০১
খুব সহজ করে কিছু কথা বলতে চাই । আমরা সামহোয়্যার ইন ব্লগ বা সামুর সাধারণ ব্লগার। গত মঙ্গলবার দুপুরের ইভেন্ট থেকে শুরু হওয়া এবং পরবর্তীতে সারা দেশে গণআন্দোলনে রূপ নেয়া এই জাগরণের সাথে প্রথম থেকেই আছি সশরীরে। আজ ৯ ফেব্রুয়ারি , সন্ধ্যা ০৭.০১.৫২ টায় বাংলানিউজ২৪ এ দেখা যায় এক বিভ্রান্তিসৃষ্টিকারী পোস্ট , যার শিরোনাম – “শাহবাগ নিয়ে বিতর্কিত ভূমিকায় সামহোয়্যার , নজরদারি ”। জনৈক সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এর করা এই সংবাদে এমন সব মিথ্যা, একপেশে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য ছাপানো হয়েছে যা প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে সামহোয়্যার ইন ব্লগ এর নামে বিভ্রান্তির এবং সন্দেহের জন্ম দিতে পারে। তাই অপচেষ্টার বিরূদ্ধে দাঁড়াতেই আমাদের এই পোস্ট , এবং আমরা শাহবাগের এই জাগরণের শুরুর সময় থেকে এখন পর্যন্ত চলমান এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী। ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয়ে , সামহোয়্যার ইন ব্লগের ব্লগার হয়ে , এই আন্দোলনের স্লোগানে মিশে যেতে পেরে আমরা গর্বিত।
০২
এই রিপোর্টের শুরুর দিকেই বলা হয়েছে –
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের চলমান আন্দোলনেরও ‘কৌশলে’ বিরোধিতা চলছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই ব্লগসাইটে।
সামহোয়্যার ইন ব্লগ যে শুধু বৃহত্তম বাংলা ব্লগ তাইই নয় এটি হচ্ছে প্রথম বাংলা ব্লগ, প্রথম বাংলা ভাষায় লেখার কম্যুনিটি ব্লগিং এর পথিকৃৎও সামহোয়্যার ইন। এখানে ইউজারও তাই সবচেয়ে , স্বাভাবিকভাবেই এখানে কোন জনমত বা প্রচারণা চালানো হলে সবচেয়ে বেশী মানুষের কাছে পৌছে যায় ! ফেসবুক ব্লগার এন্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়র্ক এর শুরু করা প্রহসনের রায়ের বিরূদ্ধে প্রতিবাদের ইভেন্ট লিংক থেকে যে জমায়েত হয় সেখানে সামুর অনেক ব্লগারই ছিল। এবং সেদিন অর্থ্যাৎ ৫ ফেব্রুয়ারি , ৯টা ৪১ মিনিটে ব্লগার অন্যমনস্ক শরৎ এর “ রাজাকারের ফাঁসির দাবীতে গর্জে উঠেছে বাংলাদেশ: চল চল শাহবাগ চল” পোস্টটি আসে , যেটি স্টিকি হয় । এবং পরবর্তীতে নিয়মিত এর আপডেট হতে থাকে। এবং জাগরণের পর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার পোস্ট এসেছে এই জাগরণের , এই আন্দোলনের পক্ষে। তাই “কৌশলে” শব্দটিকে ব্যবহার করে কৌশলীভাবেই বাংলানিউজের রিপোর্ট উপস্থাপিত হয়েছে ।
এই রিপোর্টে কোন নির্ভরযোগ্য সূত্রের ব্যবহার তো করা হয়ই নি , বরং বারংবার “দায়িত্বশীল সূত্র বাংলানিউজকে এ তথ্য জানায়” , “জানা গেছে” এবং “সূত্র জানায়” এ ধরনের নামহীন, বিশ্বাসযোগ্যহীন সূত্রকে মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের এই অনলাইন পত্রিকার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক ।
এই বিষয়ে মতামত নেয়া হয়েছে অমি রহমান পিয়াল এর কাছ থেকে , যিনি এখন আমার ব্লগের সার্বক্ষণিক ব্লগার। সামুর একসময়ের লিজেন্ডারি এ টিম এর এই সদস্য এখন সামুর উপর এতটাই বীতশ্রদ্ধ যে তিনি আর সামুতে ভালো কিছুই দেখতে পান না ! এমনকি স্টিকি পোস্ট ও তার কাছে মনে হয় খেলার চাল । সেলুকাস, অমি পিয়াল, এই বিভক্তি আর দ্বিধাগ্রস্থতাই আমাদের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে , নিজেদের অবস্থান জানানোর জন্য সামহোয়্যার ইনের কোন মডারেটর এর সাথে কথা বলার আদৌ প্রয়োজন মনে কী করেন নাই প্রতিবেদক ? তাই এই সংবাদের নিরপেক্ষতা আর স্বচ্ছতা কোথায় থাকে?
রিপোর্টের শেষে এমন কিছু পোস্টের শিরোনাম এসেছে , যেগুলো এই গণজাগরণকে অন্যভাবে দেখে । কিন্তু ঐসব পোস্টে যে সামুর সাধারণ ব্লগাররা বিরোধীতা করে চলেছেন এবং এই আন্দোলন নিয়ে , কাদের মোল্লার আর রাজাকারদের ফাঁসির বিরূদ্ধে আরো অংসখ্য পোস্ট আছে , সেগুলোর কোন উল্লেখই নেই ! এছাড়াও এই আন্দোলনের শুরুর দিকে সামুর অনেক ব্লগার কাজ করেন যাচ্ছেন , সে ব্যাপারটিও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এই রিপোর্টে পরিবেশিত ভ্রান্ত তথ্যগুলোর বিরূদ্ধে প্রতিবাদ জানাই ।
০৩
সামুর ব্লগার হিসেবে ঐ রিপোর্ট এর অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরার পরে দেখা যাক, সামুর নিজেদের দূর্বলতা নিয়ে । প্রশ্ন আসুক , কেন এই ধরনের রিপোর্ট আসার সুযোগ পায় ???? কারণ এই ধরনের প্রশ্ন তোলার সুযোগ সামহোয়্যার ইন ব্লগ তথা এর কর্তৃপক্ষ ক্রমাগতভাবে নিজেরাই করে দিয়েছে ।
মডারেটরদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা না বললেই না , সেটা হচ্ছে আপনাদের শক্ত অবস্থানে না যাওয়া এবং কঠোরভাবে স্বাধীনতাবিরোধী পোস্টগুলোকে দমন না করার জন্যেই এমন একটা একপেশে সংবাদ আসে , যেখানে সামুকে স্বাধীনতাবিরোধীদের খামার হিসেবে দেখানো হয়। এই পোস্টের উদ্দেশ্য আপনাদের দূর্বলতাকে দেখানো না , শূকরদের সাথে সামুর সাধারণ ব্লগাররা যে থাকতে চায় না , সেটাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো । আর কতবার প্রশ্নের সম্মুখীন হলে আপনাদের ঘুম ভাংবে ? আর কতবার নিজেদের সামুর পরিষ্কারকের ভূমিকার সামুদের সাধারণ ব্লগারদের নামতে হবে ?
কদিন আগেই সামুতে মডারেটরদের কঠোর অবস্থানের দাবীতে , স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরূদ্ধে ক্রমাগত লড়ে যাওয়া ব্লগাররা যেমন - প্লিওসিন অথবা গ্লসিয়ার , তন্ময় ফেরদৌস , কল্পবিলাসী স্বপ্ন , চেয়ারম্যান ০০৭, সাকিন ইভান এবং আরো অনেকে ( সবার নাম দিতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ) একসময় অতিষ্ট হয়ে তাদের সন্তানসম পোস্টগুলো ড্রাফট করা শুরু করে। দিনের পর দিন , রাতের পর রাত সামুতে কাটানো সময় , ক্রমাগত লড়ে যাওয়া এসব ব্লগারদের ক্লান্তির একটা সীমা আছে ।
কিন্তু ঐ গণড্রাফট এর সময়ের দাবিতেও কর্তৃপক্ষ কোন সন্তোষজনক জবাব দেয় নাই , তাদের অবস্থান যে কঠোর এই আশ্বাস দেয় নাই । তাদের সেই গতবাঁধা বুলি – “ রিপোর্ট করুন , রিপোর্ট করুন” বলেই তারা তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন । অথচ এটা তাদের দায়িত্ব যে নিজ তাগিদে যেসব স্বাধীনতাবিরোধী পোস্ট আছে , সেগুলোকে বিনা নোটিসে ব্যান করে দেয়া। কিন্তু এমনটা হয় না, তাদের নমনীয় মনোভাব নাকি অন্ধদৃষ্টির কারণে , সেটা আমাদের অজানা।
প্রায়ই কোন ধরনের জামাতি- শিবিরদের উলটাপালটা প্রপাগ্রান্ডার পরে ব্লগাররা যখন এইটা নিয়ে প্রতিবাদী পোস্ট দেন, সেখানে প্রতিবার কর্তৃপক্ষ এসে বলেন, তারা মডারেটর সীমাবদ্ধতার কথা, সারাদিন মডারেটর না থাকার কথা ! ঠিক কত এইটাইপ প্রতিবেদন আসার পর তাদের এই মডারেটর সংখ্যার সীমাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান হবে, এর কি কোন উত্তর আছে ?
যেখানে সামুর ইউজার সবচেয়ে বেশী , এলেক্সা র্যাংকিংয়েও তরতরিয়ে এগুচ্ছে সামু , সেখানে এইধরনের সীমাবদ্ধতার কথা বলে নিজেদের দূর্বলতা ঢাকার চেষ্টা আরো বড় দূর্বলতা নয় কি ? সামহোয়্যার ইন ব্লগ তাদের মডারেটর এর সংখ্যা বাড়িয়েই হোক কিংবা সময় দেয়ার সীমাবদ্ধতার কথাতেই হোক না কেন , সমাধান সম্ভব হবে শুধুমাত্র তাদের সদিচ্ছার উপরে।
তাদের চোখের ঠুলি খুলে যাক , জামাত শিবিরদের বিরূদ্ধে, তাদের অবস্থান হোক অনমনীয় এবং কঠোর , এবং আর কোন এমন বাংলানিউজের সংবাদ সামুকে খোয়াড় বলা হোক , আমরা সত্যিই তা চাই না । কারণ শূকরদের সাথে সহাবস্থান আমাদের সম্ভব নয় ।
০৪
এই প্রশ্নের উত্তরের স্বচ্ছ জবাব পাওয়া গেলেই বাংলানিউজ এবং অন্যান্য মিডিয়ার এমন একপেশে প্রতিবেদন বন্ধ হবে ! এইরকম কোন পোস্টও আমাদের লিখতে হবে না !
পুরানো আশ্বাস অনেক শুনেছি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে , মাত্র দুইটি নতুন কথা শুনতে চাই -
এক , মডারেশন প্যানেলে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে। যেন স্বাধীনতা বিরোধী পোস্ট একদমই না থাকতে পারে ব্লগে । এবং তারা কঠোরভাবে মডারেশন নীতিমালা
দুই , জামাত শিবির পোস্ট সরাসরি ব্যান ডিলিট হবে সামনে থেকে । আলাদা করে রিপোর্ট করার যেন প্রয়োজন না হয় ।
এই দুটো কথা বলার মত সৎসাহস কী সামু কর্তৃপক্ষের হবে ?