somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদের শুভেচ্ছা

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ...

আসি আসি করে শেষ পর্যন্ত ঈদের দিনটা এসেই পড়ল। সবাই অনেক খুশি। সবার মনে অনেক আনন্দ। বিভিন্ন জন হয়ত বিভিন্ন ভাবে ঈদের আনন্দটা বাড়ানোর প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত। এর মাঝে সবাইকে একটু বিরক্ত করতে চলে এলাম। মূলত সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতেই আসছিলাম। কিন্তু, এসে ভাবলাম সবার সাথে একটু অনুভূতিগুলো শেয়ার করে যাই, যদিও বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনুভূতিগুলো আস্তে আস্তে ভোঁতা হয়ে গেছে। তারপরও ঈদ বলে কথা।

এখন ঈদ আসলেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। তখন ঈদের আনন্দটা ছিল অসাধারণ। ঈদের দিনতো ছিলই, ঈদের আগের দিন চাঁদ দেখাটাই তখন একটা উৎসবের মত ছিল। কে কার আগে চাঁদ দেখব এ নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। যেবার মেঘের কারনে চাঁদ দেখা যেত না সেবার মনটাই খারাপ হয়ে যেত। মনে হত ঈদের আনন্দ অর্ধেকই মাটি হয়ে গেল।

এরপর শুরু হত ঈদের দিনে কি করব তার প্রস্তুতি নেওয়া। আলাদা একটা আনন্দ ছিল। নতুন কেনা জামাকাপড় গুলো আলমারি থেকে বের করে নিতাম। কখন গায়ে দিব ভাবতে ভাবতে অস্থির হয়ে পড়তাম। আর খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারটা ছিল আরও আকর্ষণীয়। কিছুক্ষণ পর পর রান্না ঘরে উঁকি দিতাম, আম্মু কি রান্না করছে দেখার জন্য। পুরো বিষয়টাই অনেক উপভোগ্য ছিল।

এরপর ঈদের দিনে সকাল বেলা সবাই মিলে নামাজ পড়তে যাওয়া, নামাজ শেষ করে আত্মীয়দের বাড়ি যাওয়া, সবশেষে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হওয়া, কোন কিছুতেই আনন্দের কমতি ছিল না। এর মধ্যে সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিল ঈদের সালামি পাওয়া। কাউকে সালাম করার পর অধীর হয়ে অপেক্ষা করতাম কখন সালামি দিবে এর জন্য। এরপর দিনশেষে সব ভাই বোন মিলে হিসেব করতে বসতাম কে কত টাকা পেলাম, যদিও বেশিরভাগ সময়ে আম্মু এসে সব টাকা নিয়ে যেত। তখন মনটাই খারাপ হয়ে যেত, এত কষ্ট করে সারাদিন লোকজনকে সালাম করে টাকাগুলা উপার্জন করলাম, আর আম্মু এসে নিয়ে গেল। বড় মানুষগুলোর প্রতি তখন খুব রাগ লাগত।

ছোট থাকতে ঈদ আসত শীতকালে, যার ফলে ঈদের নামাজ সবসময় মাঠে হত। এখন বর্ষাকাল চলে আসায় দেখা যায় ঈদের দিনেও রাস্তায় পানি উঠে গেছে। যার ফলে ঈদের নামাজ হয় মসজিদে। মসজিদেই যদি ঈদের নামাজ পড়ি তাহলে ঈদের মজাটা আর কোথায় থাকল? একই কারনে কারো বাসায় যেতে পারি না। টিভির পঁচা অনুষ্ঠান গুলা দেখেই দিনটা কেটে যায়। এই অনুষ্ঠানগুলো না থাকলে অন্যসব দিনের থেকে ঈদের দিনের পার্থক্য খুঁজে পাইতাম না।

ঈদের কেনাকাটার ব্যাপারটাও তখন অনেক আনন্দ নিয়ে করতাম। ঈদ আসল আর পাঞ্জাবী, জুতা, শার্ট প্যান্ট কিনব না, এটা ভাবতেই পারতাম না। আর এখন কেনাকাটা করার কথা শুনলে গায়ে জ্বর এসে যায়। নিজের জিনিসটা নিজে ঠিকমত পছন্দ করে কখনোই কিনতে পারি না। এর একটা কারন মনে হয় পছন্দের সাথে বাজেটের সমন্বয় করতে না পারা। সবসময় দেখি, অনেকগুলো পাঞ্জাবীর মধ্যে যেটা পছন্দ হয় সেটার দাম কমপক্ষে ৩০০০ টাকা, যে শার্টটা ধরি সেটার দাম ২০০০ টাকা। দোকানে বসে তখন ভাবি, আমাকে বিক্রি করলে কত টাকা পাওয়া যেতে পারে?

এবার ঈদে কিছু টাকা ইনকাম করার পর ভাবলাম আম্মুকে একটা গিফট দিব। ভাবা মাত্রই রওনা দিলাম একটা শাড়ি কেনার উদ্দেশ্যে। সামান্য একটা শাড়ি কেনা যে এত যন্ত্রণাদায়ক আগে বুঝতে পারি নাই। আমি আবার ঝামেলা এড়ানোর জন্য সবসময় ফিক্সড প্রাইসের দোকানগুলোতে যাই। কিন্তু এক্ষেত্রে খুব একটা সুবিধা হয় নাই। আমার খানদানি চোখের কারনে একেকটা শাড়ি পছন্দ হয় আর ট্যাগে দেখি ৮০০০ টাকা ১০০০০ টাকা এইসব লেখা, সর্বোচ্চ মনে হয় ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত দেখছি। বুঝতে পারলাম না সাধারন একটা শাড়ির দাম কেমনে ১৫০০০ টাকা হয়। যাই হোক এভাবে দেখতে দেখতে ৮-১০ টা শো রুম (শো রুম গুলা মোটামুটি কাছাকাছি থাকায় রক্ষা পাইছিলাম) ঘুরার পর শেষ পর্যন্ত বাজেট ক্রস করলেও রেঞ্জের মধ্যে থাকা একটা শাড়ি পছন্দ হয়ে যায়। ঐটা কেনার পর কান ধরছি আর কোনদিন এইসব জিনিস কিনতে যাব না। এই ঈদে এটাই একমাত্র কেনাকাটা করতে যাওয়ার কাহিনি। ওই এক দিনেই পুরা কাহিল।

এইসব কারনে কেনাকাটা করা একরকম ছেড়েই দিছি। কেউ যদি দয়াপরবশ হয়ে কিছু গিফট করে সেটা দিয়েই চালিয়ে নেই। তবে ইদানিং লোকজন আর গিফট করে না, সবাই নগদ টাকা হাতে ধরাইয়া দেয় (সবার মনেই ঝামেলা কমানোর ধান্দা)। এটাতে একটাই লাভ হয়, আমার ট্যুরে যাওয়া আর বই কেনার টাকাটা উঠে আসে। তবে লোকজন কিছু কিনে দিলেই বেশি খুশি লাগে।

এখন ঈদে সবচেয়ে বেশি মজা পাই ঘরে ফেরার ব্যাপারটায়। যেদিন বাড়ি ফিরি সেদিন খুব আনন্দ লাগে। বার বার মিলন মাহমুদের ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি’ গানটা শুনি। ওই মুহূর্তে গানটাকে অসম্ভব ভাল লাগে, অদ্ভূত একটা শিহরণ অনুভব করি। এবার বাড়ি আসার একটা ট্রেনের টিকেট কেনার জন্য চার ঘন্টা লাইনে দাঁড়াই ছিলাম। কিন্তু তারপরও খুব একটা বিরক্ত লাগে নাই, বাড়ি যাব এই আনন্দটাই বেশি কাজ করতেছিল। লাইনের সবার মধ্যেও একটা উৎসব উৎসব ভাব লক্ষ্য করলাম। একজন আরেকজনের সাথে হাসি ঠাট্টা করতেছে। দীর্ঘদিন পর বাড়ি যাবে, এই আনন্দে মনে হয় সবাই অন্যসব কষ্টকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না। শেষে যখন টিকেট পেয়ে যাচ্ছে, তখন একেকজনের মুখের হাসি দেখে মনে হচ্ছিল আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত টিকেট পেয়ে আমারও মনে হচ্ছিল বিশ্বজয় করে ফেলছি। মনে হল আহ্‌ বাড়ি যাওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে গেলাম।

যাই হোক, অনেক কথা বলে ফেললাম। আর কথা না বাড়াই। ঈদ অনেক দিন পর পর আসে, সবারই খুশি মনে ঈদ পালন করা উচিৎ। যার যে রকম সাধ্য, তার মধ্যেই খুশি মনে ঈদ উদযাপন করেন।

সবার ঈদ আনন্দময় হোক, সবাই সুস্থ শরীর আর খুশি মন নিয়ে ঈদ উদযাপন করেন, এই কামনা করে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি,

“ঈদ মুবারক”







(ছবিগুলা গুগোল ভাইজানের সহায়তায় নেট থেকে সংগ্রহ করা)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১২:২৩
৪২টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×