ওপরে যে ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন সেটা কোন স্বর্গের ছবি নয়। বুকে থাবা মেরেই জানান দিতে চাই ওটা মর্ত্যলোকের এবং খোদ আমাদের মহাদেশেরই গর্ব। ফি বছর গন্ডায় গন্ডায় ট্যুরিস্টেরা এখানে দল বেঁধে ঘুরতে আসে। শুধু তাজা মাছ বা টাটকা বাতাস খাবার আশাতেই নয়, এখানকার জলেরও আলাদা ভ্যালু আছে। ঘাবড়ে যাবেন না। মাথা ঠান্ডা করে বসুন। পয়সা খরচ করে আপনাকে জল কিনতে হবে না। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচাইতে বিশুদ্ধ নদী এটা। এখানকার জলে অক্সিজেনের পরিমান একেবারে আদর্শ। যতটুকু প্রয়োজন, ঠিক ততটুকুই জুয়োপ্লান্কটনের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। মনুষ্যসৃষ্ট কোন বর্জ্য দুষিত করছে না নদীর জলকে। একেবারে টলটলে স্বচ্ছ জল। নদীর নাম "লবক"। ফিলিপাইনের বোহল আইল্যান্ডের নদী এই লবক। বোহল আইল্যান্ড কিন্তু বিখ্যাত চকোলেট হিলসের কারণে। তো চকোলেট হিলস এর নাম কিন্তু কম-বেশী আমরা সবাই শুনেছি। মাইলের পর মাইল সবুজে ছাওয়া ঢিবি-আকারের পাহাড়গুলো বিশেষ ঋতুতে গাঢ় চকোলেটের রঙ ধারণ করে। আর এজন্যেই তার নামটাও এমন। ভীড়-বাট্টা ওখানে লেগে থাকবার কারণে অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে গেছে লবক নদী। সে কারণেই অতটা দুষিত হয়নি এখনও।
পৃথিবীর সবচাইতে বিশুদ্ধতম নদী (সম্ভবত) খেতাব পাবার কারণে বোধহয় ফিলিপিনো সরকার ইদানিং একটু নড়েচড়ে বসেছে। নদীতে এখন যেসব রিসোর্ট তৈরী হচ্ছে বা হয়েছে সবই পরিবেশবান্ধব। নদী রক্ষা সম্পর্কে তৈরী হয়েছে আইন। আশে-পাশে কোন ধরণের কল-কারখানা তৈরী করতেও উৎসাহ দেয়া হচ্ছে না। এই নদী ঘিরেই জমজমাট হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের আয়-রোজগারের পথ। বান্কো নামের ছোট্ট এক ধরণের নৌকা (স্থানীয়রা চালায়) আর বড়-সড় ক্রুজবোট ছাড়া কিছুই চলেনা এখানে। আর ক্রুজবোটগুলোর স্টাফরাও সদা-সতর্ক থাকেন কোন ট্যুরিস্টের কারণে যেন নদী নোঙরা না হয়ে যায়। নদীতে ভাসমান সব রিসোর্টগুলোও কড়াকড়ি ভাবে মেনে চলে এই নিয়ম। নদী তাদেরকে দিচ্ছে। এখন নদীকেও কি কিছু দিতে হবে না?
আসুন দেখে নেই আরেকটা বিশুদ্ধ নদী। এটাও অল্পের জন্য আমাদের মহাদেশে পড়েনি। পাপুয়া নিউগিনিতে এর জন্ম। নদীর নাম সেপিক। বলা হয়ে থাকে সেপিক হচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে বড় "আনকন্টামিনেটেড ফ্রেশ ওয়াটার রিসার্ভ"। সেপিক নদীর আশেপাশে সভ্যমানুষের বসতি কম। স্থানীয় উপজাতীয়রাই থাকে এখানে। এরা প্রকৃতিরই সন্তান। এরা জানে কিভাবে নদীকে বিশুদ্ধ রাখতে হয়। সভ্যতার শুরু থেকেই ইতিহাস দেখে এসেছে, নদীকে যদি মূল্যায়ন না করা হয়, নদীও আমাদের মূল্যায়ন করবে না। আমরা শিক্ষিতেরা ব্যাপারটা বারে বারে ভুলে গেলেও ভোলেনি এই তথাকথিত বর্বর অশিক্ষিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী।
সেপিক নদীর বেসিনকে বলে হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচাইতে আনডিস্টার্বড বেসিন এরিয়া যেহেতু ওখানে নেই কোন মাইনিং বা বড় বড় কল-কারখানার প্লান্টেশন। একদম নির্ঝঞ্ঝাট। একদম হাত পা ঝাড়া। আশেপাশে নেই বড় কোন লোকালিটি। পেট পুরে বাতাস খেতে পারেন। মানা করবার মতন কেউ নেই। সূর্যাস্তের সময় সেপিকের দৃশ্য যারা দেখেননি নিশ্চিত তারা বড় কিছু একটা মিস করেছেন।ওপরের দুটো ছবিই সেপিকের বেসিনের। সূর্যাস্তের ছবি। যাবেন নাকি ঘুরতে? কারা কারা যাবেন, হাত তোলেন দেখি !!!
উৎসর্গঃ ব্লগার আমিনুর রহমান ভাইকে।