বেশির ভাগ মানুষ ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে। কিন্তু ঘুম ভাঙার পর সেই স্বপ্নের খুব সামান্য অংশই মনে রাখা সম্ভব হয়। অনেক সময় সুস্বপ্ন দেখলেও বেশির ভাগ সময়েই মানুষের চোখে নামে দুঃস্বপ্ন। অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো আবার দুর্বোধ্য বলে মনে হয়। ধর্মভীরুরা স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য বসেন ‘খাবনামা’ জাতীয় পুঁথি নিয়ে। অন্যরা সেসব উড়িয়ে দেন। কিন্তু স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্নের ফলাফল নিয়ে ভাবনা চেতন বা অবচেতনভাবে মানবমনে চলতেই থাকে। আদি মানব থেকে বর্তমান পর্যন্ত স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা নিয়ে চলছে এভাবেই। এবার বুঝি অধরা স্বপ্নকে কবজা করে তার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়ার সময় হলো। স্বপ্ন এবার ধরা দেবে কম্পিউটারে।
স্বপ্ন আসলে দেখায় মস্তিষ্ক। প্রতিদিন যা করি, যা দেখি, যা ভাবি, যা অনুভব করি-সবই অভিজ্ঞতা হয়ে স্মৃতিকণা হিসেবে আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন কোষে জমা হয়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এভাবেই প্রতিনিয়ত নিউরন কোষে অসংখ্য স্মৃতিকণা জমা হচ্ছে। ঘুমের সময়ে চোখ বন্ধসহ শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো শিথিল থাকলেও মানব মস্তিষ্ক ঠিকই কাজ করে যায়। এ ছাড়া ঘুমের আগে বা দিনের বিভিন্ন সময়ে আমরা অনেক কিছুই চিন্তা করি। এসব চিন্তার সময়ে নিউরন কোষগুলো উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। সেগুলোই সাম্প্রতিকসহ অতীতের বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিকণাগুলোকে জুড়ে দিয়ে নানা রকম অণুদৃশ্য তৈরি করে মস্তিষ্কে। ঘুমন্ত অবস্থায় তারই দৃশ্যরূপ অবচেতন মানসচোখে উন্মুক্ত করে মস্তিষ্ক। আমরা তাকেই স্বপ্ন বলি। স্বপ্ন দর্শনের সময়ে শরীরের ইন্দ্রিয় ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোও সাড়া দেয়। স্বপ্নটা ভালো বা মন্দ হওয়ার ক্ষেত্রে শারীরিক তাপমাত্রা, মানসিক পরিস্থিতি, ঘরের পরিবেশ, তাপমাত্রা ইত্যাদিও বিশেষ ভূমিকা রাখে। কিন্তু স্বপ্ন দেখার যতো কারণ যাই খোঁজা হোক, চোখ খুললেই সেই স্বপ্ন সুদূরে মিলে যায়।
অত্যাধুনিক এই যুগের বিজ্ঞানীরা মুহূর্তে হাওয়া হয়ে যাওয়া সেই স্বপ্নকে খুঁজে পাওয়া যায় কি না, তা নিয়ে গবেষণা করছেন অনেক বছর ধরেই। তাঁদের হাইপো থিসিস অনুসারে, অধরা স্বপ্নটাকে ধরা সম্ভব। কারণ হিসেবে তাঁরা মনে করেন, স্বপ্ন দেখায় মস্তিষ্ক। আর মস্তিষ্কের যুতসই জায়গায় সময়মতো স্ক্যান করলেই স্বপ্নটাকে দৃশ্য হিসেবে ধারণ করা সম্ভব। বলা বাহুল্য, এ জন্য কম্পিউটার প্রযুক্তির সাহায্য নেন তাঁরা। তবে এখনো এই গবেষণায় সরাসরি সাফল্য মেলেনি। তাই বলে গবেষণাও থেমে থাকছে না। সম্প্রতি জার্মানির মিউনিখের ম্যাঙ্ প্ল্যাংক ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক ঘোষণা দিয়েছেন, অচিরেই সেই সম্ভাবনাটা তৈরি হচ্ছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই মানুষের স্বপ্ন দেখার দৃশ্যটা উচ্চতর কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে ধারণ করে ফেলা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে কিছুটা সফল হয়েছেন বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। নিয়মিত স্বপ্ন দেখেন এমন ছয় ব্যক্তির স্বপ্ন দেখার মুহূর্তের কিছু দৃশ্য ধারণ করতে পারার দাবি করে গবেষকদলটির পক্ষে বলা হয়, এমআরআই স্ক্যান ও অবলোহিত বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে তাঁদের স্বপ্নের কিছু দৃশ্য কম্পিউটারে ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। অবশ্য কিছুদিন আগেও পৃথক আরেকটি গবেষণায় এমআরআই স্ক্যানের সাহায্যে স্বপ্নদৃশ্য কম্পিউটারে ধারণের চেষ্টার কথা জানা গিয়েছিল। তবে ব্যক্তির স্বপ্নের দৃশ্যগুলো আবছা আবছাভাবে সেখানে ধারণ করা হয়। পরে কম্পিউটারে আগে থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন দৃশ্য ও ছবির সঙ্গে এগুলো মেলানো হয় সেখানে। সেখানে ব্যক্তির স্বপ্নকে ধরার জন্য মাথায় বিশেষ ধরনের দুটি রডের সংযোগ দেওয়া হয়েছিল স্ক্যানারের সঙ্গে। জার্মানির এই গবেষণাটিও অবশ্য খানিকটা ভিন্ন। এখানে ব্যক্তি স্ক্যানারের ওপরে ঘুমিয়ে যান। তাঁকে গভীর ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর মাথার সামনের দিকের বিশেষ অংশে স্ক্যান চালিয়ে যাওয়া হয়। একই সঙ্গে অবলোহিত বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র স্বপ্নের রং নির্ণয়ে ভূমিকা রাখে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত এখনো প্রকাশিত হয়নি। কেবল বলা হয়েছে, মানুষের সহজবোধ্য স্বপ্নগুলো আর কিছুদিনের মধ্যেই নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে কম্পিউটারে ধারণ করা সম্ভব হবে।
অধরা স্বপ্নও ধরা দিতে যাচ্ছে মানব উদ্ভাবিত যন্ত্রে! সেই স্বপ্নের ধারণ করা রূপ এবার জাগ্রত অবস্থায় মানুষকে খুশি করতে পারলেই হয়।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, মেইল অনলাইন।
কালের কন্ঠ
সূত্র : http://taiyabs.com/2011/10/30/33826