যতদূর মনে পড়ে; দিনটি ছিল সোমবার! ৯৭ এর জুন জুলাইয়ের দিকের পড়ন্ত বিকেলের ঘটনা! সবে মাত্র এসএসসি শেষ করেছি! হাতে অফুরন্ত সময়! দোতলার দক্ষিনমুখী বারান্দাওয়ালা ছোট্ট নিরিবিলী ঘরটায় HP Lovecraft এর At The Mountains Of Madness বইটার পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছি আর অচেনা ইংরেজী শব্দের মিনিং বুঝার চেস্ট করছি! যদিও বই পড়ার বাতিক তেমন এক্টা ছিল না কোন কালেই! তথাপিও শিক্ষক বাবার সমৃদ্ধ ব্যাক্তিগত লাইব্রেরীতে দেশী বিদেশী বিভিন্ন ভাষায় লেখা গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস হরেক রকমের বইয়ের মাঝারী সংগ্রহ মফস্বলে বেশ সমৃদ্ধ লাইব্ররী বলেই চালিয়ে দেয়া যায়! মাঝে মাঝে ওখানটায় ঢুকে বিভিন্ন বইয়ের মলাটে হাত বুলাই! নির্জন এ রুমটায় এই পড়ন্ত বিকেলটা আমার কাছে সারাদিনের সবচেয়ে আকাঙ্খিত মুহুর্ত! কারনটা অবশ্য বই পড়ার উপযুক্ত সময় বলে নয়! পাশের ছাদে হেড মিস্ট্রেছের একমাত্র (লালপরী) কইন্যা ঠিক এই সময়টাতেই ফুলগাছ পরীচর্যার ফাকে চোখেচোখে টুকটাক ভাব বিনিময় করত! আর জায়গাটাও একদিকে ছিল যেমন নিরীবিলি তেমনি দাড়োয়ান টাই মায়ের নজরদারী মুক্ত! থাক সে এক অন্য রহস্যোপন্যাস!
আমার লালবুড়ী ব্রাউন কালারের টুকটুকে জামা পরে এসেছে ফুলবাগানের পরিচর্যায়! প্রতিদিনের নিয়মের ব্যাত্তয় ঘটিয়ে আজকে লালবুড়ীটাই আগে কথা পারল :-
য়্যাই হুপু, তুই প্রতিদিন এইখানে এসে যেভাবে আমার বাগানের উপর নজরদারী করছিস! ওদিকে তোর লালবুড়ির মনের নজরদারীতো আরেকজন বেশ ভালই চালিয়ে যাচ্ছে!
কি কইলা? কে কার কিসের নজরদারী করছে?
একটু খোলাসা কইরা কওতো শুনি?
বুদ্ধু কোথাকার! কোন খবর রাখিস? ওই ব্যাপারীপাড়ার জামিল মাস্টারের ছেলে নাফিস তো তোর লালবুড়ির জন্য দেওয়ানা!
তো কি হৈছে?
লালবুড়ির মনের পাহারাদারী তোর হুপুর চেয়ে ভালমত করতে পারলে তো ভালই! (মনে মনে নাফিসরে দেইখা নেয়ার হুমকি!)
একটা কাজ কর! তুই পোলাডারে লালবুড়ির মনবাগানের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে বারণ কর!
আমি বারন করতে যাব কেন? যার মনের বাগানের বেড়া এত্ত নড়বড়ে তারেই কও ঠিক মত বেড়া দিতে! আমি প্রিন্সিপালের পোলা ! ওই সব ছাইপাশ ক্ষেতখামারের পাহারাদারী করতে পারুম না!
তোর লালবুড়ি য়্যাত্তসব বুঝেনা! পারলে পাহারাদারী কর না পারলে বাগানে কখন ঝড় আইসা তছনছ কৈরা যায় তার দায়দায়িত্ব আমার নাই!
ঠিক তখনই (মনে মনে) ডিশিশান নিয়া ফালাইলাম যে করেই হুক নাফিস্যারে দেইখা নিমু!
২.
পরদিন সকাল এগারটা পুরানপাড়া ব্রীজের পারে নিত্যদিনের বন্ধুমহলের আড্ডাস্থলে একে একে হাজির সবাই!
যথারীতি নাফিসও হাজির! কথা প্রসংগে কে কত্ত সাহসী তার বেলুনী উপস্থাপন! নাফিস কথা তুলতেই বাগড়া দিল মতিন! য়্যাহ! তুই তো একটা ভীতুর ডিম! এখনও সন্ধারাতেই ইস্টিশান থেইকা একলা একলা বাসায় আসতে সংগে লাগে তিনজন!
ও সরাসরি চ্যালেঞ্জ! উহু আমি একদমই ভীতু নই!
এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিল হুপু!
আচ্ছা তুই যে য়্যাত্ত সাহসের ফুটান দিচ্ছিস! পারবি? রাইত আড়াইটায় এই পুরানপাড়ার (গাবতলীর) গোরস্থানে একলা কইরা আসতে?
বলাবাহুল্য সারা নরসিংদী শহরের এই জায়গাটা তখন ছিল একদমই জনাকীর্ণ! দিনের বেলায়ই কেমন যেন গা ছমছমে, ভৌতিক রকমের শূন্যতা!
ও কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে অবশেষে নিজের বাহাদুরী-রকমের সাহসীকতা দেখাতে বলেই বসল! হ পারুম! কি করতে হৈব আর কখন করতে হৈবু! বল! ধর বাজী!
হুপু র চিন্তাতো সেই একই কেন্দ্রে! বাজীতে হারলে তুই লালবুড়ীর বাগানে পাহারাদারী করতে পারবিনা!
ঠিকাছে! আর জিতলে?
জিতলে আমি তোদের সবাইরে পেট চুক্তি কার্তিকের মিস্টি খাওয়ামু!
আজ রাতেই ফাইনাল!
বাসায় ফিরে তো মহা চিন্তায় পরে গেল হুপু! ব্যাপারটা কি দাড়াল? আবেগী বোকামী করতে যেয়ে লালবুড়ীর ব্যাপারটাও বন্ধুমহলে চাউর হল! আর জেদ্দী নাফিস যদি সত্যি সত্যি রাইত তিনডার সময়ে ওখানে যেয়ে সুস্থ ফিরে আসে তবে উপ্রি হিসেবে নিদেন পক্ষে ১০ কেজি মিস্টি!
ব্যাপারতো সেটা না! যে করেই হুক! কৌশলে নাফিস্যারে এক্টা উচিত শিক্ষাই দিতে হৈবু!
এই মস্ত বড় সুযোগ! একদিকে বাজীতে হারাতে পারলে বন্ধুমহলে ওর প্রেস্টিজতো পাংচারতো হবেই উপ্রি পাওনা হিসেবে লালবুড়ীর কাছে ওর ভাবমর্যাদা ধূলোয় মিটিয়ে দেয়ার কৃতিত্ব হিসেবে হুপুর অবস্থান আরো মজবুত হবে বৈ কি?
কিভাবে দেয়া যায় উচিত শিক্ষা?
[০চলবে:-- গল্প খুব বড় হয়ে যাচ্ছে! ভয়ে আপাতত খন্ডল্প০]
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:৩২