গত ঈদে ইচ্ছে থাকলেও দেশে যেতে পারিনি। পরে ২২ অক্টোবর ম্যানিলা থেকে রওনা হলাম। মালয়েশিয়া পৌঁছে কয়েকজন বাঙালি যাত্রী পেলাম। তাঁদের সবার একটাই আলোচনা ২৫ অক্টোবর দেশে কী হতে যাচ্ছে। বেশিরভাগ বাঙালি যাত্রী অনেক অনেক দিন পরে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরছেন। যেখানে তার পরিবার নিয়ে ভাববার কথা, সেখানে তারা উল্টো ভাবছে দেশ নিয়ে। সবাই উদ্বিগ্ন দেশ নিয়ে।
রাত দশটার কিছু পরে বিমান ঢাকায় অবতরণ করল। ইমিগ্রেশন শেষ করে অধীর আগ্রহে আমরা সবাই নিজ নিজ ব্যাগের অপেক্ষায়। যারা দূরবর্তী জেলার তাদের কাউকে কাউকে হোটেলে থাকতে হবে। আগে থেকে বুক করা হোটেল থেকে আমাদের বার বার তাগাদা দিয়ে রেখেছে রাত ১২টার আগেই হোটেলে পৌঁছার জন্য। ভ্রমণের সমস্ত কাগজ থাকা সত্ত্বেও নাকি বিপদে পড়তে হতে পারে। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টার ঘর ছুঁই ছুঁই কিন্তু ব্যাগ আসছে না। অবশেষে হোটেল গেটে যখন পৌঁছলাম তখন রাত ১টা পার হয়েছে। অনেক অনুরোধের পর হোটেলের দরজা খুলে দিল।
পর দিন সকালে রওনা দিলাম নাটোরের উদ্দেশে। যেখানে অধীর অপেক্ষায় আছে আমার আপনজনেরা। যথারীতি বাড়ি পৌঁছলাম। ভাবলাম আমি এখন নিশ্চিন্ত। কিন্তু ২৫ তারিখের কথা ভেবে আমার পরিবার জুড়ে আতঙ্ক।
অবশেষে মেঘ ভেঙ্গে বৃষ্টি এল, কিন্তু শান্তির নয়। হরতালে ককটেল বৃষ্টি। পোড়া গাড়িতে আগুনের বজ্রপাত। আর প্রতিদিন বাড়তে থাকল লাশের সারি। পর পর তিনটি সপ্তাহের অধিকাংশ কর্ম দিবসে চলল এই হরতাল, ককটেল, রাবার বুলেট, টিয়ারশেল, আগুন আর খুনের যজ্ঞ।
বাড়ি থেকে বের হতে পারি না। যেতে পারি না দুরের আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে। পারলাম না প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে। দেশে অনেক কিছু করার ছিল আমার। কোনো কিছুই করতে পারিনি। এর মধ্যে ছুটি শেষ। তখন চিন্তা করছি কী ভাবে ফিরব।
অবশেষে এলেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী। তাঁর সৌজন্যে নভেম্বর ১৫ থেকে ২২, একটি সপ্তাহ হরতাল মুক্ত দেশ। তড়িঘড়ি করে শেষ করলাম কিছু দরকারি কাজ। টিকিট কনফার্ম করলাম ২২ নভেম্বর ফেরার জন্য। ফিরেও এসেছি।
আমি তো ফিরে এসেছি এই প্রবাসজীবনে। আর দেশে আছে আমার সবাই যাদের ভালো থাকার জন্য আজ আমি পরবাসী। কিন্তু তারা তো ভালো নেই। একটি মাস নিজে দেখে এলাম। ভালো নেই আমার আপন জন, ভালো নেই আমার মাতৃভূমি।
_মুরাদুল ইসলাম
ম্যানিলা, ফিলিপাইন