ছাত্রলীগের তাণ্ডব থামার লক্ষণ নেই। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিন থেকে সেই যে সন্ত্রাস শুরু করেছে চার বছর পরও সমানতালে তা অব্যাহত রেখেছে ছাত্রলীগ। নানাভাবে তাদের লাগাম টেনে ধরার কথা শোনানো হলেও বাস্তবে এর দেখা মেলে না। খোদ প্রধানমন্ত্রীর কথাও হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। এটা ছাত্রলীগের সফলতা না প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতা তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু এতে করে সন্ত্রাস থেমে যাবে একথা বিশ্বাস করার মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। গতকালের আমার দেশসহ বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত সিলেট এমসি কলেজে আবারও ছাত্রলীগের তাণ্ডবের সচিত্র খবর থেকে এর বিপরীত কিছু বলার সুযোগ নেই।
একটি পত্রিকা লিখেছে, সিলেট এমসি কলেজে দা, রামদা, চাপাতি, হকিস্টিক দিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে নবীনদের স্বাগত জানিয়েছে ছাত্রলীগ। প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, এসব অস্ত্র হাতে সেখানে ছাত্রলীগের এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে ধাওয়া করছে। এতে কয়েকটি দোকান ও মোটর সাইকেল ভাংচুর ছাড়াও দু’পক্ষের অন্তত ১০ জনের আহত হওয়ার কথা জানা গেছে। কর্তব্যরত পুলিশের যথারীতি নীরব ভূমিকা পালনের খবরও দিয়েছে বিভিন্ন পত্রিকা। গত বছরের ৮ জুলাই সাধারণ ছাত্রদের প্রতিরোধের মুখে একত্রিত হয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের শতবর্ষী ছাত্রাবাসটি জ্বালিয়ে দেয়ার পর নিজেদের আধিপত্য নিয়ে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। এসব সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হলেও পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করেনি। এর আগেও ২০১০ সালে সরকারি কলেজ ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তত্কালীন ছাত্রলীগ সভাপতি যার বিরুদ্ধে দুটি হত্যাকাণ্ডসহ অসংখ্য অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এখন নেতৃত্ব হারালেও তার তাণ্ডব থামেনি একটুও। এই বহিষ্কৃত সভাপতি গ্রুপের সঙ্গে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গ্রুপের সংঘর্ষে সম্মান প্রথমবর্ষের নবীনবরণ অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। দুই গ্রুপের পেছনেই সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ইন্ধন থাকার কথা গোপন কিছু নয়। তাই প্রশাসন ও পুলিশ দেখেও দেখে না ছাত্রলীগের সন্ত্রাস। এসব সোনার ছেলের কাণ্ডকারখানা বলে শেষ করা যাবে না। গতকাল প্রকাশিত আরেকটি খবরে জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩৫টি উত্তরপত্র উদ্ধার করা হয়েছে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদকের কাছ থেকে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ইংরেজি (আবশ্যিক) বিষয়ের এসব খাতা অবৈধ পথে বের করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উত্তর লিখে জমা দেয়ার আগেই ধরা পড়ে গেছে সহযোগীসহ এই ছাত্রলীগ নেতা। অন্যদিকে পরীক্ষার হলে খাতা দেখতে না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে এক কলেজ ছাত্রকে পুলিশের সামনেই পিটিয়ে আহত করেছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। ৯ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। এদিকে ২২ জানুয়ারি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডার জমাদানে বাধাদান ও শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে সেখানকার ছাত্রলীগ সভাপতি, সম্পাদকসহ ৭ নেতাকে কারণ দর্শানো নোটিশ ও ২ বছরের জন্য সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার খবরও পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এ ধরনের লোক দেখানো পদক্ষেপ যে ছাত্রলীগ থোড়াই কেয়ার করে সেটা এখন আর কারও অজানা নেই। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব বহিষ্কৃত ক্যাডারের দাপট আরও বেড়ে গেলেও সেদিকে কেউ দৃষ্টি দেয় না। প্রশাসন ও পুলিশ তাদের আগের মতোই খাতির করে চলতে বাধ্য হয় রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে। ফলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ছাড়া অন্য কোনো চেতনাই কাজ করে না। সবকিছু মুখের বুলিতেই আটকে থাকে। ছাত্রলীগের এই বেয়াড়াপনা এ সরকারের শেষ দিনের আগে থামার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সে আশাও কেউ করে না।