২৫ ফেব্রুয়ারি আজ,,পিলখানার মর্মন্তুদ স্মৃতিবাহী
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
অন্যান্য দিনের মতো যথানিয়মেই ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মতো রাধানীর পিলখানায় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক। বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে সুশৃক্মখল ও আনন্দমুখর পরিবেশেই শুরু হয়েছিল দরবার হলের কর্মসূচি। সবাই নিয়মানুযায়ী যে যার অবস্থানে বসে ছিলেন দরবার হলে। হঠাৎ দরবার হলের দক্ষিণ-পূর্ব দরজা দিয়ে রান্নাঘরের দিক থেকে অস্ত্র হাতে ঢুকে পড়ে একজন। তার পিছু পিছু আরো দু'জন। পরে জানা যায় প্রথম যিনি অস্ত্র হাতে দরবার হলে ঢুকেছেন, তার নাম সিপাহী মাইন। তার পিছু পিছু আরো যে দু'জন ঢুকেছিলেন, তারা হচ্ছেন সিপাহী কাজল আলী ও এবি সিদ্দিক। দরবার হলের মঞ্চে উপবিষ্ট তখনকার মহা-পরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের দিকে অস্ত্র তাক করে উত্তেজিত ভঙ্গিতে কথা বলতে শুরু করে সিপাহী মাইন। এ সময় তড়িৎ গতিতে তখনকার ডিডিজি ব্রিগেডিয়ার এম এ বারী অন্যান্য কর্মকর্তাদের সহায়তায় তাকে নিরস্ত্র করেন। পরে কাজল আলী ও এবি সিদ্দিক দরবার হল থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় দরবারে বসা সিপাহীদের মধ্য থেকে কেউ একজন জোরে চিৎকার দিয়ে ‘জাগো' বলে উঠলে বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা দরবার হল ত্যাগ শুরু করে। এরপরই শুরু হয় গোলাগুলী আর ইতিহাসের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ আর তান্ডব। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ও রাতে বিদ্রোহীরা পালিয়ে যাবার পর পিলখানায় তাদের নৃশংসতার ভয়াবহ তথ্য বের হতে থাকে। প্রায় ৩৬ ঘণ্টার এ বিদ্রোহের পর পিলখানা তৈরি হয় একটি মৃত্যুপুরীতে। সর্বত্রই বর্বরতা আর নৃশংসতার চিহ্ন। ব্যাটালিয়নের বিভিন্ন অফিসগুলো ভাংচুর করা হয়। সেনা কর্মকর্তাদের আবাসস্থল জ্বালিয়ে দেয়া হয়। ম্যানহোলে ফেলে দেয়া নয় সেনা কর্মকর্তার লাশ। কামরাঙ্গীর চরে একটি সুয়ারেজ লাইন থেকে উদ্ধার করা হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি বিজিবি হাসপাতালের পিছনে ও ১৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের দক্ষিণের মাঠের একটি গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৯টি লাশ। এমটি গ্যারেজ মাঠের পাশে থেকে উদ্ধার করা হয় আরো নয়টি লাশ। পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চালানোর আগে বিদ্রোহীরা বিডিআরের অস্ত্রাগার দখল করে। অস্ত্রাগারে গচ্ছিত হাতিয়ার, গোলাবারুদ বিদ্রোহীরা হাতে হাতে নিয়ে ইচ্ছামতো ব্যবহার করে সেনা কর্মকর্তাদের ওপর। একই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ চুরি করে পালিয়ে যায় তারা। যার অনেকগুলোই এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এ নির্মম ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর প্রথমে কোতোয়ালী থানায় ও পরে নিউমার্কেট থানায় সদর ব্যাটালিয়নের ডিএডি তৌহিদুল আলমসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এছাড়াও বাহিনীর নিজস্ব আইনে পিলখানাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫৭টি বিদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় ছয় হাজারেরও বেশি বিডিআর সদস্যকে আসামী করা হয়। গত বছরের ২০ অক্টোবর সদর রাইফেল ব্যাটালিয়নের ৭২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়ার মধ্যদিয়ে ৫৭টি বিদ্রোহের মামলার নিত্তি সম্পন্ন করা হয়। তবে ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি হত্যাযজ্ঞ মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু করা হলেও অদ্যাবধি এ বিচার প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব হয়নি। ৫৭টি বিদ্রোহ মামলায় বিডিআরের নিজস্ব আইনে গঠিত বিশেষ আদালতে পাঁচ হাজার ৯২৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হয় ৮৭০ জনকে। একইসঙ্গে সকল সাজাপ্রাপ্তকে ১০০ টাকা করে জরিমানা ও চাকরিচ্যুত করা হয়। এসব মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন ১১৫ জন বিডিআর সদস্য। খালাসপ্রাপ্ত সকল বিডিআর সদস্যই বর্তমানে বিজিবিতে (সাবেক বিডিআর) চাকরি ফিরে পেয়েছেন। হত্যাযজ্ঞ মামলায় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও সিআইডি'র প্রায় ৪০ সদস্য তদন্ত কাজে তাকে সহায়তা করেন। তদন্তের পর হত্যাযজ্ঞ মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে ও পরে সম্পূরক চার্জশিটে আরো ২৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। বেসামরিক ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু, বিএনপির স্থানীয় নেত্রী সুরাইয়া বেগম ও আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক বিডিআর সদস্য তোরাব আলীও রয়েছেন। এ মামলার ২০ আসামী পলাতক রয়েছেন। অপরদিকে হত্যা মামলার সঙ্গে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটিও চলছে একই আদালতে। এই মামলায় প্রথমে ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। পরে আরো ২৬ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়ায় এ মামলায় মোট আসামী দাঁড়ায় ৮৩৪ জনে। তাদের মধ্যে মারা যান তিনজন।
বেদনাবিধুর দিবসটি পালনের লক্ষ্যে পিলখানায় নিহতদের জন্য দোয়া, মিলাদ মাহফিল, কবরে ফুল দেয়ার মতো স্বাভাবিক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে বিজিবি'র পক্ষ থেকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিজিবি'র জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা জানান, পিলখানা হত্যাযজ্ঞ দিবসে পিলখানাসহ বিবিবি'র সকল রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান, ইউনিট ও বিওপি পর্যায়ে আজ বাদ ফজর পবিত্র কুরআন খতম, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সকাল ১০টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী (একত্রে), তিন বাহিনীর প্রধানগণ (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে) শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুস্তবক অর্পণ করবেন। আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় পিলখানার বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদ ব্যক্তিবর্গের রূহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক, শহীদ ব্যক্তিবর্গের নিকটাত্মীয়গণ, পিলখানায় কর্মরত সকল অফিসার, জেসিও, অন্যান্য পদবীর সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মচারীগণ অংশগ্রহণ করবেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন