somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবু ক্বাতাদা (রা) এবং মরুভূমিতে মহানবী স ।

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





আবু ক্বাতাদা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন---
.
আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সাথে কোন এক সফরে ছিলাম। তিনি বললেন, তোমরা যদি আগামীকাল পানি না পাও তাহ’লে তোমার পিপাসার্ত হবে। তখন ত্বরাপ্রবণ কিছু লোক পানির খোঁজে রওয়ানা হ’ল। আর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সাথে থাকাকে আবশ্যক করে নিলাম। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বাহন তাঁকে নিয়ে ঝুঁকে পড়ছিল আর তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। আমি তাঁকে ঠেকা দিলাম, তিনি আমার উপর হেলান দিলেন। কিছুক্ষণ পর আবার তিনি ঢলে পড়লেন, আমি তাঁকে ঠেস দিলাম। তিনি আমার উপর হেলান দিলেন। আবার তিনি এতটাই হেলে পড়লেন যেন সওয়ারী থেকে পড়ে যাবেন। আমি তাঁকে ঠেকা দিয়ে সতর্ক করলাম। এবার তিনি জেগে উঠে বললেন, লোকটি কে? আমি বললাম, আবু ক্বাতাদা। তিনি বললেন, কতক্ষণ ধরে তোমার এমন পথ চলা হচ্ছে? আমি বললাম, আজ সারা রাত ধরে। তিনি বললেন, তুমি যেমন আল্লাহর রাসূলকে হেফাযত করলে আল্লাহও যেন তেমনি তোমাকে হেফাযত করেন। তারপর তিনি বললেন, শেষ রাতে আমরা যদি একটু ঘুমিয়ে নিতাম! অতঃপর তিনি একটা গাছের নিকট গিয়ে সেখানে বাহন থেকে অবতরণ করে আমাকে বললেন, লক্ষ কর কাউকে দেখতে পাও না কি? আমি বললাম, এই একজন আরোহী, এই দুইজন আরোহী, এভাবে সাতজন পর্যন্ত হ’ল। তিনি বললেন, তোমরা আমাদের সালাত সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকবে। তারপর আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু সকালের সূর্যের তাপ ব্যতীত আর কিছুই আমাদেরকে জাগ্রত করেনি। আমরা জেগে উঠলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর সওয়ারীতে আরোহন করলেন এবং কিছু দূর পথ চললেন। আমরাও তাঁর সাথে কিছু দূর গেলাম। তারপর তিনি বাহন থেকে নেমে বললেন, তোমাদের কাছে কি পানি আছে? রাবী বলেন, আমি বললাম, হাঁ, আমার কাছে একটা পানির পাত্র আছে, তাতে সামান্য পানি আছে। তিনি বললেন, ওটা নিয়ে এসো। আমি তাঁর নিকট সেটা নিয়ে এলাম। তিনি সবাইকে বললেন, তোমরা এটা থেকে ওযূ কর, তোমরা এটা থেকে ওযূ কর। লোকেরা সকলে ওযূ করল। পাত্রে এক ঢোক পানি থেকে গেল। তিনি বললেন, আবু ক্বাতাদা, এই এক ঢোক পানি সংরক্ষণ কর। অচিরেই এর জন্য একটা ঘটনা ঘটবে। তারপর বেলাল (রা) আযান দিলেন। তারা ফজরের আগের দু’রাক‘আত ছালাত আদায়ের পর ফজর ছালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি সওয়ারীতে চড়ে বসলেন, আমরাও সওয়ার হলাম। এ সময় তাদের কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলল, আমরা আমাদের সলাতে গাফলতি করে ফেলেছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের কথা শুনে বললেন, তোমরা কী বলাবলি করছ? যদি তোমাদের জাগতিক বিষয়ে কিছু বলাবলি কর তবে তোমরা তা করতে পার, আর যদি তোমাদের দ্বীনী কোন বিষয় হয় তাহ’লে আমার কাছে বল। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ), আমরা আমাদের সলাতের বিষয়ে অবহেলা করে ফেলেছি। তিনি তখন বললেন, ঘুমের মধ্যে কোন অবহেলা নেই, অবহেলা জাগ্রত অবস্থায়। যদি এমন কিছু ঘটে যায় তবে তোমরা তখনই (ঘুম থেকে জেগেই) সলাত পড়ে নেবে। আর আগামী দিন যথাসময়ে পড়বে। তারপর তিনি বললেন, লোকজনের খবর কিছু অাঁচ করতে পারছ কী? তারা বলল, আপনি গতকাল বলেছিলেন, তোমরা আগামীকাল পানি না পেলে তোমাদের পিপাসার্ত হ’তে হবে- তাই লোকেরা পানির খোঁজে গেছে। তিনি তখন বললেন, ঐ লোকেরা তাদের নবীকে হারিয়ে ভোর করেছে। এ দিকে তারা বলাবলি করতে লাগল যে, নিশ্চয়ই নবী করীম (ﷺ) পানির কাছে রয়েছেন।
.
দলের মধ্যে আবুবকর ও ওমর (রা)ও ছিলেন। তাঁরা বললেন, হে লোক সকল! নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তোমাদের পেছনে রেখে নিজে আগেভাগে পানির ধারে পৌঁছে যাওয়ার মানুষ নন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তিন বার বললেন, লোকেরা যদি আবুবকর ও ওমরকে অনুসরণ করত তাহ’লে তারা সঠিক দিশা পেত।
.
তারপর যখন দুপুরের তাপ তেতে উঠল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উচ্চকণ্ঠে তাদের অবস্থা সমদ্ধে জানতে চাইলেন। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! পিপাসায় আমরা ধ্বংস হয়ে গেলাম, আমাদের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। তিনি বললেন, তোমাদের উপর কোন ধ্বংস নেমে আসবে না। তারপর তিনি বললেন, আবু ক্বাতাদা! পানির পাত্রটা নিয়ে এসো। আমি তা নিয়ে এলাম। তিনি বললেন, আমার জন্য আমার পাত্রটা খুলে দাও (অর্থাৎ তিনি তাঁর পানিশূন্য পাত্রের কথা বলছিলেন)। আমি সেটার মুখ খুলে তাঁকে দিলাম। তিনি তখন তাতে পানি ঢালতে লাগলেন, আর লোকেরা তা পান করতে লাগল। পানির নিকট লোকেরা হুমড়ি খেয়ে পড়ল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হে লোকেরা! তোমরা সুশৃঙ্খলভাবে পানি গ্রহণ কর। তোমাদের সকলে পরিতৃপ্ত হয়ে ফিরে যেতে পারবে। দলের সকল লোক পানি পান করল। শেষ পর্যন্ত আমি আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাড়া আর কেউ বাকী থাকল না। তিনি আমার জন্য পানি ঢেলে দিয়ে বললেন, আবু ক্বাতাদা! পানি পান কর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি পান করুন। তিনি বললেন, লোকদের পানি পরিবেশনকারী সবার শেষে পান করে। ফলে আমি পান করলাম, তারপর তিনি পান করলেন। পানির পাত্রে পানি আগে যেটুকু ছিল ততটুকুই থেকে গেল। এদিন তারা ছিল তিন শত জন
.
[মুসলিম হা/৬৮১, আহমাদ হা/২২৫৯৯, মিশকাত হা/৫৯১১]

পোস্টটি লিখেছেন - মিনার ভাই ।।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:২৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×