দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া বালকটি একদিন বিকেলে বন্ধুদের সাথে ঘুরিতে গিয়া দেখিল তাহার নবম শ্রেনি পড়ুয়া গার্লফ্রেন্ডটি অন্য এক ছেলের হাত ধরিয়া কাঁধে মাথা রাখিয়া পার্কে বসিয়া রহিয়াছে । এহেন নির্লজ্জ প্রতারনা বালক সহ্য করিতে না পারিয়া হোস্টেলে ফিরিয়া গুনিয়া গুনিয়া কয়েকখানা ঘুমের ওষুধ তাহার পেটের ভিতর চালান করিয়া দিল। চালান করিবা মাত্র তাহার মনে ভীতির সঞ্চার হইল। আর তাই সে তাহার বন্ধুদিগকে ডাকিয়া কহিল " বন্ধুগন, এটা কান্নাকাটির মুহূর্ত নয়। আমি জীবন বিসর্জন করিবার নিমিত্তে ঘুমের ওষুধ সেবন করিয়াছি । যদি পারো, তোমরা আমাকে হাসপাতালে নিয়া চল পিলিচ।
বন্ধুগন তাহাকে রিকশায় চড়াইয়া মেডিকেলে নিয়া গেল। ডাক্তার কহিলেন কি সমস্যা? বালক কহিল আমি ঘুমের ওষুধ সেবন করিয়াছি। আত্মহত্যার নিমিত্তে। ডাক্তার মশায় দেখিলেন এ যে সুইসাইডাল কেস!! তিনি তাহাকে হসপিটালে ভর্তি করিতে অপারগতা প্রকাশ করিলেন। বালক কাতর স্বরে কহিল ''কেন ডাক্তার সাব, আপনাদের এখানে কি ইমারজেন্সি নাই? এই বলিয়াই সে সেন্সলেস হইয়া পড়িয়া গেল। সমস্যা প্রকট আকার ধারন করিলে জরুরি ফোন দেওয়া হইল প্রিন্সিপাল মশাইকে। তিনি তাহার লিংক কাজে লাগাইয়া ছেলেটিকে ভর্তি করাইয়া দিলেন কোন এক হসপিটালে। অতঃপর যা হওয়ার তাই হইতে শুরু করিল। বালকের মা আসিয়া ক্রন্দন করিতে শুরু করিলেন। বালকের বাবা এদিক সেদিক উদভ্রান্তের ন্যায় দৌড়াইতে থাকিলেন। আর প্রিন্সিপাল মশাই কলেজের নাম ডুবিবে কিনা এই চিন্তায় মুখ কালো করিয়া বসিয়া রহিলেন।
দিন খানিক বাদে বালক সুস্থ হইয়া ভাসমান আবাস ত্যাগ করিয়া স্থায়ী নিবাসে ফিরিয়া গেল এবং পড়ালেখায় মন দিল। আর তাহার নবম শ্রেনী পড়ুয়া গার্লফ্রেন্ড তাহাকে একটিবার দেখিতেও আসিল না। কিভাবে বালক মৃত্যুর হাত হইতে বাচিয়া আসিয়াছে তাহা জানিতেও চাহিল না। বালিকাটি অন্য এক
চতুর বালকের সহিত হৃদয় দেওয়া নেওয়ার সম্পর্ক চালাইয়া গেল। বাট আনফরচুনেটলি হৃদয়ের সাথে সে আরেকটি জিনিস ও সেই নতুন বালক কে প্রদান করিল যাহাকে বলা হয় সম্ভ্রম। অতঃপর দেনা পাওনা মিটিয়া গেলে দুইজন ভাল থাকিবার প্রতিশ্রুতি সঙ্গে রাখিয়া দুইজন দুই দিকে চলিয়া গেল।
মাস খানিক বাদে আবারো সেই হসপিটালে আরেক রোগী আসিয়া ভর্তি হইলো যেই হসপিটাল থেকে বালক সুস্থ হইয়া ফিরিয়া গিয়াছিল। এবারে ঘুমের ওষুধ না, একেবারে নীল হারপিক। বেদনায় তাহার মুখ নীল হইয়া গিয়াছে। কথাও কহিতে পারিতেছে না। সে খালি যন্ত্রনায় পাক খাইতেছে।
তাহার বাবার মুখ শুষ্ক হইয়া রহিয়াছে। মায়ের চোখে অশ্রুধারা। ডাক্তার সাব তাহাকে অপারেশন থিয়েটারে নিতে না নিতেই
পুলিশ আসিয়া হাজির হইল। কিভাবে কি হল বলেন, অফিসার
জিজ্ঞাসা করিল। বাবা কোন কিছু না বলিয়া মাথা নিচু করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। পুলিশ কয়েকবার জিজ্ঞাসা করা সত্ত্বেও তিনি কিছু বলিলেন না। কিভাবে বলিবেন তিনি এই কথা যে তাহার মেয়ে বিবাহপূর্বক অন্য একজনের সহিত ফিজিক্যাল রিলেশন করিয়াছে অতঃপর চাহিদা মিটিয়া গেলে মেয়েটির ভিডিও
কিভাবে যেন বাহির হইয়াছে আর মেয়ে তাই অপমানে হারপিক
খাইয়াছে। কয়েক মাস আগে এই হসপিটালেই তাহার মেয়ের প্রতারনায় পড়িয়া ঘুমের ওষুধ খাইয়া এক বালক আশ্রয় নিয়াছিল। আজ তার মেয়ে অন্য কোন এক ছেলের প্রতারনার কারনে এখানে আশ্রয় নিয়াছে। জীবন কখন যে কিভাবে বয়ে চলে!!! আর আমরা পুতুল হয়ে ঘুড়ে বেড়াই সুতোর টানে।
অতঃপর: ঘটনা শেষে একদিন বালিকাও সুস্থ হইয়া আপন
নিবাসে ফিরিয়া গেল। তাহার জীবনের সকল উচ্ছলতা কোথাও এক নিমিষে হারাইয়া গেল। তাহার মনে প্রানে এক বদ্ধমুল ধারনা রটিয়া গেল সব ছেলেই খারাপ। সবাই শুধু নারীকে দেহসর্বস্ব অবলা ভাবিয়া সুযোগের আশ্রয় খুঁজে। কেহ ভালবাসিতে পারে না, কেহ ভালবাসা দিতে জানে না।
দশম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলেটিও নিজেকে গুছাইয়া নেওয়ার
বৃথা চেস্টায় লিপ্ত হইলো। অতঃপর শেষমেশ পারিয়া না উঠিয়া এই সিদ্ধান্তে আসিয়া উপনিত হইল যে নারী মাত্রই ছলনাময়ী। তাহারা অকৃত্তিম ভাবে ভালবাসিতে জানে না এবং ভালবাসার মূল্য দিতে পারে না। তাহারা সবাই সুযোগসন্ধানী। এইভাবেই চলিতেছে দিনকাল। হয়ত বা চলিয়া যাহিবে। কেহ ভালবাসা পাহিয়া জ্যোৎস্নাধারায় নিজেদের প্লাবিত করিবে। আবার কেহ বা বিষাদের কুঞ্জমেলায় আপন বসত গাড়িবে...।