স্বর্গ ও নরক ভ্রমণ করবেন ঈশ্বর, প্রথম ঠিক হলো স্বর্গে যাবেন;
শুভ দিনক্ষণ দেখে জিব্রাইলকে নিয়ে একদিন রওনা হলেন।
‘এ-দিনটির কথা ওরা জানলে হৃদয় খোদাই করে লিখে রাখতো’—
যেতে যেতে বললেন জিব্রাইল;
ঝলমলে হয়ে উঠলেন মহান ঈশ্বর—‘হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ।’
প্রবেশমাত্র নাক চেপে ধরলেন প্রভু—‘কী ব্যাপার! কোথায় এলে?’
‘কেন!’—বললেন জিব্রাইল—‘আমরা তো স্বর্গেই এসেছি...’
‘দেখো, ভুল করনি তো!’—বিস্ময়ভরা কণ্ঠে ঈশ্বর!
বের হয়ে ভালো করে দেখলেন—হ্যাঁ... এই যে... স্পষ্ট...
স্বর্ণাক্ষরে লেখা ‘স্বর্গোদ্যান’; ফিরে নিঃসংশয়ে জানালেন জিব্রাইল;
‘তাই!’—ঈশ্বরের চোখেমুখে উৎকণ্ঠার ছাপ!
চারপাশ দেখতে দেখতে হেঁটে চলছেন পরম করুনাময়
পেছনে পেছনে নিঃশর্ত-চিরদাস জিব্রাইল।
‘তাহলে এসব কিসের আলামত...’
কিছুটা চড়া গলায় ঈশ্বর—‘তুমি কোনো গন্ধ টের পাচ্ছ?’
‘হ্যাঁ!’—উদ্বিগ্ন চোখেমুখে জিব্রাইল—‘তা-ই তো!’
খেজুরগাছ তলায় দেখেতে পেলেন কুৎসিত এক ভূত
কাছাকাছি যেতে যেতে মনে হল ভূত নয়—
উপর দিকে চেয়ে হা-করে আছে একজন মানুষ
গায়ে তার পিঁপড়ে ও মৌমাছির বাসা;
জিব্রাইল ডাকলেন, সাড়াশব্দ নেই...
আবার ডাকলেন, নাহ্!... কোনো সাড়াশব্দ নেই...
অঃতপর পাছায় এক লাথি মারলেন!
এদিকে লজ্জায় অন্ধ হয়ে আসে ঈশ্বরের চোখ!
এবার নিশ্চুপ বাদশার গল্প বলতে বলতে নরকের পথ ধরলেন
হাঁটতে পারছেন না ঈশ্বর—মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর মত
চোখে নেমে আসে সীমাহীন অন্ধকার।
‘নিজের চোখকেও আমি বিশ্বাস করতে পারছি না...’
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন ঈশ্বর!
নমনীয় চোখে তাকালেন জিব্রাইল;
ঈশ্বর নন, এ যেন নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারান দুঃখে
ভেঙে পড়া মানুষের কণ্ঠস্বর—
‘এখানে না আগুন জ্বলার কথা, মিষ্টি বাতাস এলো কীভাবে?’
চারদিকে তাকালেন জিব্রাইল, কী যেন ভাবলেন—
‘হ্যাঁ, কিছুই তো ভালো ঠেকছে না!’
করুণ হয়ে এলো জিব্রাইলের নিস্পাপ মুখখানা।
তেরে নানা তেরে নানা তেরে নানা নানারে...
হৃদয়-উত্তাল ডেউয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লো ঈশ্বর এসেছেন।
অভিবাদন জানালেন সক্রেটিস, অতিথিশালায়
ঝলমলে পোশাকে সজ্জিতা এক রূপসী মদ পরিবেশন করলেন;
সঙ্কোচ কাটিয়ে দ্রুত নিজেকে সামলে নেন ঈশ্বর;
এক এক করে ঈশ্বরের চোখে ভেসে উঠলো এতদিনের স্বপ্নসাধ—
সবকিছু কেমন গোলমেলে, কেমন যেন গোলমেলে মনে হয়!
তিনি এবার যেতে চাইলেন, সবাই ধরল—
না, না হুজুর, তা হয় না, একদিন থাকেন, অন্তত একটা দিন...
এত অনুরাগী দেখে খুশিতে বাকবাকুম ঈশ্বর থেকে গেলেন।
সন্ধ্যায় এক জলশার উৎসবে
ঈশ্বরকে লাল গোলাপের সংবর্ধনা দেয়া হল;
‘চাঁদ বদনি নাচ তো দেখি/ তালে তালে নাচ তো দেখি...’
শ্যাম নাগরের বাঁশির তালে তালে নাচলেন শ্রী দেবী,
রবীন্দ্রনাথ গাইলেন—‘আকাশ জুড়ে শুনিনু
ঐ বাজে ঐ বাজে তোমারি নাম সকল তারার মাঝে...’
প্রাণের আবেশে শিউরে উঠলেন ঈশ্বর, ভিজে এলো চোখ;
জিব্রাইল ঘাবড়ে গেলেন, অপরাধীর মত নিচু গলায় বললেন—
‘হুজুর, আপনি কি এখন যাবেন?’
ভুল করা লোকের মতো চোখ তুলে তাকালেন ঈশ্বর—
‘তুমি এখানকার সাইনবোর্ডটি খুলে স্বর্গে টাঙ্গিয়ে দাও,
স্বর্গের সাইনবোর্ডটি এনে এখানে টাঙ্গিয়ে দাও।’