ফয়সাল এর মনটা খুব খারাপ। একটার পর একটা সিগারেট ধ্বংস করছে, তবু ও মনটা শান্ত হচ্ছে না। একটু আগে ফেবু তে একটা স্ট্যাটাস দেখে মনটা খারাপ হয়ে আছে তার।সাধারনত সে সিগারেট খুব একটা খায় না, কিন্তু মন খারাপ থাকলে ওটা ই তার সম্বল, তার একটা মজার যুক্তি ও আছে এই বেপার এ, সিগারেট খেলে নাকি তার চিন্তা শক্তি লোপ পায় আর সে কষ্ট ভুলে যায়, কি এক আজব যুক্তি!! কিছুদিন আগের কথা তার মনে পরে যায় ধুয়ার দিকে তাকিয়ে, পাস করে বেকার বসে আছে আর সবার কত কথা শুনতে হচ্ছে। হটাত চিন্তা করলো এইবার বুয়েট এ একটা সুযোগ নিবে কিনা, মহা উৎসাহে ঢাকা যাবার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলল, সাথে তার বেস্ট ফ্রেন্ড লাবনী কে মোবাইল এ জানিয়ে দিলো সে ঢাকা আসবে, লাবনীর তখন ইউনিভার্সিটি বন্ধ, তাই ও ঢাকার বাহিরে, কিন্তু ফয়সাল জিদ করায় লাবনী রাজী হল ওর সাথে দেখা করতে। এর মাঝে ফয়সাল একটা চাকরি যোগার করে ফেলল, খুব ই ভালো একটা চাকরি, ফয়সাল এর প্লান হল লাবনী কে চাকরির খবর টা জানিয়ে ওকে চমকে দিবে।যথারীতি যাত্রার দিন ফয়সাল এবং লাবনী একসাথে ২ ভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিলো, ফয়সাল উঠলো সকাল ৮ টায় আর লাবনী দুপুর ১২ টায়। ফয়সাল এর টার্গেট ১১ টার মাঝে পৌঁছে যাবে কিন্তু রাস্তায় এত জ্যাম ছিল যে সে পৌঁছাল বিকেল ৪ টায়, ৪,৩০ এ লাবনীর সাথে দেখা করার কথা ধানমণ্ডি লেক এ, ওইদিক এ লাবনী ঢাকা পৌঁছাল বিকেল ৪,১৫ তে। ফয়সাল যেখান এ থাকে ওখান থেকে ধানমণ্ডি লেক যেতে টার প্রায় ২ ঘণ্টা লাগবে, কারন রাস্তায় এত জাম,তাই ও লাবনী কে মোবাইল করে চন্দ্রিমা উদ্যান আস্তে বলল, কিন্তু লাবনী আসতে নারাজ, এইদিক এ ফয়সাল এর বুয়েট এর পরীক্ষা পরদিন সকাল ৯ টায়, ২ ঘণ্টা যাওয়া আর ২ ঘণ্টা আসা, এত সময় জার্নি করে পরদিন পরীক্ষা দেয়ার সামর্থ্য থাকবে কিনা ও জানে না, তার পর ও বেস্ট ফ্রেন্ড কে টাইম দিতে ও রাজী ছিল কিন্তু সমস্যা হল লাবনী সন্ধ্যার পর বাহিরে থাকতে পারবে না। কি করা যায় চিন্তা করতে করতে ফয়সাল এর মাথায় একটি বুদ্ধি আসে, লাবনীর এক বান্ধবি থাকে চন্দ্রিমার পাশে, ফয়সাল লাবনী কে বুদ্ধি দেয় বান্ধবির বাসায় থাকতে আজ রাত, তাহলে সন্ধ্যার পর ও আড্ডা দেয়া যাবে, কিন্তু লাবনী অনেক জিদ, ও আসবে না। ওর এক কথা তোমার জন্য আমি এত দূর থেকে আসেছি,সময় ও তোমাকে আগে থেকে জানিয়ে দেয়া,তাই তোমাকে ধানমণ্ডি ই আসতে হবে, না হলে আসার দরকার নাই, এই নিয়ে কথা কাটাকাটি, হটাত লাবনী বলল তোমাকে আসতে হবে না,আর কোনদিন আমাকে মোবাইল ও করবে না, এই বলে সে মোবাইল অফ করে দেয়। ফয়সাল অনেক চেষ্টা করে যোগাযোগ করার কিন্তু সম্ভভ হয় না। পরদিন পরীক্ষা দিয়ে ও চেষ্টা করে লাবনীর সাথে দেখা করতে কিন্তু লাবনী তা অগ্রাহ্য করে। কি আর করার, ফয়সাল চাকরি তে চলে যায়। মাঝে মাঝে লাবনীর ফেবু তে উঁকি মারে ও কি করে তা দেখতে, আজ হটাত করে দেখতে পেল লাবনী ওকে মিন করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছে, ফয়সাল নাকি বন্ধুত্ব কি জিনিষ ওটা জানে না্, , , , , , , , , , , , , , ,
সেই থেকে ফয়সাল এর মন খারাপ,আজ ও সারা রাত জাগবে,নিজেকে কষ্ট দিবে, কারন সে নাকি তার বেস্ট ফ্রেন্ড কে কষ্ট দিয়েছে, নিজেকে কষ্ট দিয়ে সে সব শুধ করে দিবে, একটা বৃষ্টি সে কামনা করছে, বৃষ্টির জল এ দুয়ে যাক ওর মনের সব কষ্ট। ফয়সাল আসল এ এমন ই, যেদিন লাবনী ওরে সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো ওইদিন ও কিছু বলতে পারে নাই,আজ ও লাবনী যখন ওর বন্ধুত্ব কে অস্বীকার করলো, আজ ও কিছু বলতে পারে নি। ও আসল এ এমন ই অভাগা,নিজের কষ্ট গুলো ও কাও কে বলতে পারে না,সব সময় ওকে সবাই ভুল বুঝে,তাও ও কারো ভুল ভাঙতে পারে না, একটা কাজ এ ও খুব ভালো পারে নিজেকে কষ্ট দিতে।
হাতের উপর বিড়ির আগুন এর ছেঁকা লাগায় কল্পনা থেকে বাস্তব এ চলে আসলো, একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাটা দিলো নদীর পার এ, আজ সারা রাত চাঁদ আর ও নদীর জল এ আলোর খেলা দেখবে, , , , , , , , , , , , , , , , ,
মানুষ এর জীবন টা খুব এ ছোট, এত ছোট যে এখান এ কিছু হারালে ফিরে পাওয়া কঠিন, একটি ভালো বন্ধু পেতে কত সময় লাগে কিন্তু সেই বন্ধুত্ব নষ্ট হতে একটি ছোট কারন ই যথেষ্ট, কত ফয়সাল এই ভাবে ঝরে যায়, আমরা কি তার খবর রাখি। আসুন সবাই বন্ধুত্ব করতে শিখি, সেই বন্ধুত্ব কে সন্মান করতে শিখি।
বিঃদ্রঃ এটি একটি কাল্পনিক পোস্ট, কারো জীবন এর সাথে মিলে গেলে তার জন্য লেখক দায়ি নয়। ধন্যবাদ