বৈশাখ মাসের মধ্য দুপুর ,হিমু বসে আছে মগবাজার ফ্লাইওভার এর উপর, সে পরে আছে হলুদ রং এর PPE, এই জিনিস রুপাই ব্যাবস্থা করে দিয়েছে, প্রচন্ড গরম পরেছে হিমুর গরম লাগার কথা কিন্তু তার লাগছে শীত শীত, হিমুর পাশে যে কুকুর টা বসে আছে তার নাম বাঘা, এই নাম হিমুই তাকে দিয়েছে। কারো নাম দেয়ার ব্যাপারে কি বাবা তার ডাইরেতে কিছু লিখে গিয়েছে? সেটা এখন হিমুর মনে পরছে না। আজকাল আর কোন কিছুই ওর মনে থাকেনা, এই যেমন রুপার বিয়ে, বিয়ে ঠিক হয়েছে এক ডাক্তারের সাথে, ঘটক মজেদা খালা, কিন্তু লকডাউনের জন্য বিয়ে আটকে গেছে খালাই হিমুকে জানিয়ে ছিলো খবরটা কিন্তু হিমুর সেটা মনে নেই।
হিমু বসে আছে ডাক্তার সাহেবের চেম্বারে, উনি আসলেই ভদ্রলোক, পৃথিবীতে দয়াময় মানুষ কে অনেক গুল গুন সবাইকে দেননি যার একটি তিনি ডাক্তার সাহেব কে দিয়ছেন। আর সেটা হচ্ছে না চমকে যাবার ক্ষমতা। হিমু যখন ওনাকে বলল-' আপনি যে মেয়েকে বিয়ে করবেন সে আমার প্রেমিকা আমি ওকে খুব ভালোবাসি' ডাক্তার সাহেব 'ও আচ্ছা' বলে বললেন- 'বসুন হিমু সাহেব। চা, বিস্কুট খান তার পরে আপ্নার সমস্যা নিয়ে কথা বলা যাবে। এখন আছি মহা ঝামেলায়, করনার রোগী দের নিয়া চিন্তা, মানুষ গুলান চোখের সামনে মারা যাইতেছে কছুই করতে পারতেছি না বড়ই কষ্টের কথা।
হিমু এসেছিলো ডাক্তার সাহেব কে চমকে দিতে, জীবনে প্রথম সেই চমকে গেলো।
ডাক্তার সাহেবের চেম্বার থকে বের হয়ে হিমু যাচ্ছে দক্ষিন খানের দিকে, এক আমলার সাথে দেখা করবে, ভদ্র লোক অত্যান্ত জটিল ধরনের মানুষ কিন্তু করনার আতংকে আধমরা হয়ে আছে, এখন তাকে দিয়ে যে কোন কিছু করানো সম্ভব, গতকাল মন্টুর সাথে দেখা, রাস্তায় ভিক্ষা করে, যেভাবে হাচি আর কাশি দিচ্ছিলো তাতে কিছুই বলা যায় না, হিমু জানতে চেয়ে ছিলো, কিরে? মন্টু বলে ছিলো স্যার ঘরে খাওন নাই, সবারি জ্বর ঠান্ডা কাশি, আমি বাইর হইছি ভিক্ষা করতে, এহন ভিক্ষা দিবো কে? সবাই তো ঘর বন্ধী, তিন দিন ধইরা প্যাটে ভাত পরে নাই।
মন্টুদের বস্তির সামনে একটা চালের বস্তা ভর্তি ট্রাক দাড়িয়ে আছে, আমলা সাহেব কথা রেখেছেন, হিমু বলেছিলো এক ট্রাক চাল বস্তিতে বিলিয়ে দেন, আপনাকে করনা স্পর্শ ও করবে না। দুনিয়া বড়ই আজিব জায়গা এই খানে কে যে কখন কি বিশ্বাস কইরা ফেলে বোঝা মুশকিল।
আর 'রূপা' তার তো লকডাইনের ভেতরেই বাস, সেই বারান্দা সেই গ্রীল চিরো অপেক্ষা হিমুর জন্য, কিন্তু রুপা জানে না হিমুরা কখনো ফিরে আসে না।
হিমু আজিমপুরে করনার মৃত ব্যাক্তির কবর দেয়া দেখছে দুরে দ্বাড়িয়ে, তার পাশে দাড়িয়ে আছে বাঘা,
হিমু কাছে যাচ্ছে না, কারন অতি দুঃখ এবং অতি সুখের কাছা কাছি হিমুরা কখনো যায় না, এগুলোর কোন কিছুই তাদের স্পর্শ করে না।
মুখবন্ধঃ এমনি লিখেছি, কোনো কারন নাই, অকারন।