'জামায়াতের লোকেরা বিদ্যুতের নাটবল্টু খুলে দেয় বলেই জনভোগান্তি।' সংসদ উপনেতা ও সরকার দলীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজেদা চৌধুরীর উক্তি। সাজেদা চৌধূরীর কথা সত্য হলে দেশে জামায়াত শিবিরের কেউ আর্জেন্টিনার সমর্থক নয়। গেল শনিবার খেলা চলাকালীন দেশে বিদ্যুতের অবস্থা ছিল শোচনীয়। সবে মিলে ৩০ মিনিট খেলা দেখেছিলাম। আর খেলা দেখায় অসুবিধা হওয়ায় ঐ রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ অফিসে যে হামলা হয়েছে তার জন্যও নিশ্চয়ই জামায়াত দায়ী কারণ সাজেদার কথা অনুযায়ী তারাই বদ্যুতের নাটবল্টু খুলে ফেলেছিল।
সেক্ষেত্রে ধারণা করি জামায়াতের লোকজন সম্ভবত নাইজেরিয়া কি আলজেরিয়ার সমর্থক হয়ে থাকবেন, কারণ এ দেশ দুটো মুসলিম দেশ। কিন্তু এ দুটো দেশের খেলার সময়ও লোড শেডিং ছিল ভয়াবহ। এখন বাকি থাকে ব্রাজিল। দেখা যাক ব্রাজিলের খেলা চলাকালীন সময় বিদ্যুৎ যায় কিনা। সেদিনও যদি বিদ্যুৎ যায়, তবে বুঝতে হবে জামায়াতের লোকজন বিশ্বকাপ খেলাই দেখেনা। বিশ্বকাপ খেলা না দেখা দোষের কিছুনা, বরং সময় বাঁচে।
মানলাম জামায়াতের লোকজন আর্জেন্টিনার সমর্থক না, তাই বিদ্যুতের নাট বল্টু খুলতে তাদের কোন মায়া দয়া হয়না। অথবা তারা বিশ্বকাপ খেলাই দেখেনা, তাই খেলা প্রেমিকদের প্রতি তাদের এত শত্রুতা। কিন্তু তাই বলে কি দেশে জামায়াতের লোকজনের গরমও লাগেনা? রাতের বেলা ফ্যান বন্ধ হয়ে গেলে গরমে কি তাদের ঘুম ভেঙে যায়না? তাদের শিশু সন্তানদের কি গরমে ঘামাচি ওঠেনা? তাদের ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার কি ক্ষতি হয়না? রামদা নিয়ে আন্তকোন্দল, গ্রুপিং, মারামারিতে না হয় বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়না, সাধারণ ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় তো বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। উপরন্তু জামায়াতের লোকজনের ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরী, মিল-ফ্যাক্টরি, এগুলো কি বিদ্যুতের অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়না? এত ক্ষতি স্বীকার করেও কি জামায়াতের লোকজন বিদ্যুতের নাট বল্টু খুলে নিয়ে থাকে? যদি তা-ই হয়, নাট বল্টু খোলার সময় অথবা খুলে নিয়ে যাবার সময় জামায়াতের কোন লোক হাতে নাতে ধরা পড়েছে- এমন কোন তথ্য কি কারো সাজেদা চৌধুরীর জানা আছে? অথবা নাট বল্টু খোয়া গেছে এই মর্মে বিদ্যুৎ অফিসে গঠিত কোন তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জামায়াতের কাউকে নাটবল্টু খোলার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে, এমন কোন সংবাদ কিংবা প্রমাণ কি এ সংসদ উপনেতার নিকট আছে? নেই এবং নিশচয়ই নেই, কারণ থাকলে ইতোমধ্যে মধ্যরাতে দু'একজন জামায়াত নেতাকে ধরে রিমান্ডে নিয়ে হাড় গোড় এক করে ফেলার খবর জাতি জানতে পারতো।
কোন ধরণের তথ্য-প্রমাণ, যুক্তি-ভিত্তি, কমনসেন্স ছাড়াই আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য যারা মন্ত্রী এমপিদের দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন, জাতির সামনে এমন একটি কথা কিভাবে বলতে পারলেন? আমরা লজ্জিত এবং শংকিত। সরকারী দলের একজন শীর্ষ নেত্রী যদি সততা ও সৌজন্যতায় দেশটাকে একটি মগের মুল্লুক ভেবে বসেন, তাহলে তাদের মন্ত্রী এমপিরা কাজে কর্মে আইন আদালত সচিবালয়কে কতটা মগের মুল্লুক বানিয়ে বসে আছেন তা জনগণ সহজেই অনুভব করতে পারেন। এই সংসদ উপনেতার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা বক্তৃতা বিবৃতিতে কতটা অসত্য ও উদ্ভট কথার পুঁজি বিনিয়োগ করে চলছেন, তা ভাবতেই আমাদেরকে উৎকণ্ঠিত হতে হয় ।