- দোস্ত মেয়েটাকে দেখছিস..?? দেখ কত্ত কিউট মেয়েটা
- কই...??
- ওই যে সামনে দেখ
- পিচ্ছি মেয়েটা....?
- হু, দেখ তার হাসি গুলো কি চমৎকার এবং মিষ্টি।
- হু, অনেক কিউট ।
- কে জানে কার জন্য না সৃষ্টি হয়েছে মেয়েটা ।
একটি দীর্ঘশ্বাস!
সায়েদাবাদ থেকে বাসে করে গ্রামে ফেরার পথে, বাসেই দেখা মেয়েটির ছোট্ট মনোমুগ্ধকরা হাসি মাখা মেয়েটির সাথে । প্রথম দিকে চোখে পড়েনি, মেঘনাসেতুতে বাস উঠার পূর্বমুহূর্তে প্রথম চোখে পড়ে, পাশের সিটে বসা বন্ধুর ডাকে । তাকিয়ে দেখি.. হ্যাঁ , তিন সিট সম্মুখে দাড়িয়ে বাইরে কিছু দেখার চেষ্টা করছে মেয়েটি। বয়স ! সাত থেকে আট বছর হবে, চেহারায় এতোটা লাবণ্যময় যে কেউ দেখে মায়ায় পড়বে । আর পিচ্ছি ছেলে মেয়ে গুলোর মাঝে সৃষ্টিকর্তা এক অদ্ভুত মায়া জড়িয়ে দিয়েছেন, যে মায়ায় হৃদয়হীনা মানুষগুলোও জড়িয়ে ফেলবে নিজেকে ।
মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আমিও অবাক! মেয়েটি গ্রামে ফিরবে , কাজিনদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠবে, আমের ভর্তা বানিয়ে খাবে ,পুকুরে নেমে পানি ছোড়াছুড়ি, এবং আরও কত কি , হয়তো এমন কিছুই ভাবছে মেয়টি, সে জানে না একদিন তাকে বড় হতে হবে, জীবন ধারা বদলাতে হবে।
সৃষ্টিকর্তার দেওয়া জীবনচক্র নিয়ে একটু ভাবতে ইচ্ছে করে, এই পিচ্ছি মেয়েটি একজন মায়ের গর্ভে জম্মেছিলো , তার মা ও একদিন ছোট ছিলো , অনেক ছোট। হয়তো কোনো একদিন পাবলিক বাসে যাতায়াত করেছিলো, উচ্ছাসিতভাবে দাড়িয়ে বাহিরে দেখার চেষ্টা করেছিলো , চঞ্চলা ছিলো, হয়তো সমবয়সী ও সহপাঠীদের মাতিয়ে রাখতে ব্যস্ত ছিলো। কিন্তু এখন আর তার সেই সময় নেই , বাসে দাড়িয়ে বাইরে দেখার কোনো ইচ্ছে নেই , নেই আগের সেই চঞ্চলতা, হাতে সময় নেই সমবয়সীদের সময়দেওয়ার। ব্যস্ত এখন সে, অনেক ব্যস্ত । সে এখন একজন মা, সন্তান ,স্বামী আর সংসার নিয়েই ব্যস্ত সে। অনেক ত্যাগ স্বীকার করে সে, অনেক ত্যাগ, ভুলে যায় একসময় সে ও বাচ্ছা ছিলো। তার এখন অনেক দায়িত্ব, সন্তানদের মানুষকরে গড়ে তোলা, স্বামীর পরিবারের মানুষদের মন রক্ষাকরে চলা, হাজারো ইচ্ছে আকাঙ্ক্ষা বিসর্জন দিয়ে সুখী পরিবার গড়ার দায়িত্ব নিজ কাঁধে বহন করা। সন্তানদের জন্য আরও কত কিনা করা, অসুস্থ হলে সারাক্ষণ চিন্তে আর সন্তানের সেবায় ডুবে থাকা , রাতগুলো জেগে থাকা।
যে মেয়েটির কথা বলেছিলাম, সে ও আজ অনেক ছোট, এখনো হয়নি তেমন বুঝার ক্ষমতা। তার এখনো জানা হয়নি সামনে তার জন্য অপেক্ষামান ত্যাগ বিসর্জনে ঘেরা ভিন্নতর এক ফিউচার। আজ সে অনেক ছোট , সৃষ্টিকর্তার বিধান অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে সে বড় হতে থাকবে, পদাপর্ণ করতে হবে বয়ঃসন্ধিতে, প্রথম দিকে হয়তো খুব ভয় পাবে সে, কিন্তু এক সময় স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বয়ঃসন্ধিতে হয়তো হাবুডাবু খাবে কোনো এক বালকের প্রেমে, বিধাতার লিখনি যদি থাকে হয়তো সে, বয়ঃসন্ধিতে আসা বালকটিকেই জীবনসঙ্গী রূপে পাবে। বিধাতার লিখনিতে না থাকলে তা ভিন্ন কথা ।
সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করবে, একটি ত্যাগে ভরপুর সুন্দর ভবিষৎ, দায়িত্ব নিতে শিখবে। একদিন এই বাচ্চা মেয়েটিও মা হবে, সন্তান যাতে কষ্ট না পায় রাত গুলো কাটিয়ে দিবে বিনিদ্রাতে, লেগে থাকবে সর্বদা সন্তানকে বড় করতে। তার হাত ধরে গড়ে উঠবে একটি সুন্দর পৃথিবী । অথচ সে এখনো অজ্ঞাত তার জন্য অপেক্ষামান ভবিষৎ নিয়ে।
সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিগুলো সত্যিই অসাধারণ, তার বিধান গুলোও । কত নিখুত ভাবে সাজিয়েছে মানুষের জীবন চক্র .. বাচ্চা থেকে বালক-বালিকা, ক্রমান্বয়ে.. কিশোর-কিশোরী , যুবক-যুবতী একসময় বাবা-মা, দায়িত্ব নিতে শেখা, এরপর তাদের ঘর থেকে জম্মনেওয়া সন্তানদের বেলায় ও অনুরূপ । জীবনচক্র ঘূর্ণমান , অবিরাম ভাবে চলতেই থাকে এবং চলবে যতদিন পৃথিবী আছে।
#চাইরচোখ