একদিন ফোন করে বললেন; নাবিক ভাই, ঢাকায় মেয়েদের জন্য একটা ভোকেশনাল মাদ্রাসা করবো। আপনার হেল্প লাগবে। আমি রাজি হয়ে গেলাম।
উনাকে প্রশ্ন করলাম মেয়েদের জন্য ভোকেশনাল মাদ্রাসার আইডিয়া এই প্রথম শুনলাম। এ আইডিয়া কই পেলেন?
বললেন; "অনেকদিন পর দেশে গেলাম। আমাদের বাড়িতে এক মহিলা প্রায় পনের বছর কাজ করে। কথায় কথায় উনাকে জিজ্ঞেস করলাম। নামাজ পড়েনতো? উনি বললেন, "আমাদেরকে নামাজ পড়া কে শেখাবে। সেই ছোট বেলা থেকেইতো মানুষের বাড়িতে ঝি এর কাজ করি। সবাই কাজ চায়। নামাজ রোযা শিখার সময় কই?"
কথাটা সালাউদ্দীন ভাইয়ের মনে খুব দাগ কাটলো। উনি তার বাড়িতেই গ্রামের গরিব মেয়েদের জন্য অস্থায়ী স্কুল চালু করলেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল অন্য জায়গায়। কোন মেয়েই পড়তে আসেনা। কারণ দরিদ্র হওয়ায় তাদের কাজ করে খেতে হয়। স্কুলে আসলে কাজে যাওয়া হয়না। তাই স্কুল বাদ। ক্ষুধার জ্বালা মেটানো আগে।
সালাউদ্দিন ভাইও নাছোরবান্দা। তিনি তার গ্রামের গরীব মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলবেনই। নিলেন উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। ঢাকার অদূরে মুন্সিগন্জে নিজ পৈতৃক ভিটায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার ডলার ব্যয়ে মেয়েদের জন্য দেশের প্রথম ভোকেশনাল মাদ্রাসা প্রতিস্ঠার উদ্যোগ নিলেন।
পুরো প্রজেক্টকে চারটা ধাপে ভাগ করলেন।
২০০৮ সালের জানুয়ারীতে প্রথম ধাপ সম্পন্ন করে ৫০ জন গরীব মেয়েকে নিয়ে ভোকেশনাল আবাসিক স্কুলটি চালু হবার পরিকল্পনা হল।
সালাউদ্দীন ভাই দিনের পর দিনের মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরলেন। পৈতৃক ভিটা দান করে দিলেন স্কুলটির জন্য। টরন্টো, মন্ট্রিয়াল, অটোয়া চষে বেড়ালেন সাহায্যের জন্য।
অবেশেষে স্বপ্ন সত্য হলো। গত ৪ তারিখে স্কুলটির যাত্রা শুরু হল। ছবিতে সে সব মেয়েদের দেখা যাচ্ছে যারা কোন দিন স্কুলে পড়ার কথা ভাবতেও পারেনি। যারা ভেবেছিল, অপরের বাসায় ঝি এর কাজ করেই কেটে যাবে তাদের জীবন। সেই সব কচি মুখগুলোর দিকে একবার ভালোভাবে তাকিয়ে দেখুন, অযুত স্বপ্ন তাদের চোখে মুখে।
সালাউদ্দীন ভাই স্বপ্নহীন এ সব শিশু-কিশোরীদের চোখে-মুখে স্বপ্ন বুনে দিতে পেরেছেন। আয়োজন করেছেন তাদের পরিচর্যার।
এদের পড়াশোনা, থাকা খাওয়া, পোশাক সব কিছু স্কুল ব্যবষ্থা করবে। শেখাবে কম্পিউটার, সেলাই, হাতের কাজ ইত্যাদি। শিক্ষার আলো হতে ছিটকে পড়া শত জীবনকে করে তুলবে শিক্ষিত ও আত্মনির্ভরশীল।
সালাউদ্দীন ভাই এর পক্ষে এ কাজ একা করা খুবই দূরূহ। আপনার সহযোগিতা তাই সবসময় কাম্য। বছরে মাত্র ১৮০ ডলার খরচ আপনিও হতে পারেন একটি মেয়ের গর্বিত স্পন্সর। দিনে মাত্র ৫০ সেন্টস যদি সেভ করেন তা বদলে দিতে পারে একটি জীবন।বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন সেন্টারের ওয়েব সাইট http://www.aiwvc.com/Default.asp
কবি বলেছেন,
"আমার দেশে সেই ছেলে হবে কবে?
কথায় বড় না হয়ে কাজে বড় হবে।"
সালাউদ্দীন ভাই তেমনি একজন, যিনি কথায় নয় কাজের মাধ্যমে বড় হয়ে উঠেছেন।
আসুন না আমরাও হই তার সহযোগী। অন্তত: একটি মেয়ের স্পন্সর হোন। তাকে শিক্ষিত ও আত্মনির্ভরশীল হতে সহায়তা করুন।