#মুফতীঃ আব্দুল মতিন হাফিযাহুল্লাহ।
হিজরী প্রথম শতকেই অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম জীবিত থাকতেই বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন মাযহাব প্রচলিত ছিলো। শাহ ওয়ালী উল্লাহ (রহঃ) ‘ইকদুল জীদ’ নামক কিতাবে লিখেছেন, ‘সাহাবা-যুগেই এই ইতিবাচক ও প্রজ্ঞাপূর্ণ চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠা লাভ করে যে, প্রত্যেক এলাকার লোকেরা তাদের এলাকার বড় আলেমের তাকলীদ করবেন এবং সে এলাকার প্রচলিত মাযহাব মেনে চলবেন।’
শরীয়া-বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ ও তার ইতিহাস সম্পর্কে যার ন্যূনতম জ্ঞান আছে, তিনি অবশ্যই এ-বিষয়টি স্বীকার করবেন। যেমন সহীহ বোখারীতে এসেছে, এক মাসআলায় সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও মদীনাবাসীর অনুসৃত সাহাবী যায়েদ বিন সাবেতের মাঝে দ্বিমত ছিলো।
.
ঘটনাক্রমে মদীনার লোকেরা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে ঐ মাসআলাটি জিজ্ঞেস করে বসলেন। তো ইবনে আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহু তাঁর মত অনুসারে জবাব দিলেন (সহীহ মুসলিমের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি নিজের মতের পক্ষে একটি হাদীসও বললেন।) কিন্তু মদীনাবাসী (সাহাবী এবং অন্যান্যরা) বললেন, ‘আমরা যায়েদের সিদ্ধান্ত ছেড়ে আপনার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারি না।’ - (সহীহ বোখারী, ১৭৫৮)
কারণ মদিনাবাসীর আস্থা বেশি ছিলো যায়েদ বিন সাবেতের ইলমী পাণ্ডিত্যে উপর। তারা ভাবলেন, এ বিষয়ে যায়েদ বিন সাবেতের কাছে আরো মজবুত কোনো দলিল থাকতে পারে কিংবা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস যে হাদীস বলেছেন, যায়েদ রাজিয়াল্লাহু আনহুর কাছে তার ভিন্ন কোনো সঠিক ব্যাখ্যা আছে। এজন্য ইবনে আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহুর পেশকৃত হাদীস দেখার পরও তারা আগে নিজেদের আস্থার পাত্র যায়েদ বিন সাবেতের সঙ্গে যোগাযোগ করা আবশ্যক মনে করেছেন। (নিজেরা আরবী ভাষাভাষী এমনকি সাহাবী হওয়া সত্ত্বেও মাসআলার ক্ষেত্রে নিজেদের বুঝকে যথেষ্ট ভাবেননি।
.
কিন্তু আমাদের কালে বহু ভাই নিয়মিত পড়াশোনা দূরের কথা আরবি ভাষাটাও জানেন না, কোরআন মাজীদ শুদ্ধ করে পড়তে জানেন না, বাংলা-ইংরেজি অনুবাদ পড়েই নিজেকে হাদীসের ব্যাখ্যাতা হিসাবে উপস্থাপনের বৃথা চেষ্টা করেন এবং জটিল-জটিল মাসআলায় মত ব্যক্ত করতে কুন্ঠিত হন না। এমনকি সমকালীন-পূর্ববর্তী সকল বড় বড় বিশেষজ্ঞ আলেমের প্রতি অজ্ঞতা আরোপ করতেও লজ্জিত বোধ করেন না। আজ আমরা আমাদের আশপাশের লোকজনের এমন বেবুঝ কর্মকান্ডে বড় অসহায়! আল্লাহ সবাইকে বুঝ দান করুন। আমীন।)
.
তারা জানতেন, মাসআলার দলিলের ক্ষেত্রে হাদীসের মাঝে বিভিন্নতা প্রায়ই দেখা যায়। হাদীস বুঝার ক্ষেত্রেও আলেমগণের মাঝে ইখতেলাফ হয়। সুতরাং তারা শৃঙ্খলাগত কারণে আগে যায়েদ বিন সাবেত রাজিয়াল্লাহু আনহুর কাছে গেলেন এবং ইবনে আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণিত হাদীসটি পেশ করলেন। অতপর যাচাই-বাছায়ের পর ইবনে আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহুর মতই সঠিক প্রমাণিত হলো। তখন তিনি ও তাঁর অনুসারী মদীনাবাসী পূর্বের রায় প্রত্যাহার করে নিলেন।
.
তো বুঝা গেলো, মদিনাবাসী যায়েদ বিন সাবেত রাজিয়াল্লাহু আনহুর উপর আস্থা রেখে তাঁর মত অনুসারে কোরআন-সুন্নাহর উপর আমল করতেন। অন্য কোনো মত ও দলিল সামনে আসলে তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত না নিয়ে যায়েদ বিন সাবেতের সামনে পেশ করতেন এবং তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নিতেন। এজন্যই তারা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছিলেন, ‘আমরা যায়েদের সিদ্ধান্ত ছেড়ে আপনার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারি না।’ অর্থাৎ তারা কোরআন-সুন্নাহ বোঝার ক্ষেত্রে কেবল যায়েদ বিন সাবেতের তাকলীদ করতেন। কোরআন-সুন্নাহর উপর আমল করার ক্ষেত্রে একমাত্র যায়েদ বিন সাবেত রাজিয়াল্লাহু আনহুর মাযহাব অনুসরণ করতেন।
.
হাদীস ও ইতিহাসের কিতাবে বর্ণিত এ-জাতীয় অসংখ্য ঘটনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, পৃথক পৃথক মাযহাব ও তার অনুসরণ সাহাবাযুগেই বিদ্যমান ছিলো, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। সুতরাং মাযহাব-বিরোধী ভাইদের প্রতি অনুরোধ, আল্লাহর ওয়াস্তে সাধারণ মানুষকে এই বলে বিভ্রান্ত করবেন না যে, পৃথক পৃথক মাযহাবের অনুসরণ করা বিদআত কিংবা শিরক। কারণ তা সাহাবা, তাবেঈ (ঈমানের সাথে যারা সাহাবীকে দেখেছেন) এবং তাবে-তাবেঈর যুগে ছিলো না, পরে সৃষ্টি হয়েছে।
.
প্রিয় পাঠক। আপনি ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন, মাযহাব পূর্ব থেকেই ছিলো। ছিলো না শুধু হানাফী মালেকী ইত্যাদি নাম। যেমন হাদীস আগ থেকেই ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে নাম হয়েছে বোখারী-মুসলিমের হাদীস, তিরমিযীর হাদীস ইত্যাদি। তো নামের কারণে বোখারী মুসলিমের হাদীস যেমন বিদআত হয়ে যায়নি, শুধু নামের কারণে হানাফী-মালেকী মাযহাবও বিদআত হবে না। কোনো জিনিসের বিচার তো হয় হাকীকত তথা সারবত্তা হিসাবে, নাম ও পরিভাষা হিসাবে নয়।
.
এখানে আরও মনে রাখতে হবে, পৃথক পৃথক মাযহাবের অনুসরণ হবে ঐ সমস্ত মাসআলার ক্ষেত্রে, যেগুলোর দলিলের মাঝেই ভিন্ন ভিন্ন মতের অবকাশ আছে, যেমনটা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। কিন্তু যে সমস্ত মাসআলায় কোরআন-হাদীস অকাট্ট ও সুষ্পষ্ট, তাতে কোনো মতেই মতপার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়।
.
যাইহোক, সাহাবা-যুগ থেকে ভিন্ন ভিন্ন মাযহাবের অনুসরণ জারি হয়ে গেলো। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ (কোরআন-সুন্নাহ ও জামাআতে সাহাবার অনুসারী) সকল আলেম কোরআন-হাদীস অনুসরণের এই স্বাভাবিক পদ্ধতি গ্রহণ করে নিলেন। খলিফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজীজ (মৃত্যু:১০১হি.) (রহঃ) এ বিষয়টির প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতেন। তিনি খলিফা হওয়ার আগে যখন মদিনার বিচারক ছিলেন, তখন মদিনার মাযহাব অনুসারে রায় দিতেন। আবার যখন শাম এলাকায় গমন করতেন, তখন তিনি তথাকার প্রচলিত মাযহাব অনুসারে বিচার করতেন। (সুনানে দারেমীর ভূমিকা দ্রষ্টব্য)
.
সহীহ সূত্রে আরও বর্ণিত আছে, ইমাম হুমাইদ (রহঃ) একবার খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আজীজ (মৃত্যু:১০১হি.) (রহঃ)-এর নিকট গিয়ে বললেন, ‘এই যে ভিন্ন ভিন্ন মত চলে আসছে, এটা খতম করে একটি মাত্র ভিত্তির উপর সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা উচিৎ। উমর ইবনে আব্দুল আজীজ রহ. বললেন, ‘এটা আমার পছন্দ নয় যে, ফিকহী মাসআলায় মতপার্থক্য হবেই না।’ তিনি খেলাফতের সকল অঞ্চলে সরকারী ফরমান লিখে পাঠালেন, ‘প্রত্যেক এলাকার লোকেরা যেন তাদের এলাকার আলেম ও ফকীহদের মত অনুসারে ফায়সালা করে।’ -(সুনানে দারেমী, হাদীস নং ৬৫২)
বাহ্যত বিশ্বের সকল মুসলমান সব বিষয়ে একমত হয়ে যাবে এর চে বড় সুচিন্তা আর কী হতে পারে! কিন্তু যারা শরঈ দলিলের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন, তারা জানেন এটা হবার নয়। এটা বরং আল্লাহপাকের করুণা-গুণের খেলাফ। কারণ শাখাগত বিষয়ে নিয়মতান্ত্রিক মতপার্থক্য কোনো বিরোধ-বিসম্বাদ নয়; বরং তা সুন্নাহর বিভিন্নতা ও বৈচিত্র্য। এর ফলে আমলের ক্ষেত্রে সহজতা সৃষ্টি হয়।
.
একবার আব্বাসী খলিফা মানসূর ইমাম মালেক (মৃত্যু:১৭৯হি.) (রহঃ)-এর নিকট দরখাস্ত করলেন, আমরা আপনার কিতাব ‘মোয়াত্তা’ (যা সহীহ বোখারী ও মুসলিমের উৎসগ্রন্থ) মুসলিম-বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে দিই এবং সব মাযহাব ত্যাগ করে আপনার কিতাবে উল্লিখিত মাযহাব মোতাবেক আমল করার ফরমান জারি করি।
.
ইমাম মালেক (রহঃ) বললেন, ‘না না, এমনটা করতে যাবেন না। বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে বিভিন্ন মাযহাব পৌঁছে গেছে। তাদের কাছে তাদের মতের পক্ষে হাদীসও পৌঁছেছে। আর মানুষকে তাদের আমল থেকে সরতে বলা খুবই কষ্টকর ব্যাপার। সুতরাং যে এলাকার লোকেরা নিজেদের জন্য যে মাযহাব পছন্দ করে নিয়েছে, তাদেরকে তার উপরই থাকতে দিন।’
.
ইমাম মালেক (মৃত্যু:১৭৯হি.) (রহঃ) আরো বলেছিলেন, ‘মারাকিশ-আন্দালুস (আফ্রিকা-স্পেন) এলাকায় আমার মত ও মাযহাব ছড়িয়ে পড়েছে। শামে (সিরিয়াতে) আছেন ইমাম আওযাঈ (মৃত্যু:১৫৭হি.) (রহঃ)। আর ইরাকের কথা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না।’ -(তারতীবুল মাদারিক ২/৭২)
ইমাম মালেক (রহঃ)-এর বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, তাঁর সময়ে (১৭৯ হিজরির আগ থেকে) একেক এলাকায় একেক মাযহাব প্রচলিত ছিলো। সিরিয়াবাসী ইমাম আওযাঈ (রহঃ)-এর তাকলীদ করতেন। স্পেনের আন্দালুসে ইমাম মালেক (রহঃ)-এর মাযহাব অনুসৃত হতো। ইরাকের অধিবাসীগণ হানাফী মাযহাব মেনে চলতেন।
আর উম্মতের সকল আলেম এ ব্যাপারে একমত ছিলেন যে, কোনো এলাকার লোকদেরকে তাদের এলাকার আলেমদের কোরআন-সুন্নাহসম্মত মাযহাব অনুসরণে বাধা দেওয়া এবং প্রচলিত মাযহাব ত্যাগ করে অন্য মত গ্রহণের দাওয়াত দেয়া যাবে না।
মোটকথা, সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই আলাদা আলাদা মাযহাব গঠন-পক্রিয়া আরম্ভ হয়ে যায়। প্রত্যেক এলাকার লোকেরা সাধারণত তাদের এলাকার আলেম-উলামার মাযহাব অনুসরণ করতেন এবং এ বিষয়টি সকল সাহাবা-তাবেঈ অনুমোদন করতেন। এমনকি একজন মুজতাহিদ আলেমও আপন এলাকায় প্রচলিত আমলের বিপরীত কোনো মত সাধারণত প্রকাশ করতেন না, ঐ মতের প্রতি দাওয়াত দিতেন না। কেননা প্রচলিত আমলটি ভুল প্রমাণিত হয়নি, বরং তাও সুন্নাহসম্মত। দলিলের আলোকে উভয় মতের সম্ভাবনাই রয়েছে। সুতরাং নতুন ভিন্নমত প্রকাশ করে সাধারণ মানুষের মাঝে অস্থিরতা সৃষ্টি করা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। (ইমাম মালেক রহ.-এর বক্তব্য থেকে পাঠক বিষয়টি আগেই আঁচ করতে পেরেছেন। আর আমরা নিজেরা তো এর সবচে বড় ভুক্তভোগী!)
.
তো এভাবে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মাযহাব প্রচলিত ছিলো কিন্তু কোনোটাই গ্রন্থাকারে সংকলিত ছিলো না। সর্ব প্রথম ইমাম আবু হানিফা (মৃত্যু:১৫০হি.) ও ইমাম মালেক এবং তাদের শাগরিদগণ আপন আপন এলাকার প্রচলিত পরিমার্জিত মাযহাব কিতাব আকারে সংকলন করেন। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) মূলত ইরাকে প্রচলিত সাহাবায়ে কেরামের মাযহাব সংকলন করেন। যেখানে প্রায় ১৪শত সাহাবী বসবাস করতেন।
.
আর ইমাম মালেক সংকলন করেন মদিনায় প্রচলিত মাযহাব। এরপর আসেন ইমাম শাফেঈ (মৃত্যু:২০৪হি.)। যিনি ইমাম মালেক রহ.-এর শাগরিদ এবং হেজায (মক্কা-মদিনাসহ পুরো) এলাকার প্রতিনিধি। তিনি তার এলাকার অন্যান্য সাহাবী ও তাবেঈর মত একত্রিত করেন। ফলে শাফেঈ মাযহাবের গোড়াপত্তন হয়। ফিকহে শাফেঈর ধারারই এক বড় ইমাম হলেন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (মৃত্যু:২৪১ হি.) রহ.। তিনি ইমাম শাফেঈর সঙ্গে কিছু মাসআলায় দ্বিমত করেন। এর ফলে ভিন্ন একটি মাযহাবের সূচনা হয়।
.
প্রথম দিকে এই চারটি মাযহাবের সঙ্গে সঙ্গে মিশরে চলতো লাইস ইবনে সাআদ (মৃত্যু:১৭৫হি.) (রহঃ)-এর মাযহাব। শামে (সিরিয়ায়) চলতো ইমাম আওযাঈ (মৃত্যু:১৫৭হি.) (রহঃ)-এর মাযহাব। কোথাও চলতো ইমাম তাবারী (মৃত্যু:৩১০হি.)-এর মাযহাব। কিন্তু চার মাযহাব ছাড়া বাকিগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এবং কারো কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই আল্লাহর ইচ্ছায় চার মাযহাব ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং আজ পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে টিকে আছে।
.
প্রত্যেক মাযহাবের অনুসারী আলেমগণ তাদের মাযহাবের পক্ষে দলিলের কিতাব লিখেছেন। অন্য মাযহাবের দলিল নিয়ে চিন্তা করে তুলমামূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন। কোনো মাসআলায় যদি নিশ্চিত হতে পারতেন যে, এটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়েছে, তবে সেই মাসআলায় আপন মাযহাবের মত ত্যাগ করে অন্য মাযহাব মতে ফতোয়া দিতেন।
.
যদিও এমনটা করার প্রয়োজন খুব কমই হয়েছে। কারণ ইমামগণের মতপার্থক্য তো কোরআন-সুন্নাহর ইলম কম থাকার কারণে বা ভুল বুঝার কারণে হয়নি। বরং ইখতিলাফ হয়েছে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের পক্ষ থেকে কোরআন-সুন্নাহর ভিতরে ইখতিলাফের আবকাশ রেখে দেওয়ার কারণে। কিংবা ইখতিলাফ হয়েছে চিন্তার এ্যাঙ্গেলের ভিন্নতার কারণে। যেখানে উভয় এ্যাঙ্গেলই যৌক্তিক। মোটকথা এভাবেই চার মাযহাবের উৎপত্তি হয়েছে এবং হাজার বছর ধরে উম্মতের মাঝে অনুসৃত হয়ে আসছে।
#মুফতীঃ আব্দুল মতিন হাফিযাহুল্লাহ।
হিজরী প্রথম শতকেই অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম জীবিত থাকতেই বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন মাযহাব প্রচলিত ছিলো। শাহ ওয়ালী উল্লাহ (রহঃ) ‘ইকদুল জীদ’ নামক কিতাবে লিখেছেন, ‘সাহাবা-যুগেই এই ইতিবাচক ও প্রজ্ঞাপূর্ণ চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠা লাভ করে যে, প্রত্যেক এলাকার লোকেরা তাদের এলাকার বড় আলেমের তাকলীদ করবেন এবং সে এলাকার প্রচলিত মাযহাব মেনে চলবেন।’
শরীয়া-বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ ও তার ইতিহাস সম্পর্কে যার ন্যূনতম জ্ঞান আছে, তিনি অবশ্যই এ-বিষয়টি স্বীকার করবেন। যেমন সহীহ বোখারীতে এসেছে, এক মাসআলায় সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও মদীনাবাসীর অনুসৃত সাহাবী যায়েদ বিন সাবেতের মাঝে দ্বিমত ছিলো।
.
ঘটনাক্রমে মদীনার লোকেরা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে ঐ মাসআলাটি জিজ্ঞেস করে বসলেন। তো ইবনে আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহু তাঁর মত অনুসারে জবাব দিলেন (সহীহ মুসলিমের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি নিজের মতের পক্ষে একটি হাদীসও বললেন।) কিন্তু মদীনাবাসী (সাহাবী এবং অন্যান্যরা) বললেন, ‘আমরা যায়েদের সিদ্ধান্ত ছেড়ে আপনার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারি না।’ - (সহীহ বোখারী, ১৭৫৮)
কারণ মদিনাবাসীর আস্থা বেশি ছিলো যায়েদ বিন সাবেতের ইলমী পাণ্ডিত্যে উপর। তারা ভাবলেন, এ বিষয়ে যায়েদ বিন সাবেতের কাছে আরো মজবুত কোনো দলিল থাকতে পারে কিংবা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস যে হাদীস বলেছেন, যায়েদ রাজিয়াল্লাহু আনহুর কাছে তার ভিন্ন কোনো সঠিক ব্যাখ্যা আছে। এজন্য ইবনে আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহুর পেশকৃত হাদীস দেখার পরও তারা আগে নিজেদের আস্থার পাত্র যায়েদ বিন সাবেতের সঙ্গে যোগাযোগ করা আবশ্যক মনে করেছেন। (নিজেরা আরবী ভাষাভাষী এমনকি সাহাবী হওয়া সত্ত্বেও মাসআলার ক্ষেত্রে নিজেদের বুঝকে যথেষ্ট ভাবেননি।
.
কিন্তু আমাদের কালে বহু ভাই নিয়মিত পড়াশোনা দূরের কথা আরবি ভাষাটাও জানেন না, কোরআন মাজীদ শুদ্ধ করে পড়তে জানেন না, বাংলা-ইংরেজি অনুবাদ পড়েই নিজেকে হাদীসের ব্যাখ্যাতা হিসাবে উপস্থাপনের বৃথা চেষ্টা করেন এবং জটিল-জটিল মাসআলায় মত ব্যক্ত করতে কুন্ঠিত হন না। এমনকি সমকালীন-পূর্ববর্তী সকল বড় বড় বিশেষজ্ঞ আলেমের প্রতি অজ্ঞতা আরোপ করতেও লজ্জিত বোধ করেন না। আজ আমরা আমাদের আশপাশের লোকজনের এমন বেবুঝ কর্মকান্ডে বড় অসহায়! আল্লাহ সবাইকে বুঝ দান করুন। আমীন।)
.
তারা জানতেন, মাসআলার দলিলের ক্ষেত্রে হাদীসের মাঝে বিভিন্নতা প্রায়ই দেখা যায়। হাদীস বুঝার ক্ষেত্রেও আলেমগণের মাঝে ইখতেলাফ হয়। সুতরাং তারা শৃঙ্খলাগত কারণে আগে যায়েদ বিন সাবেত রাজিয়াল্লাহু আনহুর কাছে গেলেন এবং ইবনে আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণিত হাদীসটি পেশ করলেন। অতপর যাচাই-বাছায়ের পর ইবনে আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহুর মতই সঠিক প্রমাণিত হলো। তখন তিনি ও তাঁর অনুসারী মদীনাবাসী পূর্বের রায় প্রত্যাহার করে নিলেন।
.
তো বুঝা গেলো, মদিনাবাসী যায়েদ বিন সাবেত রাজিয়াল্লাহু আনহুর উপর আস্থা রেখে তাঁর মত অনুসারে কোরআন-সুন্নাহর উপর আমল করতেন। অন্য কোনো মত ও দলিল সামনে আসলে তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত না নিয়ে যায়েদ বিন সাবেতের সামনে পেশ করতেন এবং তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নিতেন। এজন্যই তারা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছিলেন, ‘আমরা যায়েদের সিদ্ধান্ত ছেড়ে আপনার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারি না।’ অর্থাৎ তারা কোরআন-সুন্নাহ বোঝার ক্ষেত্রে কেবল যায়েদ বিন সাবেতের তাকলীদ করতেন। কোরআন-সুন্নাহর উপর আমল করার ক্ষেত্রে একমাত্র যায়েদ বিন সাবেত রাজিয়াল্লাহু আনহুর মাযহাব অনুসরণ করতেন।
.
হাদীস ও ইতিহাসের কিতাবে বর্ণিত এ-জাতীয় অসংখ্য ঘটনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, পৃথক পৃথক মাযহাব ও তার অনুসরণ সাহাবাযুগেই বিদ্যমান ছিলো, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। সুতরাং মাযহাব-বিরোধী ভাইদের প্রতি অনুরোধ, আল্লাহর ওয়াস্তে সাধারণ মানুষকে এই বলে বিভ্রান্ত করবেন না যে, পৃথক পৃথক মাযহাবের অনুসরণ করা বিদআত কিংবা শিরক। কারণ তা সাহাবা, তাবেঈ (ঈমানের সাথে যারা সাহাবীকে দেখেছেন) এবং তাবে-তাবেঈর যুগে ছিলো না, পরে সৃষ্টি হয়েছে।
.
প্রিয় পাঠক। আপনি ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন, মাযহাব পূর্ব থেকেই ছিলো। ছিলো না শুধু হানাফী মালেকী ইত্যাদি নাম। যেমন হাদীস আগ থেকেই ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে নাম হয়েছে বোখারী-মুসলিমের হাদীস, তিরমিযীর হাদীস ইত্যাদি। তো নামের কারণে বোখারী মুসলিমের হাদীস যেমন বিদআত হয়ে যায়নি, শুধু নামের কারণে হানাফী-মালেকী মাযহাবও বিদআত হবে না। কোনো জিনিসের বিচার তো হয় হাকীকত তথা সারবত্তা হিসাবে, নাম ও পরিভাষা হিসাবে নয়।
.
এখানে আরও মনে রাখতে হবে, পৃথক পৃথক মাযহাবের অনুসরণ হবে ঐ সমস্ত মাসআলার ক্ষেত্রে, যেগুলোর দলিলের মাঝেই ভিন্ন ভিন্ন মতের অবকাশ আছে, যেমনটা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। কিন্তু যে সমস্ত মাসআলায় কোরআন-হাদীস অকাট্ট ও সুষ্পষ্ট, তাতে কোনো মতেই মতপার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়।
.
যাইহোক, সাহাবা-যুগ থেকে ভিন্ন ভিন্ন মাযহাবের অনুসরণ জারি হয়ে গেলো। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ (কোরআন-সুন্নাহ ও জামাআতে সাহাবার অনুসারী) সকল আলেম কোরআন-হাদীস অনুসরণের এই স্বাভাবিক পদ্ধতি গ্রহণ করে নিলেন। খলিফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজীজ (মৃত্যু:১০১হি.) (রহঃ) এ বিষয়টির প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতেন। তিনি খলিফা হওয়ার আগে যখন মদিনার বিচারক ছিলেন, তখন মদিনার মাযহাব অনুসারে রায় দিতেন। আবার যখন শাম এলাকায় গমন করতেন, তখন তিনি তথাকার প্রচলিত মাযহাব অনুসারে বিচার করতেন। (সুনানে দারেমীর ভূমিকা দ্রষ্টব্য)
.
সহীহ সূত্রে আরও বর্ণিত আছে, ইমাম হুমাইদ (রহঃ) একবার খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আজীজ (মৃত্যু:১০১হি.) (রহঃ)-এর নিকট গিয়ে বললেন, ‘এই যে ভিন্ন ভিন্ন মত চলে আসছে, এটা খতম করে একটি মাত্র ভিত্তির উপর সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা উচিৎ। উমর ইবনে আব্দুল আজীজ রহ. বললেন, ‘এটা আমার পছন্দ নয় যে, ফিকহী মাসআলায় মতপার্থক্য হবেই না।’ তিনি খেলাফতের সকল অঞ্চলে সরকারী ফরমান লিখে পাঠালেন, ‘প্রত্যেক এলাকার লোকেরা যেন তাদের এলাকার আলেম ও ফকীহদের মত অনুসারে ফায়সালা করে।’ -(সুনানে দারেমী, হাদীস নং ৬৫২)
বাহ্যত বিশ্বের সকল মুসলমান সব বিষয়ে একমত হয়ে যাবে এর চে বড় সুচিন্তা আর কী হতে পারে! কিন্তু যারা শরঈ দলিলের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন, তারা জানেন এটা হবার নয়। এটা বরং আল্লাহপাকের করুণা-গুণের খেলাফ। কারণ শাখাগত বিষয়ে নিয়মতান্ত্রিক মতপার্থক্য কোনো বিরোধ-বিসম্বাদ নয়; বরং তা সুন্নাহর বিভিন্নতা ও বৈচিত্র্য। এর ফলে আমলের ক্ষেত্রে সহজতা সৃষ্টি হয়।
.
একবার আব্বাসী খলিফা মানসূর ইমাম মালেক (মৃত্যু:১৭৯হি.) (রহঃ)-এর নিকট দরখাস্ত করলেন, আমরা আপনার কিতাব ‘মোয়াত্তা’ (যা সহীহ বোখারী ও মুসলিমের উৎসগ্রন্থ) মুসলিম-বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে দিই এবং সব মাযহাব ত্যাগ করে আপনার কিতাবে উল্লিখিত মাযহাব মোতাবেক আমল করার ফরমান জারি করি।
.
ইমাম মালেক (রহঃ) বললেন, ‘না না, এমনটা করতে যাবেন না। বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে বিভিন্ন মাযহাব পৌঁছে গেছে। তাদের কাছে তাদের মতের পক্ষে হাদীসও পৌঁছেছে। আর মানুষকে তাদের আমল থেকে সরতে বলা খুবই কষ্টকর ব্যাপার। সুতরাং যে এলাকার লোকেরা নিজেদের জন্য যে মাযহাব পছন্দ করে নিয়েছে, তাদেরকে তার উপরই থাকতে দিন।’
.
ইমাম মালেক (মৃত্যু:১৭৯হি.) (রহঃ) আরো বলেছিলেন, ‘মারাকিশ-আন্দালুস (আফ্রিকা-স্পেন) এলাকায় আমার মত ও মাযহাব ছড়িয়ে পড়েছে। শামে (সিরিয়াতে) আছেন ইমাম আওযাঈ (মৃত্যু:১৫৭হি.) (রহঃ)। আর ইরাকের কথা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না।’ -(তারতীবুল মাদারিক ২/৭২)
ইমাম মালেক (রহঃ)-এর বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, তাঁর সময়ে (১৭৯ হিজরির আগ থেকে) একেক এলাকায় একেক মাযহাব প্রচলিত ছিলো। সিরিয়াবাসী ইমাম আওযাঈ (রহঃ)-এর তাকলীদ করতেন। স্পেনের আন্দালুসে ইমাম মালেক (রহঃ)-এর মাযহাব অনুসৃত হতো। ইরাকের অধিবাসীগণ হানাফী মাযহাব মেনে চলতেন।
আর উম্মতের সকল আলেম এ ব্যাপারে একমত ছিলেন যে, কোনো এলাকার লোকদেরকে তাদের এলাকার আলেমদের কোরআন-সুন্নাহসম্মত মাযহাব অনুসরণে বাধা দেওয়া এবং প্রচলিত মাযহাব ত্যাগ করে অন্য মত গ্রহণের দাওয়াত দেয়া যাবে না।
মোটকথা, সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই আলাদা আলাদা মাযহাব গঠন-পক্রিয়া আরম্ভ হয়ে যায়। প্রত্যেক এলাকার লোকেরা সাধারণত তাদের এলাকার আলেম-উলামার মাযহাব অনুসরণ করতেন এবং এ বিষয়টি সকল সাহাবা-তাবেঈ অনুমোদন করতেন। এমনকি একজন মুজতাহিদ আলেমও আপন এলাকায় প্রচলিত আমলের বিপরীত কোনো মত সাধারণত প্রকাশ করতেন না, ঐ মতের প্রতি দাওয়াত দিতেন না। কেননা প্রচলিত আমলটি ভুল প্রমাণিত হয়নি, বরং তাও সুন্নাহসম্মত। দলিলের আলোকে উভয় মতের সম্ভাবনাই রয়েছে। সুতরাং নতুন ভিন্নমত প্রকাশ করে সাধারণ মানুষের মাঝে অস্থিরতা সৃষ্টি করা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। (ইমাম মালেক রহ.-এর বক্তব্য থেকে পাঠক বিষয়টি আগেই আঁচ করতে পেরেছেন। আর আমরা নিজেরা তো এর সবচে বড় ভুক্তভোগী!)
.
তো এভাবে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মাযহাব প্রচলিত ছিলো কিন্তু কোনোটাই গ্রন্থাকারে সংকলিত ছিলো না। সর্ব প্রথম ইমাম আবু হানিফা (মৃত্যু:১৫০হি.) ও ইমাম মালেক এবং তাদের শাগরিদগণ আপন আপন এলাকার প্রচলিত পরিমার্জিত মাযহাব কিতাব আকারে সংকলন করেন। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) মূলত ইরাকে প্রচলিত সাহাবায়ে কেরামের মাযহাব সংকলন করেন। যেখানে প্রায় ১৪শত সাহাবী বসবাস করতেন।
.
আর ইমাম মালেক সংকলন করেন মদিনায় প্রচলিত মাযহাব। এরপর আসেন ইমাম শাফেঈ (মৃত্যু:২০৪হি.)। যিনি ইমাম মালেক রহ.-এর শাগরিদ এবং হেজায (মক্কা-মদিনাসহ পুরো) এলাকার প্রতিনিধি। তিনি তার এলাকার অন্যান্য সাহাবী ও তাবেঈর মত একত্রিত করেন। ফলে শাফেঈ মাযহাবের গোড়াপত্তন হয়। ফিকহে শাফেঈর ধারারই এক বড় ইমাম হলেন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (মৃত্যু:২৪১ হি.) রহ.। তিনি ইমাম শাফেঈর সঙ্গে কিছু মাসআলায় দ্বিমত করেন। এর ফলে ভিন্ন একটি মাযহাবের সূচনা হয়।
.
প্রথম দিকে এই চারটি মাযহাবের সঙ্গে সঙ্গে মিশরে চলতো লাইস ইবনে সাআদ (মৃত্যু:১৭৫হি.) (রহঃ)-এর মাযহাব। শামে (সিরিয়ায়) চলতো ইমাম আওযাঈ (মৃত্যু:১৫৭হি.) (রহঃ)-এর মাযহাব। কোথাও চলতো ইমাম তাবারী (মৃত্যু:৩১০হি.)-এর মাযহাব। কিন্তু চার মাযহাব ছাড়া বাকিগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এবং কারো কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই আল্লাহর ইচ্ছায় চার মাযহাব ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং আজ পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে টিকে আছে।
.
প্রত্যেক মাযহাবের অনুসারী আলেমগণ তাদের মাযহাবের পক্ষে দলিলের কিতাব লিখেছেন। অন্য মাযহাবের দলিল নিয়ে চিন্তা করে তুলমামূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন। কোনো মাসআলায় যদি নিশ্চিত হতে পারতেন যে, এটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়েছে, তবে সেই মাসআলায় আপন মাযহাবের মত ত্যাগ করে অন্য মাযহাব মতে ফতোয়া দিতেন।
.
যদিও এমনটা করার প্রয়োজন খুব কমই হয়েছে। কারণ ইমামগণের মতপার্থক্য তো কোরআন-সুন্নাহর ইলম কম থাকার কারণে বা ভুল বুঝার কারণে হয়নি। বরং ইখতিলাফ হয়েছে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের পক্ষ থেকে কোরআন-সুন্নাহর ভিতরে ইখতিলাফের আবকাশ রেখে দেওয়ার কারণে। কিংবা ইখতিলাফ হয়েছে চিন্তার এ্যাঙ্গেলের ভিন্নতার কারণে। যেখানে উভয় এ্যাঙ্গেলই যৌক্তিক। মোটকথা এভাবেই চার মাযহাবের উৎপত্তি হয়েছে এবং হাজার বছর ধরে উম্মতের মাঝে অনুসৃত হয়ে আসছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:৩৮