানের সময় আর
গুরুজনদের সামনে, ব্যাস। এটাই প্রতিষ্ঠা করে
গেছেন, আমাদের শত শত হজরত শাহ জালাল, শাহ
মখদুম, শাহ পরান, নেক মর্দান, কত্তাল পীর,
দানেশমন্দ, বায়েজীদ বুস্তামী। তাঁরা প্রমাণ
করেছেন, বাঙালী নারীর ওই ঐতিহ্য সম্পূর্ণ
ইসলাম-সম্মত এবং তাঁরা কারো চেয়ে কম মুসলিম
নন।
তাহলে ওরা কারা? ওরা কারা যারা আমাদের ঐতিহ্য নষ্ট
করে নারীদের চোখে ঘুলঘুলি রেখে
কাপড়ের বস্তায় বন্দী করতে চায়? ওরা কারা যারা
আমাদের শত শত হজরত শাহ জালাল, শাহ মখদুম, শাহ
পরান, নেক মর্দান, কত্তাল পীর, দানেশমন্দ,
বায়েজীদ বুস্তামীদের দেয়া ইসলাম-সম্মত
ঐতিহ্য ভুলিয়ে দিতে চায়?
ওরা ধর্মের নামে মরু-সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের
স্থানীয় পদলেহী। আগে যুদ্ধ করে
সাম্রাজ্যবাদ হতো, যেমন ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি
করেছে ভারতবর্ষে। এখন হয় অর্থনৈতিক
সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিপতিরা নিউইয়র্ক-লন্ডন-দিল্লীতে
বসে চুষে খায় অন্য দেশের গরীবের রক্ত।
সেই সাথে আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে
মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদ, “ইসলাম” এর
লেবেল লাগিয়ে মরু-সংস্কৃতি রপ্তানি হচ্ছে
সাংস্কৃতিক উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদের
ধর্মভীরু অর্ধ শিক্ষিত জনগণের ওপরে ওই
লেবেলের প্রভাব গভীর। ওরা এতই উগ্র যে,
সেজন্য তারা স্বদেশীর ওপরে গণহত্যা-
গণধর্ষণ থেকে শুরু করে স্বদেশের গর্বের
ঐতিহ্য-সংস্কৃতি পর্যন্ত নির্মূল করতে প্রস্তুত।
উদাহরণ আমাদের একাত্তর। উদাহরণ পাকিস্তানের
জামাত, যে দাবি করেছিল হরপ্পা-
মহেঞ্জোদারো’র মত গর্বের ইতিহাস
স্কুলের সিলেবাস থেকে উঠিয়ে দেয়া
হোক। কারণ? কারণ “আমাদের ইতিহাস শুরু হইয়াছে
মক্কা মদীনা হইতে”- দি ডন, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৭।
আমাদের ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে উদাহরণ:- “হজরত
নূহের বংশধর ‘বঙ্গ’-এর নামানুসারে আমাদের
দেশের নাম বঙ্গ……নৃতাত্ত্বিক দিক দিয়া বাঙালিরা
আরব, কারণ বাঙালীর পূর্বপুরুষ
আরবী…..আরবী আল্লাহর ভাষা”-ইনকিলাব, ১২
নভেম্বর ২০০৭, ২৫ জুন ২০০৮, ০৯ মে ২০১১
ইত্যাদি। পৃথিবীতে আর কোনো ছাপ্পানো
হাজার বর্গমাইল এত মীরজাফরের জন্ম দেয়নি।
বাঙালী গর্বিত দাঁড়িয়ে আছে তার বিপুল সাংস্কৃতিক
বৈভবের ওপরে, মুরুভূমিতে সে এতিমের মত
আত্মপরিচয় খুঁজে বেড়ায় না। বাঙালীর আবেগ
ছলকে ওঠে বর্ষবরণ, বর্ষাবরণ, ফাল্গুনী
উৎসবে, নবান্নে আর নৌকা বাইচে, একুশের
ভোরে নগ্ন পদের পুষ্পার্ঘে। বাঙালীর
রক্তে টান পড়ে কবিগান গম্ভীরায় আর যাত্রা-
পালায়। মায়াময় বাঙালী উৎসবগুলো কোনোদিন
পালন করেছে ওরা? পালন করেছে নববর্ষ কিংবা
গেছে রমনার বটমূলে? যায় তো নি-ই বরং বোমা
মেরে নিরপরাধ মানুষ খুন করেছে রমনায় আর
উদীচী’র অনুষ্ঠানে। দুনিয়ায় আর কোনো
জাতির এই বিভৎস সমস্যাটা নেই। ধর্মীয় যে
সাম্রাজ্যবাদের হিংস্র থাবা থেকে বুকের রক্ত
ঢেলে আমাদের বাঙালিয়ানা রক্ষা করতে হয়, তার
ধারক-বাহকেরা বাঙালী হয় কি করে?
এমন ছিল হিন্দু ও খ্রিস্টান রাজত্বেও। “নারী শক্তির
আধার, নারীকে গৃহবন্দী করিয়া রাখ নতুবা তাহার
শক্তিক্ষয় হইবে” – এই জাতীয় ঠকবাজীতে
মনু’র আইন ভরা। আমরা কতবার বলেছি রসুলের
সময় নারীরা যুদ্ধ করেছেন, বিবি আয়েশা জামাল
যুদ্ধক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন, হজ্বে
কোনদিনও নারীর মুখ ঢাকার রেওয়াজ ছিল না,
এখনো নেই, কে শোনে কার কথা!
যে নারীরা ওই অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন
তাঁদের এয়ারপোর্টে, পাসপোর্ট অফিসে,
ড্রাইভিং লাইসেন্সে, হেলথ কার্ডে, আদালতে
সরকারী অফিসে হেনস্থার দাযিত্ব বোরখা-
নেতারা নেবেন? বোরখা ক্রিমিন্যালদের রক্ষা
করে। পাকিস্তানে লাল মসজিদের জিহাদী
ক্রিমিন্যাল বোরখা পড়ে পালাতে গিয়ে ধরা
পড়েছে, ওটা পড়ে ডাকাতির উদাহরণও আছে,
সে দায়িত্ব নেবেন তাঁরা?
সর্বনাশের দোরগোড়ায় এসে ঠেকেছে
বোরখাবাদীদের স্বপ্নরাজ্য সৌদি আরব। আঁৎকে
উঠে পুরো সৌদি জাতির অন্তরাত্মা কেঁপে
গেছে ওদেরই টিভি-তে ওদেরই গবেষণা
দেখে। জাতিকে মহাবিপদসংকেত দিয়েছেন ড :
ইনাম আল রুবাই, প্রেসিডেন্ট, চিলড্রেন স্টাডিজ,
আর্মড ফোর্সেস হাসপাতাল, জেদ্দা – তাঁর “স্টাডি
অফ অফিস অফ সোসিয়েটাল সুপারভিশন”-এ।
ওখানে আজ ২৩% শিশুরা আত্মীয় দ্বারা ধর্ষণের
শিকার, রিয়াদ-এ ৪৬% ও জেদ্দায় ২৫% তরুণ-তরুণীরা
সমকামী। এখানে সেটা দেখে নিন। http://
www.youtube.com/watch?v=eqZLrtpp9t0
ইসলামের নামে শয়তানের ওই বিজয় কেতন
আমরা এ দেশে কিছুতেই ঢুকতে দেব না।
জাতিকে ওদের চেয়ে হাজার গুণ ভালো
রেখেছেন আমাদের নারীরা ইসলাম
প্রচারকদের দেয়া ইসলাম পালন করে, তাঁদের
অজস্র ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×