"মূহুর্ত কেন এতো বড়/ সময় কেন এতো ফাঁকা,
আকাশের সব স্বপ্ন ক্যানো/ দুচোখের জল দিয়ে ঢাকা"
অর্ণব আমার ভারী পছন্দের একজন শিল্পী। ওর এই গানটা আমার সারাক্ষণই কানে বাজছিলো। "মূহুর্ত" শব্দটা মাথার ওপরে সিন্দাবাদের ভূতের মতন চেপে বসেছিলো, কিছুতেই তাকে নামানো যাচ্ছিলো না। এদিকে কিছু লিখতেও কলমের ডগায় আলস্য এসে ভর করেছে তাই ভাবলাম ক্যামেরায় বন্দি করা কিছু মূহুর্ত নিয়েই একটা ছবি ব্লগ দেয়া যাক। এগুলোকে ফটোগ্রাফী উপমা দিয়ে নিজেকে অপমানিত করতে চাই না। মন চাইলে দেখে নিতে পারেন
মেঘ মল্লার মুল্লুকেঃ কলম্বো থেকে ফিরবার পথে, ভারত মহাসাগরের ওপরে।
মাউন্ট লাভিনিয়াঃ নীলচে ঢেউ হলদে মোটাদানার বালুকে ভিজিয়ে যাচ্ছে নিরন্তর। হোটেল মাউন্ট লাভিনিয়া, সার্কিট-১১, কলম্বো।
বালুকাবেলায় লাঞ্চঃ নিঝুম দুপুরে সমুদ্র দেখতে দেখতে ডানহাতের কাজটাও সেরে ফেলা গেলো। ইন্দোনেশিয়ান নসিগারাং এর সাথে লাল টুকটুকে ভাজা পেল্লাই সাইজের লবস্টার।
টোয়াইলাইট ইন ক্যান্ডি লেকঃ গোধূলির সময়ে ক্যান্ডি লেক। কানে কানে বলে রাখি আমাদের কাপ্তাই লেকের কাছে এটা নস্যি। শুধুমাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আর পর্যটকদের জন্য সুব্যবস্থা করে রাখবার জন্যই এটা এত জনপ্রিয়।
টপকাপি প্যালেস, ইস্তাম্বুলঃ বসফরাসের তীরের সৌন্দর্য্য। প্রথম দর্শণে আমার ধারণা হয়েছিলো এটা মসজিদ। জ্ঞানপাপীদের শাস্তি।
অপেরা হাউজ, সিডনীঃ বলবার কিছুই নেই। কম-বেশী সবাই চিনি আমরা। মেঘলা দিন বলে খুব বেশী আকর্ষণীয় মনে না-ও হতে পারে। রৌদ্রজ্জ্বল দিনে এর ছাত থেকে সূর্যের আলো যখন বিচ্ছুরিত হতে থাকে, তখন কিন্তু দারূন দেখায়।
ডার্লিং হার্বার ব্রীজঃ মেঘলা দিনের মামলা। ঝকঝকে রৌদ্রজ্জ্বল দিন না হলে ঠিক খোলতাই হয় না সৌন্দর্য্যটা।
ওয়ান ফাইন নাইটঃ অ্যামস্টেলভিন, নেদারল্যান্ড। সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ছে ঘাসের সারিতে। নেদারল্যান্ডে রাত শুরু হয় আট-টার সময়, সূর্য ডোবে দশটায়। এ ছবিটা তোলা হয়েছে রাত সাড়ে আটটায়।
ওয়ান পিস হ্যাভেনঃ কুকেনহফ, নেদারল্যান্ড। সত্যিই যেন স্বর্গ। গোটা ইউরোপ জুড়েই ফুল রপ্তানী হয় এখান থেকে। পাহাড়ের পর পাহাড় টিউলিপ, অর্কিড চাষ হয়। দেখে মনে হবে যেন লাল টুকটুকে, গোলাপী কিংবা উজ্জ্বল হলুদ রঙের পাহাড়। ফি বছর গ্রীষ্মে উন্মুক্ত থাকে পর্যটকদের জন্যে।
নাম না জানাঃ দেখতে শাপলার মতন, তোলার সময়ে কি ছাই অত নাম খেয়াল থাকে? দেখতে সুন্দর হলেই হল।
ষোল শতকের উইন্ডমিলঃ কাইন্ডারডিক, নেদারল্যান্ড। আমি যাইনি এখানে, ছবিটাও আমার তোলা নয়। ষোল শতকের উইন্ডমিল দেখা হলেও এই জায়গাটা এককথায় দূর্দান্ত। রাতে (বলতে চাচ্ছি সূর্য ডোবার পর) যারা জায়গাটা দেখেননি, নিশ্চিতভাবে বিরাট কিছু মিস করেছেন। গোটা উইন্ডমিলগুলো আলোয় ঝলমল করতে থাকে।
দ্য ফার্মঃ অ্যামস্টারডাম, নুর্দ হল্যান্ড। আমার নিজের তোলা সবচেয়ে প্রিয় ছবি। হলুদ বুনো ফুলের আড়ালে পেল্লাই সাইজের গরুর রোমান্টিসিজম।
রেইন-বোঃ মিডেনওয়ার্ড, নেদারল্যান্ড। রংধনুটা পুরোটা এক স্ন্যাপে ক্যাপচার করতে পারিনি। কপাল খারাপ। এক কিশোরী জগিং থামিয়ে মুগ্ধ হয়ে আমার বিস্ময় দেখছিলো। আমি দেখছিলাম সাতরঙের স্বর্গকে।
মেরিটাইম মিউজিয়মঃ ষোল শতকের ডাচ প্রাইভেটিয়ার শিপ। ওতে চড়ে দিব্যি কিছুক্ষণের জন্য পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান হয়ে গিয়েছিলাম।
থ্যালিসঃ পৃথিবীর সবচাইতে দ্রুতগামী রেলের মধ্যে একটি। আমি একটা কফি নিয়ে বসলাম। কফি আরাম করে শেষ করতে না করতেই নেদারল্যান্ড থেকে বেলজিয়ামে চলে এলাম। তাজ্জব !!!
গ্র্যান্ড থ্যালিস বারঃ আশ্চর্যের ব্যাপার হলো থ্যালিসে হাঁটতে মোটেও কষ্ট হলো না অথচ কয়েক'শ কিলোমিটার গতিতে চলছে। আমাদের দেশের ট্রেনের চেয়েও সোজা। আমি এই বারে গিয়ে কফি কিনেছিলাম।
আইফেলঃ আইফেলের সামনে আমার ছানা।
মরোক্কান ফুডঃ ওয়ার্ল্ড ক্যাফে, ল্যুভ মিউজিয়ম। দুনিয়ার সব খাবার মেলে এখানে। আমি পছন্দ করেছিলাম মরোক্কান।
গ্রীন ক্লকঃ গ্রীন ক্লক, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড। সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবি। সুইজারল্যান্ডের সব ছবিই কেন যেন ঝকঝকে।
লেক জেনেভাঃ এই লেকটা অসম্ভব সুন্দর। ঝকঝকে নীল পানি। একটা বোট নিয়ে ক্রুজিং-এ বেড়িয়ে পড়েছিলাম।
দ্য ফাউন্টেইনঃ ইউরোপের হাইয়েস্ট ফাউন্টেইন। প্রত্যেকদিন সক্কালবেলায় খুলে দিতো। আমাদের বাসার জানালা খুললেই নজরে পড়তো এটা। রাত্রে সবুজাভ একধরণের আলো জ্বলতো ফাউন্টেনে।
আফসোসঃ দেশী বাঘের ছানার আফসোস হচ্ছে, কেন সে হাঁসের মতন এই স্বচ্ছ জলে সাঁতার কাটতে পারছে না। তাই চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই যে করার নেই তার। সুমনের একটা গান খুব মনে পড়ছে,
"নাইয়েরা স্নান করে, গাইয়েরা গায়,
মিছেমিছি কাঁদা ছোড়ে যারা অসহায়"
ওয়ান সিপ ইতালীঃ ক্রুজিং এর সময়। ওপাশে যেটা দেখছেন সেটা ইতালী। লেক জেনেভার এক অংশ সুইজারল্যান্ডে, কিছু অংশ ফ্রান্সে আর কিছু অংশ ইতালীতে পড়েছে।
গুটেনবার্গ বাইবেলঃ পৃথিবীর প্রথম ছাপানো গ্রন্থ। সেন্ট পিটার্স, সুইজারল্যান্ড। ছুঁয়ে দেখা মানা কিন্তু।
বলিউড স্ট্রিটঃ জেনেভার এ জায়গাটাকে নাকি এ নামেই ডাকা হয়। মেলা হিন্দী ফিল্মের শ্যুটিং হয়েছে সম্ভবত। ছোট ছোট সাদা পাথরখন্ড যে দেখছেন সেগুলো আসলে মোটা কাঁচের তৈরী কৃত্রিম পাথরের ব্লক। প্রতিটা ব্লকেই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় স্বাগতম বানী লেখা (বাংলাতেও লেখা আছে, সময়ের অভাবে খুঁজে দেখতে পারিনি)। ব্লকগুলো রাতের বেলা জ্বলে ওঠে। সঙ্গিনীকে নিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের জন্য আদর্শ জায়গা।
ব্লকগুলোর নমুনা দেখতে চান? দেখুন না,
ডেসার্টঃ সবশেষে ডেসার্ট না হলে কি আর জমে? খানিকটা আলো থাকলে এই ডেসার্টকে ফুড ম্যাগাজিনে ছাপাবার ব্যবস্থা করা যেতো। সুইসদের খাবার পরিবেশনার জবাব নেই।
উৎসর্গঃ হাসান মাহবুব (যদিও ভদ্রলোকের খটোমটো ভাষায় লেখার আদ্ধেকটাই আমি বুঝি না, আশা করি তিনি বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই কথা-বার্তা বলেন)