somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজি হতে শত বর্ষ পূর্বে...

০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[সম্পূর্ণ মিথ্যা ঘটনা অবলম্বনে রচিত]

মামণির চেঁচামেচিঁতে বড় আলমিরাটা পরিষ্কার করতে বসলাম। শুক্রবার। হাতে অখন্ড অবসর। সুতরাং বাসার এতটুকু কাজ করা যেতেই পারে। পুরনো কিছু কাগজ ফেলতে গিয়েই নজরে এলো দাদুমণির লেখা। সময়টাও দেখি ১০০ বছর আগের। ভাবলাম ব্লগে শেয়ারই করা যাক।


আকস্মাৎ সহিসের হাঁক শুনিয়া খানিকটা সংকোচবোধের উদয় হইলো।
"ওহে, শ্রবণ প্রতিবন্ধী। কর্ণপূটে কি জননদন্ড প্রবেশ করাইয়া রাখিয়াছ? এত করিয়া আহবান করিলাম। তোমার তরে কি অভিপ্রায়ে গাড়ীখানা দাঁড়াইয়া থাকিবে? আরোহন করিবার হয়, করো। নচেৎ আমি রওয়ানা করিলাম।"
জিহবাতে কামড় দিয়া চারিপার্শ্ব প্রত্যক্ষ করিলাম। না: কেহ শ্রবণ করে নাই। এ যাত্রা আমার সম্মান রক্ষা পাইলো। আর বিলম্ব কেন? গাড়ীর পাদানি-তে পা রাখিয়া চড়িয়া বসিলাম। গুলিস্তাঁ একটি অতি জনবহুল স্থানে রূপান্তরিত হইয়াছে। ইহায় আসা অর্থই সময়ের অপচয়। আমরা মিরপুরবাসীগণ গুলিস্তাঁবাসীদের নিকটে গ্রাম্য বটে। শুনিয়াছি ইংরেজবাবুগন আমাদের মিরপুরবাসীদিগকে কান্ট্রি মাউস বলিয়া সম্বোধন করেন। অতীব লজ্জাজনক বিষয়। সাত-পাঁচ ভাবিতে ভাবিতে বোধের উদয় হইল।
"কিরায়া দিজিয়ে বাবু" মাড়োয়াড়ি কোচোয়ান পরিচালকের ডাকে সংবিত ফিরিল। কটিদেশে কিঞ্চিৎকাল হস্ত সঞ্চালন করিয়াই আসন্ন বিপদ অনুধাবন করিতে পারিলাম। কড়ি রাখিবার থলে বেমালুম অদৃশ্য। নির্ঘাত গুলিস্তাঁর লোকারন্যে কাহারো নিকট উহা হস্তগত হইয়াছে। এখন উপায়?
করজোড়ে মিনতি জানাইলাম, আমি বামুনের সন্তান। গ্রন্থিছেদকের কল্যাণে সর্বস্বান্ত হইয়াছি। দয়া করিয়া আমাকে মিরপুরে পৌঁছাইয়া দিলে কৃতার্থ হই। মাড়োয়াড়ির মনে আমার বালখিল্য বদন দেখিয়া যেন দয়ার সাগরে বান ডাকিল। সহিসের কর্ণপূটে বিষয়খানা তুলিতেই অবিমৃষ্যকারী অলম্বুষটি রণহুংকার ছাড়িল। কিরায়া না দিলে তাহার হস্তস্থিত লাঠিখানা সে ভিন্ন পন্থায় ব্যবহার করিতে ইচ্ছুক বলিয়া হুমকিও দিলো। আমি প্রমাদ গুনিলাম। তাহার গাঁটযুক্ত লাঠিখানা যঠেষ্টই স্ফিত। ইহার ভিন্নধর্মী ব্যবহারে ব্যাপক রক্তপাতের সম্ভবনা রহিয়াছে। তাহা ছাড়াও অন্তত মাস ছয়েক যে বর্জ্যত্যাগ করিতে নরকসম যন্ত্রণা ভোগ করিতে হইবে উহা আর বলিবার অপেক্ষা রাখে না। কল্পনা করিতেই আমার সর্বাঙ্গ কন্টকাকীর্ণ হইয়া উঠিল। উ: কি নির্মম! এহেন ক্রান্তিলগ্নে আমার ত্রাতা হিসাবে দরিদ্র মাড়িয়ারি মহোদয়ই আবির্ভূত হইলেন। তাহার মাহিনা হইতে কিরায়া পরিশোধিত হইবে এই মর্মে সহিসের সহিত তিনি শর্তাবদ্ধ হইবার পরে আমি মুক্তি পাইলাম। আমি তাহার কৃতজ্ঞতার প্রতিদন কি করিয়া পরিশোধ করিব এই চিন্তায় মগ্ন। মাড়োয়ারি কোচোয়ান পরিচালক হাঁকিয়া যাইতেছেন, "ওহে ভদ্রে! কিঞ্চিত দক্ষিণে চাপিলে প্রীত হই"
"গুরুজ্বী। উত্তরপার্শ্বে প্লাস্টিক"
বাহ্‌, মহাশয় দেখিতেছি বঙ্গভাষাখানাও রপ্ত করিয়াছেন। যাহা হউক, কি হইবে এইসব ম্লেচ্ছ কথায় কান দিয়া। দেখিতে দেখিতে মিরপুর আসিয়া পড়িল।

গাড়ী হইতে নামিয়াই মনে হইলো, কতদিন পূজা করিনা। ইহা তো ভগবানেরই এক পরীক্ষা। সামনেই মন্দির। কৃতজ্ঞতা জানাইবার জন্যেও তো পূজা-আর্চা করা উচিৎ। খড়মজোড়া বাহিরে রাখিয়া মন্দিরে প্রবেশ করিলাম। হঠাৎ মনে আসিল যদি বাহির হইবার পরে খড়মজোড়া আর না দেখিতে পাই? ইহার পূর্বেও এই মন্দিরে আমার দুই জোড়া খড়ম চৌর্যহস্তে বিসর্জিত হইয়াছে। আজ কি তাহা হইলে দান দান তিন দান?

সন্তর্পণে আগাইয়া গেলাম। যাহা ভাবিয়াছিলাম ঠিক তাহাই। ঐতো সামনেই আমার খড়মের চারিপার্শ্বে ঘুরিতেছে এক পাদুকা কাঙ্গাল। সাত-পাঁকে বাঁধিতেছে আমার খড়মখানাকে। তাহার চক্ষুর শীতলতায় যেন নব্য বিবাহিতের ন্যায় বিমোহিত হইয়া স্ত্রী-দর্শণের আমেজ প্রকাশ পাইতেছে। আমি চুপিসারে তাহার পার্শ্ব গলিয়া বাহির হইয়া গেলাম। আগে খড়ম খানায় উল্লুকটার হস্ত পতিত হউক, উহার পরে দেখা যাইবে। আমি তক্কে তক্কে রহিলাম। এই হাত দিলো বলিয়া...
খপ করিয়া শাখামৃগটার হস্ত চাপিয়া ধরিলাম। বমালসহিত গ্রেফতার।
আমার চক্ষুতে হাসি খেলিয়া গেলো। চোরের দশদিন আর গৃহস্থের একদিন। অদ্যই আমার সেই একদিন। কিন্তু, ও কি! চোর আবার হাসিতেছে কেন? ছ্যা ছ্যা ছ্যা। ইহাদের কি লাজ-লজ্জা বলিয়া কিছু নাই। ও আচ্ছা। কলিযুগে কি আর লাজ-লজ্জা করিতে আছে?
আমি আমার ভুরুজোড়া নাচাইলাম, কি? ক্রীড়া সমাপ্ত?
প্রতুত্তরে সেও তাহার ভুরুজোড়া নাচাইলো, বদনে অম্লান হাসি।
কিছুকাল নীরবতা।
আমি নহে, নীরবতা সেই ভাঙ্গিল। চোর ! চোর!! চোর!!

দৃশ্যপট: মন্দিরের সম্মুখে জটলা। খড়মচোর ধরা পড়িয়াছে। অত্যুৎসাহী ধার্মিকেরা জড়ো হইয়াছে।
"দেখুন না ভদ্রে, গতকল্যই আমার একজোড়া গেলো। শ্বশুর মহাশয়ের দেওয়া"
"মহাশয়, আমার ছেলের অন্নপ্রাশনে আমিও একজোড়া কিনিয়াছিলাম। একদম হাওয়া"
"ইহারা বড় বাড়িয়া গিয়াছে"
"এমন শিক্ষা দিতে হইবে যেন পরজনমে খড়ম হইয়া জন্মায়"
"ভদ্রে! ভ্রম হইতেছে। আমি চোর নই, আমার খড়মই চুরি হইতেছিলো"
"চোপ!" গর্জন করিয়া উঠিলো আরেকজন "সকল চোরই ধৃত হইবার পরে ইহা বলে"
হল্লা বাড়িল। হাঁক উঠিলো,
বরাহ শাবক !
সারমেয় সন্তান !!
ছেনাল পুত্র !!!
শুরু হইলো খড়মপ্রহার। বৃষ্টির ন্যায় পতিত হইতে লাগিল।
দয়ার্দ্র আওয়াজ শোনা গেলো,"এহে: ছেলে ছোকড়া, অদ্যবধি হস্ত পাকায় নাই। থামুন আপনারা। ছোকড়া ধুতিতে জলবিয়োগ করিয়া ফেলিয়াছে"
কে শোনে কাহার কথা। বেদম প্রহার চলিল।
ক্ষীণ কন্ঠে আর্তনাদ বাতাসে ভাসিয়া আসিলো শুধু, " দয়া ! দয়া !! "
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:১১
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×