দৃশ্য-১
-ভাইয়া দৌড় দাও।
-সজল এর কথা শুনে এমরান হাতের কাজ বাদ দিয়ে একটু সামনের দিকে তাকাল। তখন ও গভীর মনোযোগ দিয়ে হাতের বাজি তে আগুন দেয়ার চেষ্টা করছিলো। এই কাজ খুব সাবধান এ করতে হয়। একটু এদিক ওদিক হলে হাতে ফুটে যাওয়ার সম্ভাভনা থাকে, গতবার হাতে একটা ফুটেছিল, বেশি ব্যথা পায় নাই, কিন্তু কান এ ৩ দিন ডাবল ডাবল শুনত।
-তাই একটু ধমক দিয়া বলল কি হইছে?
-ভাইয়া দৌড় দাও, সজল এর কাতর চীৎকার আসে, পুলিশ.....................
-এমরান এর মেজাজ টা ই গরম হয়ে যায়, মনের অজান্তে মুখ দিয়ে একটা বিশ্রী গালি চলে আসে, হা*** বা* গুলোর জ্বালায় একটু শান্তি মত মজা ও করতে পারবে না। এবার দ্বিগুণ মনোযোগ দিয়ে বাজি তে আগুন দেয়, তারপর সর্ব শক্তি দিয়া ওটা ছুড়ে মারে পুলিশ ভ্যান এর দিক এ, তারপর কোনদিক এ না তাকাই ভোঁ দৌড়.....................
-আশেপাশে আরও কিছু বিটলা পোলাপান ছিল, তারা ও এমরান এর দেখা দেখি আরও কিছু ছুটে মেরেছে, একটা গিয়ে পড়লো পুলিশ ভ্যান এর ভিতর। অশ্রাব্য ভাষায় গালির তুবড়ি ছোটাল পুলিশ অফিসার। তারপর ডুকলো এলাকার গেট দিয়ে।
-সামনে এমরান এর আব্বু কে পেয়ে অভিযোগ দেয়া শুরু হল।
-এমরান এর আব্বু ঠাণ্ডা মাথায় সব শুনল, শুনে উত্তর দিলো ঈদ তো পোলাপান এর জন্য ই, আপনারা ওদের বাঁধা না দিলে ই হয়
-আরে ভাইসাব বুঝেন না কেন, একটা এক্সিডেন্ট হলে তো পড়ে আমাদের কান নষ্ট করে ফেলবেন, এই বলে অভিযোগ করে পুলিশ অফিসার।
-এমরান এর আব্বু পুলিশ অফিসার কে বুঝাই বলে যে উনি এখান এ আছে, কোন সমস্যা হবে না।
-আশ্বাস পাই অফিসার যাওয়ার পথ এ এলাকার সবচে বিটলা পোলা ইয়াসিন ২৮ বাজি টা ছুড়ে মারে, এই বাজীর বিশেষত্ব হল এক সলতেলে ২৮ বার আওয়াজ হবে।
-অফিসার দেখল অবস্থা বেগতিক, তাই মানে মানে কেটে পড়লো।
অফিসার চলে যাবার পর এমরান, সজল, বাপ্পি, ইয়াসিন সহ সবাই এবার এক হয়ে আনন্দ শুরু করে। গত একমাস ধরে টাকা জমাই, না খাই, বায়না ধরে বাজি গুলো কিনেছে। ইদানিং বাজীর দাম বাড়াই দিছে হারামি দোকানদার গুলো। বাজি আনলে ই হয় না, এনে রোদ দিয়ে রাখতে হয়, নাহলে ভালো শব্দ হয় না। বাজি কিনার দায়িত্ব ছিল এমরান আর বাপ্পির আর রোদ দেয়ার দায়িত্ব ছিল সজল আর ইয়াসিন এর। গতবার রোদ ছিল না, অনেক রিস্ক নিয়া চুলার কাছে হিট দেয়া হয়েছিল।
এত কষ্ট করার পর যদি শালার পুলিশ গুলো এত পেইন দেয় !!!!
-এলাকার পোলাপান গুলো সাধারণত বাজি ফুটায় আর মেয়েরা তারা বাজি নামক এক খেলনা নিয়ে মজা করে করে।
-যাই হোক চাঁদ রাত এ মজার কমতি নাই ওদের, মাঝে মাঝে চাঁদ রাত এ ওরা মার্কেট এ যায়, কিনে একটা, উল্টায় ১০০ টা। মেয়েরা ই বেশি কিনে, ছেলেরা যায় মেয়েদের দেখতে। একমাস এর সংযম একদিন এ শেষ করতে হবে
দৃশ্য-২
এমরানরা আগের এলাকা ছেড়ে চলে এসেছে, তাই বলে কি মজা থেমে থাকবে?? অবশ্যই না।
-ওই তোদের ঘরে কি মা- বইন নাই?? পাশের বাসার অ্যান্টির হুংকার
-সবাই মা- বইন হলে বউ হইব কেডা? এমরান এর স্ফিত হাসির সহিত উত্তর।
-তবে রে, আজ যদি তোর মাকে না বলি তাইলে আমার নাম এই না, সেই না, ব্লা ব্লা ব্লা
-পাপিয়া ওদের ওখান থেকে টেনে নিয়ে আসে, এই তোমরা কি ওই অ্যান্টি কে না জালালে পারো না পাপিয়া জিজ্ঞাসা করে।
-নাহ পারি না, উনাকে না জালালে চাঁদ রাত এর মজা অর্ধেক নষ্ট।
-কাহিনি হল অ্যান্টি বাজি- পটকার শব্দ সহ্য করতে পারে না, কিন্তু তবু ও তার বাসার ভিতর বাজি ছুড়ে মারা চাই ই চাই।
-অ্যান্টি পর্ব শেষ হলে গভীর রাত পর্যন্ত চলে ছাদে হাই ভলিউম এ গান শুনা, সাথে বাজি- পটকা ফুটানু। তারপর পাপিয়া চলে যায় ঈদ এর রান্নার আয়োজন করতে আর এমরান, সজল গভীর রাত অব্দি আড্ডা দেয় চাঁদ এ বসে, আশেপাশের বাসার পোলাপানদের সাথে প্লান চলে ঈদ এর।
-চাঁদ রাত বলে কথা।
দৃশ্য- ৩
গতবছর এমরান দেশ ছেড়েছে উচ্ছ শিক্ষা নিতে, আসার পর কোরবানির ঈদ করেছে, কিন্তু তেমন একটা ফিলিংস পায় নাই। এইবার রমজান শেষ, কাল ঈদ
- হ্যালো ভাই, কাল কি ঈদ? এমরান আরিফ ভাই কে ফোন দেয়।
- আরিফ ভাই এর উত্তর টার্কিশ নিয়ম এ ঈদ কাল, কিন্তু আরাবিক নিয়ম এর জন্য রাত পর্যন্ত ওয়েট করতে হবে।
- এইটা এবার কি?? দেশ এ তো ঈদ একদিন ই হইত, টার্কিশ আর আরাবিক কি জিনিষ!!!!
-পরে ইভান ভাই বুঝাই দেয় যে টার্কিশ রা চাঁদ দেখে ঈদ করে না, ওদের সব কিছু ক্যালকুলেটর দিয়ে হিসেব করে, আর আরাবিক রা করে চাঁদ দেখে।
-ধুর মিয়া, আগে থেকে যদি জেনে যাই কবে ঈদ তাইলে চাঁদ রাত এর কি মজা, এমরান উত্তর দেয়।
-এত তেন্সান ভালো লাগে না, এমরান ফোন দেয় সৌদি বাস করা তার বন্ধু কে, বন্ধু জানায় কাল ঈদ। এর মাঝে আরিফ ভাই ও ফোন দিয়ে কনফার্ম করে কাল ঈদ।
- ইফতার করার পর একা একা বেল্কনি তে দাড়াই এমরান স্মরণ করে পুরুনু দিন এর চাঁদ রাত এর কথা, ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে পুরান দিন মনে করে, আর চোখের কোনে এক বিন্দু অশ্রু এই পরবাস এর একা একা চাঁদ রাত কে নিয়ে।
সবাই কে ঈদ এর শুভেচ্ছা এমরান এর পক্ষ থেকে।
জুয়েল
২৮/০৭/২০১৪
রাতঃ ১২.০০