গত ৫ই মার্চ ৪বছর প্রবাস জিবন কাটিয়ে দেশে গিয়েছিলাম। বড়ভাই দেশে আসছে তার বিয়ে পাকাপাকি হয়ে আছে বছর খানেক আগে থেকেই। এবার বড় ভাই আসলেই বিয়ে হয়ে যাবে।
গেলাম দেশে,গিয়ে দেখি আমার জন্য পাত্রী দেখতে আগ্রহি সবাই। প্রথমে বাধা দিয়েছিলাম পরে মেঘে মেঘে বেলা কম হলনা ভেবে রাজি হয়ে গেলাম।
শুরু হল পাত্রী দেখা। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম। বাবা মা যাকেই দেখেন তাকেই পছন্দ করে বসেন। কিন্তু আমার পছন্দের ধারে কাছেও কাওকে পাইনা। এভাবে বেশ কয়েকটা মেয়ে দেখার পর আমাদের বাড়ির সবার একটা মেয়েকে পছন্দ হল। এবার আমার দেখার পালা। আমার সাথে দুলাভাই ছোটভাই আর এক ভাবিকে নিয়ে একদিন গেলাম মেয়ের বাড়ি মেয়েকে দেখার জন্য।
এখানে বলে রাখা ভাল আমার বাড়ির লোকজন মেয়ের রুপ গুনের এত প্রশংসা করেছে যে আমি মেয়েটেকে পরী টাইপের কিছু ভেবে রেখে ছিলাম। কিন্তু মেয়েকে দেখে আমার ভুল ভাংল, তবে মেয়ের গায়ের রং খুব ফর্সা। খুব একটা অপছন্দও হয়নি। বাড়ির সবার পছন্দের কথা ভেবে হ্যা বলেদিলাম। আগের থেকেই খুজখবর নেয়া ছিল তাই একলাফে পাত্রী পক্ষ দিন তারিখ ঠিক করতে চাইল। আমাদেরও কোন আপত্তি ছিলনা। সপ্তাহ খানেক পর মেয়ে পক্ষ আমাদের বাড়ি আসবে বিয়ের তারিখ দেয়ার জন্য। এরই মাঝে আমার ছোট ভাইয়ের নাম্বারে মেয়ের (আমার হবু বউ) কল আসল, আমার সাথে কথা বলতেচায়। আমি আমার নাম্বার থেকে ফোন করলাম মেয়ের নাম্বারে।
আমি: হ্যালো আপনি আমাকে ফোন করতে বলেছিলেন?
সে: জ্বী, আপনি এখন কোথায়?
আমি: আমি ঢাকায় রিক্সায় বসে আছি।
সে: আপনি এখন আমার সাথে কথা বলতে পারবেন?
আমি: জরুরি কথা না হলে বলতে পারব।
সে: জরুরি কথা।
আমি: তাহলে সমস্যা হবে,আমি রাস্তায় লম্বা সময় নিয়ে কথা বলতে পারিনা।
সে: আচ্ছা বাসায় গিয়ে কল দিবেন।
আমি: আচ্ছা।
বাসায় আসতে আসতে রাত ৮টা হয়ে গেল। ৯টার দিকে কল দিলাম। বিয়ের আগে কয়েক দিন চুটিয়ে প্রেম করব তাই তার নাম্বারটা ছোটভাইকে দিয়ে এফ এন এফ করে নিলাম। প্রথম হাসি ঠাট্টার পর আমাকে যা বলল।
সে: আপনি আমাকে একটু সাহায্য করবেন?
আমি: কি সাহায্য?
সে: আমি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছিনা, আপনি বিয়েটা ভেঙ্গেদেন।
আমি: বিয়ে করবেন না কেন?
সে: আমি আরো লেখা পড়া করব।
আমি: বিয়ের পর করবেন।
সে: না।
আমি: তাহলে বিয়েটা আপনি ভাঙ্গেন, আমি পারব না।
সে: আপনি আমার সাথে কাল দেখা করতে পারবেন?
আমি: পারব কিন্তু কোথায়।
সে: আমার স্কুলে(সে কিন্ডার গার্ডেনের শিক্ষিকা)।
আমি: স্কুলে পারবনা। তবে তার পাশেই আমার চাচাত বোনের বাড়ি সেখানে পারব।
সে: আচ্ছা।
আমার বিশ্বাষ হচ্ছিলনা। মেয়েটা বিয়ে আসলেই ভাঙ্গতে চায়।
আমি ভেবেছি আমার শাথে দেখা করতে চায় আমাকে ভাল করে দেখার জন্য।
পরদিন আমি সাজু গুজু করে আমার বোনের বাসায় হাজির। প্রায় ঘন্টা খানেক পর মেয়েটা হাজির হল। আমরা কথা বলছি। সেই একই কথা, মেয়েটা চাইছে বিয়ে ভাঙ্গতে আমি চাইছি গড়তে।
সব কথা মিলিয়ে মেয়েটার বক্তব্য
সে আরো লেখা পড়া করতে চায়। বিয়ের পর লেখা পড়া হয় না, আমাকে এখন বিয়ে করলে তার স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যাবে। তাদের বাড়ির লোক আমাকে এত পছন্দ করেছে যে, এখন সে বিয়ে ভাঙ্গতে পারবে না। এমন কথাতে সবাই ভাবতে পারে অন্য কারো সাথে তার সম্পর্ক আছে, কিন্তু এসব কিছুই নেই।
তার পরও আমি যদি তাকে বিয়ে করি তাহলে আমি তার চোখে অপরাধী হয়ে থাকব।
কি আর করা বিয়ে ভাংতেই হবে। আমি তাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, কোন লাভ হল না। আর জোরকরে বিয়েও করতে চাই না। রাতে বিয়ে ভাংগার খবর পেয়ে যাবেন। এই বলে আমি বাড়ি চলে আসি। এবং বাড়িতে এসে বলি।
আমি: মেয়ে আমার পছন্দ হয়নি। আমি ঐ মেয়েকে বিয়ে করব না।
মা: সেদিন যে বললি পছন্দ হয়েছে।
আমি: সেদিন ভাল করে দেখতে পাইনি। আজ ভাল করে দেখেছি।
মেয়ে পছন্দ না হলে এই বিয়ে হতে পারে না।এই বলে আমার বাবা বিয়ে ভেংগে দিলেন।
রাত ৯টার দিকে আমার মোবাইলে কল করে বিয়ে ভাংগার সংবাদ পেয়েছেন মেয়েটি আমাকে খুশীতে বাকবাকুম হয়ে খবরটা দিলেন।
রাতে ফোন বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরলাম সকালে ঘুমথেকে উঠে ফোন চালুকরেই দেখি সেই মেয়ের ৩২ টা মিসকল (আমার মিসকল এলার্ড চালু ছিল)। এবং ফোন অন করার ২ মিনিটের মাঝেই কল পেলাম। মেয়েটি হাসতে হাসতে বলল।
কাল বিয়ে ভাংগার খবর পেয়ে তাদের বাড়ির সবাই আমাদের গোষ্টি উদ্ধার করছে। মাঝে মাঝে তকে সান্তনা দেবার জন্য নানান কথা বলছে, যেমন ছেলেটা ভাল না, ছেলেটার সাথে নিশ্চই কার সম্পর্ক আছে, এমন ছেলেকে বিয়ে করলে সারা জিবন কষ্ট পেতে হত। এবং সে গোমরা মুখকরে মন খারাপের অভিনয় করছে। আগামি ২ বছর সে বিনা ঝামেলায় পড়ার অনুমতি পেয়ে গেছে।
এভাবে প্রায়ই আমাদের কথা হত। কয়েক দিন পরের কথা আমার জন্য আবার মেয়ে দেখা শুরু হয়েছে। মেয়ে পছন্দ হচ্ছে না। এক দিন আবার সেই মেয়েটির কল। এবার মেয়েটি যা বলল তাতে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।
মেয়েটি নাকি আমাকে ভাল বেশে ফেলেছে ,আমাকে বিয়ে করতে চায়।
আমি: আপনার লেখা পড়া?
সে: আপনি না চাইলে করব না।
আমি: আগে বিয়ে ভাংলেন কেন?
সে: আপনার প্রতি ভাল লাগাটা তখন ছিল না।
আমি: কিন্তু আমি বাড়িতে বলেছি আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি।
সে: এখন সব খুলে বলুন।
আমি: আমার বাবা অনেক রাগি মানুষ, আমার জন্য একবার অপমানিত হয়েছে আবার কিছু বললে আমাকে মেরেই ফেলবে।
সে: আমি তার সাথে কথা বলি?
আমি: না। তাছারা আমারতো আপনার প্রতি ভালবাসা হয়নি।
আপনি এতদিন পর আমার মাঝে কি পেলেন?
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৫:১৫