ভোরের আলো ফুটে উঠেছে... অপরুপ সুন্দর দামেস্ক নগরী যেন আরও সুন্দর দেখাচ্ছে...
ফজরের আজান দেয়া হয়ে গেছে... কিছুক্ষণ বাদেই নামাজ শুরু হয়ে যাবে...
দুশ্চিন্তাগ্রস্থ চেহারায় দামেস্কের পূর্ব দিকের মসজিদের কাছেই দাঁড়িয়ে আছেন মুহাম্মাদ। কাছেই মুসলিম বাহিনীর সৈন্যরা নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে... আজকে নিঃসন্দেহে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। খুবই গুরুত্বপূর্ণ... খুবই...
গত দু দিনের যুদ্ধে অনেক মুসলিম মারা গেছেন... সামান্য সৈন্য অবশিষ্ট আছে... বাহিনীর নেতা হিসেবে তিনি চিন্তিত তো হবেনই...
এমন না যে, তিনি সেচ্ছায় এ দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বরং, মুসলিমরাই তাঁকে অনেক অনুরোধ করেছেন তাদের নেতা হবার জন্য... এত অনুরোধের পর তিনি না করতে পারেননি... তাই, আজ তিনি মুসলিমদের নেতা... ইমাম... তারা তাঁকে ডাকে মাহদী বলে... পথপ্রদর্শক... তাঁর নামই অনেকে ভুলতে বসেছে... মুহাম্মাদ...
যাক, তিনি শেষ বারের মতো, দূরে তাকালেন, ইজরাইল সীমান্ত ওদিকেই..... ওখানেই আছে তাদের শত্রু বাহিনী... তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে এক ভণ্ড ইহুদী... তাদের ভুলিয়ে ভালিয়ে দলে ভিড়িয়েছে... আফসোস এই দাজ্জালের (ভণ্ড) ছলনায় কত মুসলিম যে ইসলামচ্যুত হয়ে গেল... অথচ, নবী (স) তো বলেই গিয়েছিলেন... আফসোস...
আজই ফয়সালা হবে এ যুদ্ধের... আজই শেষ দিন হবে... নিশ্চয়ই আল্লাহ মুসলিমদের জয়ী করবেন...
তিনি ঘুরে পা বাড়ালেন মসজিদের দিকে...
ইমামতির জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন... ইকামত দেয়া হয়ে গেল...
কিন্তু, তখনই লোকদের চাপা চিৎকার শুনতে পেলেন তিনি... সবাই উপরে তাকিয়ে রয়েছে... তিনিও সবার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালেন আর সাথে সাথে বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লেন...
আকাশ থেকে নেমে আসতে দেখা যাচ্ছে একটা উজ্জ্বল আলোকে... কাছে আসতেই বোঝা গেল, ৩ জন আছেন সেখানে... দু পাশের দু জন এর গা থেকে উজ্জ্বল আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে দেখেই দূর থেকে মনে হচ্ছিল আলো আসছে... কিন্তু, মাঝের জনের দিকেই তাঁর দৃষ্টি আটকে গেল, কারণ, এতক্ষণ ভুলে থাকলেও এখন যে তাঁর মনে পড়ে গেছে...
মাঝবয়সী এক যুবককে দেখছেন তিনি...
মাঝারি উচ্চতা, লালচে ত্বক, গায়ে হলুদ রঙের কাপড়... তাঁর সুন্দর চুলে ভোরের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন চুলে পানি চিক চিক করছে, অথচ চুল শুকনো...
সাদা মিনারের উপর নামিয়ে দিলেন তাঁকে সেই জ্যোতিরমান দুই লোক... ধীরে ধীরে নেমে এলেন তিনি...
কারও আর তাঁকে চিনতে বাকি নেই... ইনিই যে ঈসা (আ) মসীহ...
সালাম বিনিময়ের পরেই ঈসা (আ) কে অনুরোধ করা হল, নামাযের ইমামতি করার জন্য... কিন্তু, তিনি প্রত্যাখ্যান করে বললেন, “এ উম্মতের নেতা আপনি, আপনিই পড়ান নামায...”;
শেষ পর্যন্ত, ইমাম মুহাম্মাদ আল মাহদির পিছনেই ফযরের নামায আদায় করলেন ঈসা (আ) আর মুসলিমরা...
নামায শেষে নতুন উদ্যমে প্রস্তুত হল মুসলিম বাহিনী... আজ যে তাদের বিজয়ের দিন... নবী ঈসা যে আজ তাদের মাঝে... আলহামদুলিল্লাহ...
দামেস্ক থেকে রওনা হল মুসলিম বাহিনী... ইজরাইল সীমান্ত এর দিকে... ঈসা (আ) এর মাতৃভূমির দিকে...
সীমান্তের কাছাকাছি আসতেই ইহুদী বাহিনীর চিহ্ন দেখা যেতে লাগল... এখনও তাদের ভণ্ড নেতাকে দেখা যাচ্ছে না... তবে কিছুক্ষণের মাঝেই হয়ত বেরিয়ে আসবে...
ঐ তো... বেরিয়ে আসছে...
যেই মুহূর্তে তার চোখ পড়ল ঈসার উপর, সাথে সাথে কেঁপে উঠল ভয়ে... কারন সে জানে, তাঁর মৃত্যু লিখা আছে ঈসার হাতেই... তার মানে আজকেই তার শেষ দিন?এতদিন ধরে যে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে সে, সব শেষ হয়ে যাবে? এ হতে পারে না... পালাতে হবে...
এদিকে ইহুদী বাহিনীতেও ছড়িয়ে পড়েছে ভীতি... তাদের পরাজয় যে কাছেই সেটা বুঝতে আর বাকি নেই... ফরমেশন ওলট পালট হয়ে যেতে লাগল... সবাই এদিক সেদিক পালাতে লাগল... আর মুসলিম বাহিনী “আল্লাহু আকবার” রবে তাড়া করল ইহুদীদের... আজ যে তাদের বিজয়...
এদিকে রয়েছেন আসল মসীহ ঈসা আর ওদিকে রয়েছে ভণ্ড মসীহ... দাজ্জাল...
তার মনে তখন ঘুরছে পালাবার চিন্তা... উপায় একটা আছে... কাছেই এয়ারপোর্ট... বেনগুরিওন আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট... মাত্র কয়েক কিলোমিটার... ওখানে তাঁর ব্যক্তিগত বিমান আছে, তার প্রিয় সাদা বিমান... কোন মতে যদি ওখানে পৌঁছাতে পারা যায়... তাহলে আর তাকে ধরে কে...
সাথে সাথে উল্টো দিকে পালান শুরু করল সে...
সে কি পারবে??
কিছুক্ষণ পর পিছে তাকিয়েই তার ভয় আরও বেড়ে গেল... ঈসা যে তার পিছন পিছনই আসছেন... না, আরও জোরে যেতে হবে... ঐ তো দেখা যাচ্ছে, এয়ারপোর্ট...
কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেল সে... যাক, হয়ত এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম, এটা ভেবে পিছনে তাকাতেই দেখল, ঈসা তাঁর পিছনেই...
...
...
আর একটু এগুলেই হয়ত পালাতে পারত, ইসরাইলের বেনগুরিওন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের মেইন গেইটের সামনে মাটিতে পড়ে ভাবল দাজ্জাল... তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্ত এটা... আল্লাহ্র এক প্রিয় নবী ঈসা তাঁর সামনে... হাতে অস্ত্র (বর্শা) ...
থাক। আর না বলি... ঘটনা সবারই জানা... এটা একটা চিত্রকল্প মাত্র... কিন্তু হাদিস থেকে ধার করা...
indeed.
মুসনাদে আহমাদ,সহিহ মুসলিম,তিরমিযী,ইবনে মাজাহ হাদিস অবলম্বনে চিত্রকল্পটি আঁকা হয়েছে ।
নিচের ছবিটা ডেখলে ভাল বুঝতে পারবেন ।
মুল পোস্ট - আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ ভাই ।