সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার চা শিল্পাঞ্চল শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশীদ্রোণ গ্রামের বেগম রাছুলজান-আব্দুল বারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু কিংবা শেষ হলে এমন মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। তবে এই সব কোমলমতি শিক্ষর্থীদের পিছনের কাহিনী সুখকর নয়। শুধু শিক্ষার আলো পেতে প্রতিদিন এত দূরের পথ পাড়ি দিচ্ছে তারা। ওরা কেউই ধনী ঘরের সন্তান নয়। চা শ্রমিক ,ইদন মজুর বাবা কিংবা মা এলাকার সঞ্চয় সমিতি থেকে কিস্তিতে টাকা মেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে বাই সাইকেল কিনে দিয়েছেন। তবুর শিক্ষার আলো পৌচুক তাদের ঘরে এটাই প্রত্যাশা।
প্রতিদিন চা বাগান আর ১০ কিঃমিঃ কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে যখন স্কুলে পৌছে এই সব সাইকেল বালিকারা কখনো কখনো স্কুলের ক্লাস শুরু হয়ে যায়। চোখ জুড়ানো চা বাগান আর ধান ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে আঁকাবাঁকা পিচঢালা সরু পথ নিবিগ্ননে পেরোতে অনেক কষ্ট করতে হয়। আছে বখাটেদের উৎপাত, দূর্ঘনার আংশকা। তবু থেমে নেই পথচলা। পরনে স্কুলড্রেস। কাঁধে বইয়ের ব্যাগ মুখে অমলিন হাসি।
প্রথম যে ছাত্রী ২০০০ সালে বাই সাইকেলে চড়ে স্কুলে এসেছিলন তার নাম লাবনী কুর্মী । সে এখন এইচ এস সি'র ছাত্রী। তার পথ অনুসরন করে এখন স্কুলে আসে অসখ্য চাত্রী।
সুদুর লাখাইড়া চা বাগান, দনি টিকরিয়া, হোসনাবাদ, কালিগাট থেকে মেয়েরা আসে বাইসাইকেলে চড়ে। কালিঘাট পোষ্ট অফিস হয়ে কাচা রাস্তা ধরে তাদের বিরামহীন ছুটে চলা। মাঝে পিপাসা মিটাতে একটু বিরতি। তখন কথা হয় তাদের সাথে। ৬ষ্ট শ্রেনীর ছাত্রী রিনা রাণী কুর্মী, ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী পিপাসা রাজঘাট, তৃষনা কুর্মী, ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী দিপিকা তাতী, রিনা রানী জানায়, পড়াশুনার অনেক খরচ। তবু তাদের পড়াশোনা করে অনেক বড় হতে হবে। তাদের এলাকা থেকে স্কুলে আসতে গাড়ী কিংবা রিক্সা পাওয়া যায়না । পেলেও আসতে যেতে এক'শ টাকা লেগে যায়। তাই বাইসাকেল কিনে দিয়েছেন তাদের বাবা মা।
আসতে যেতে প্রথম প্রথম বখাটে ছেলেদের উৎপাতসহ ছোট খাট অনাকাংখিত ঘটনা ঘটতো। বিশেষ করে দীর্ঘ পথ কাচা রাস্তা থাকায় বর্ষা মৌসুমে পিচ্চিল পথে দূর্ঘটনা ঘটতো। এখন সবই সহে গেছে। রাস্তায় তাদেরকে মানুষ সাবাস বাই সাইকেল বালিকা বলে ডাকে। রিক্সা কিংবা বড় গাড়ী তাদেরকে সাইড দিয়ে চলার পথকে সুগম করে দেয়। এতে তাদের এই যাত্রাকে প্রেরনাময় মনে হয়। এমন কথা জানালো বাইসাইকেল বালিকা ঝুমুর রানী নাগ, তৃষ্ঞা বৈদ্য, নাজমিন আক্তার, নিপলি তাতী প্রমূখ। তাদরে যাত্রা কখনো দশ কিঃমিঃ আবার কখনো তিন কিঃমিটার। কেউ কেউ কাছাকাছি থাকে বলে তাড়াতাড়ি চলে আসে। আবার বৃষ্টির দিনে আসতে খুব কষ্ট হয়। রাস্তাটা পাকা থাকলে এমন হতো না।
তারা হেসে বলে বাইসাইকেল চালানো না জানলে কিংবা এই বাহনটি না থাকলে হয়তবা লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যেত। তারা পড়তে চায়। তবে তাদের আফসোস যদি সরকারী ভাবে কোন যানবাহন থাকতো স্কুলে আসার জন্য তাহলে এত কষ্ট করে আসতে হতো না।
এখন তাদের দেখে অন্য মেয়েরাও উৎসাহ বোধ করে সাইকেলে আসতে। স্কুলের সহপাটিরা টিফিনের ফাকে শিখে নিচ্ছে সাইকেল চালানো।
রাসুলজান উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক বিমান বর্ধন ছুটিতে ছিলেন কথা হয় সহকারী প্রধান শিক সুশান্ত দেবনাথ এর সাতে, তিনি জানান, মেয়েরা বাই সাইকেলে চড়ে স্কুলে আসে এটা একটা রীতির মত হয়ে গেছে। তবে তিনি চান না এসব কোমল মতি ছাত্রীরা অনাকাংখিত দূর্ঘটনার শিকার যাতে না হয়। স্কুলের সহকারী শিক অঞ্জন পাল, শিখা শর্মা, রিনা বিশ্বাস জানান, যদি রাস্তাটা পাকা হতো তাহলে তাদের মেয়েদের এত কষ্ট হতো না। তাছাড়া যদি সরকারী ভাবে কোন যানবাহনের ব্যবস্থা করা হতো তবে তাদের কষ্ট লাগব হতো।