কয়েকদিন ধরেই হোমপেজ জুড়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর বসানো ৭.৫% ভ্যাটের পোস্ট দেখতেছি। নিজের কথা কিছু লেখার পাচ্ছিলাম না, কারণ যা বলার সবই কেউ না কেউ বলে দিচ্ছে।
এটা বসানো ঠিক হইছে নাকি হয় নাই- এই ধরণের তর্ক দেখে ক্লান্ত, তাই তর্কে যাব না। এই কয়দিনের দেখার আলোকে দুই দলের কথাই বলি ঃ
পক্ষে ঃ ১। প্রাইভেটে পরে বড়লোকের ছেলেপিলে ,টাকার অভাব নাই । সামান্য কিছু টাকা বাড়লেই কি ?
২। টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট বেচতেছে , বহুত টাকা কামাইতেছে - এবার ভ্যাট দাও। এরা শুধু নামেই সেবামূলক , আসলে তো ঠিকই টাকার ধান্দা ; এবার লাইনে আসো।
৩। এদের গুণগতমান ঠিক নাই, এটার ভ্যাটের আওতায় আসলে হয়তো মান বাড়বে । শিক্ষা পণ্য না , কিন্তু এরা তো শিক্ষাটারে পণ্যের কাতারেই নিয়ে গেছে।.
৪।বসাইছে প্রতিষ্ঠানের
বিপক্ষে ঃ অনেক যুক্তিই হয়তো দেওয়া যায় , দুইটা বলি ঃ
১। " শিক্ষা কোন পণ্য না , যে এতে ভ্যাট বসবে " খুব সম্ভবত এই একটা যুক্তিই যথেষ্ট ।
২। প্রাইভেটে যারা পরে , তার ৮০% ই সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ; এখন ৭.৫% বাড়লে তাদের উপর চাপ পড়বে ।
এবার নিজের কিছু কথা বলি । আমার ফ্রেন্ডলিস্টেই এমন মানুষ আছে, যারা প্রাইভেটে পড়লেও টিউশন ফির টাকা নিজেরাই পার্ট টাইম জব বা টিউশনি করে দেয়। এমন দেখেছি, বাবা নেই- মা বহু কষ্টে পড়াচ্ছে ।ছাত্র/ছাত্রী খুবই ভাল, ভাল রেসাল্টের জন্য হয়তো ছার (waiver) পায়, তবুও কষ্ট হয়। টিউশন ফি বাড়লেও তার তিউশনির বেতন কিন্ত বাড়বে না, সেক্ষেত্রে ?
এবার বলি আমি কোন পক্ষে। নীতিগত দিক থেকে অবশ্যই আমি এই আন্দোলনের পক্ষে , কিন্তু আমি এই আন্দোলনে অংশ নেইনি। বাম মোর্চা থেকে শুরু থেকেই বিক্ষোভ মিছিল, আন্দোলন চলতেছে ; ফেডারেশন তো ধর্মঘটেরই ডাক দিয়ে দিছে।
কিন্তু নিজের কিছু ক্ষোভ থেকে যাই নাই, কেন এক এক করে বলি ঃ
১। প্রথম কথা হইলো , আমাদের কোন কিছুতে এদেরকে তো পাশে পাওয়াই না, উল্টা moja loss টাইপ কিছু পেইজে ফাজলামো করা হয় । যখন রাবিতে বর্ধিত ফির বিপরীতে আন্দোলন হয়, তখন এমন কোথাও শুনতে হয় " ২ টাকা বাড়ছে , তাতেই এতো আন্দোলন , ফকিন্নির পুত (সিরিয়াসলি এই ফকিন্নির পুত কথাটা যে কোন শালায় উদ্ভাবন করছে , দেখতে দেখতে বিরক্ত । )
২। বেশ কিছুদিন আগে লেগুনার আঘাতে ছাত্র মৃত্যু , এবং কোটাবিরোধী আন্দোলন এর সময় যখন শাহবাগে রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন হইছিল , তখন কিন্তু ঠিকই অনেক কথাই শুনতে হইছিল । (যাক, এগুলা বাদ দিলাম, সবখানেই কিছু না কিছু " ইয়ে" থাকে)
৩। কিন্তু সবচেয়ে বিরক্ত লাগসে যখন শুনছি , " কেন ঢাবি এই আন্দোলনে শরিক হইতেছে না " এই যুক্তিতে ঢাবির ওয়েবসাইট হ্যাক করা হইছে (হোক না সেটা ফ্রন্টপেজ, কোন অধিকারে করবে?) আমরা আমাদের দাবির জন্য কি অখন প্রাইভেট ভার্সিটিগুলার সাইট হ্যাক করবো gasp emoticon gasp emoticon ? আর তারা কি ভাবছিল , তারা আন্দোলনের ডাক দিবে , আর সবাই হুরমুরাই ছুটে আসবে ? নিজের উপর না পড়লে কেউ আগাই আসে না , এটাই বাস্তব। প্রেম করবেন আপনি, আর আপনার হয়ে মেয়েকে পটাই দিবে ভুপেন - এটা কি হয় ? আর ঢাবি কি দায়িত্ব নিছে, এ দেশের সব ইস্যুতে তারা আন্দোলন করবে ? পদ্মাসেতু হয় না ক্যান, জাফর ইকবাল বৃষ্টিতে ভিজে ক্যান, রুস্তমের বউ পালাইছে ক্যান, মরজিনার বিয়ে হয় না ক্যান, বদনায় পানি নাই ক্যান - সব ইস্যুতেই খালি আন্দোলন চলবে। ঢাবিয়ানদের আর কাজ নাই, সারাদিন খালি আন্দোলন করবে। আপ্নারাই বলেন সরকারীতে পড়াশোনা হয় না, খালি পলিটিক্স , ক্যাচাল, ভাংচুর - আবার নিজেরাই দরকারের সময় বলেন আমরা কেন নামি না।
যারা এই আন্দোলনের সংঘটক আছেন তাদের শুভেচ্ছা। আপনারা অনেক কষ্ট করতেছেন, যদি সফল হন তবে আসলেই একটা কাজের কাজ হবে। কিন্তু , কতিপয় কাষ্ঠবলদের কল্যাণে এই আন্দোলন সুনিপুনভাবে এখন পাবলিক-প্রাইভেট দ্বন্দ্বে পরিণত হইছে। প্রাইভেটের ভাই - বেরাদরেরা , আমি দুঃখিত । আমার বহুত তেল, যে কোন নৈতিক আন্দোলনেই থাকার চেষ্টা করি, কিন্তু এবার আমি নাই। নিজের অপমান মেনে নেওয়া যায় , কিন্তু নিজের পরিবার, প্রতিষ্ঠান আর দেশ এই ৩ টার অপমান মানা যায় না। আমার নৈতিক সমর্থন সবসময়েই থাকবে, কিন্তু সশরীরে এবার আমি নাই frown emoticon
* বি.দ্র. ঃ মেয়েটারে (দেহ পাবি , মন পাবি , ভ্যাট পাবি না ) এবার রেহাই দিন । ঐটা নিছকই ফাজলামো । আমাদের সমস্যা হইলো আমরা অর্গাজম বুঝি, কিন্তু সারকাজম বুঝি না।
একটা প্রশ্ন ঃ প্রাইভেটের ছাত্ররা যেভাবে রাস্তাঘাট বন্ধ করে আন্দোলন করতেছে, পাবলিকের পোলাপাইন অভাবে করলে কি হইত ? তখনো কি মনোভাব এমনই থাকতো ????