মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হোসাইনী(রহ (ওফাত ১২১৮ হি: ১৮০৩ খ্রী চট্টগ্রাম জেলার, লোহাগাড়া উপজেলার, চুনতী ইউনিয়নের একটি গ্রাম সাতগড়; আটারো শতকের শেষের দিকে শিক্ষার আলো নিয়ে এক মহান ব্যাক্তি এ অরণ্যঘেরা গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন। এ গ্রামটি লোহাগাড়া উপজেলার অন্য ৪৩ টি গ্রামের চেয়ে সাংস্কৃতিভাবে সমৃদ্ধ ও অন্যতম গ্রাম; যা আজ পুজীবাদী ব্যবস্থার ফলে ধ্বংসের ধার কিনারায়। যিনি এ গ্রামটিকে সাংস্কৃতিকভাবে ও শিক্ষার আলোয় আলোকিত করেছেন, তিনি হলেন শাহ আতাউল্লাহ হোসাইনী বুখারী(রহ.)। তিনি ছিলেন মাওলানা শাহ রহমতুল্লাহ (রহ এর পুত্র। তিনি দিল্লির প্রখ্যাত আলেম লাল শাহ (রহ এর পৌত্র। আর হযরত মুহাম্মদ (সএর ৩৭ তম আওলাদ ছিলেন বলে দাবি করেন শাহ আতাউল্লাহ (রঃ) এর বংশধররা। ভারতের দিল্লিতে উনার আদি বংশধর। রোমের বাদশাহর সিংহাসন আরোহন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভারতীয় উপমহাদেশের যে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গআমন্ত্রীত হয়ে ছিলেন, তিনি তাদের অন্যতম ছিলেন। রোমের তৎকালিন বাদশাহ তাঁকে একটি তরবারি উপহার দেন।
দিল্লি থেকে তিনি প্রথমে উত্তর শুখছড়ি ডেবার কূল এলাকায় অস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন সতের শতকের মাঝামাঝি সময়ে(সম্ভাব্য)। সেখান থেকে চলে যান সাতকানিয়ার কেরাণীহাটের উত্তর পাশের একটি এলাকায়। এখানে কিছুদিন অবস্থান করে, পরে ঐতিহাসিক চুনতির সাতগড় স্থানে এসে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন এবং ইসলাম প্রচার শুরু করেন। সাতগড় পুকুরের পশ্চিম পাশে বসে নিয়মিত কোর-আনের আলো ছড়াতেন। তাঁর কোর-আন তেলওয়াত শুনে সবাই মুগ্ধ হতেন এবং তাঁর কাছে কোর-আনের শিক্ষা নিতেন। জনশ্রুতি আছে, দিল্লি থেকে আসার সময় বা এখানে এসে তিনি সাতগড় এলাকায় আলেম-ওলামা, কুমার, কামার, নাপিত ও ধুপিসহ সাত শ্রেণির মানুষের বসতি স্থাপন করান এবং সাত-জাতের বসতি স্থাপনের সূত্র ধরেই নামকরণ হয়েছে সাতগড়। তবে নামকরণের অন্য কিছু গৌণ মতামতও প্রচলিত আছ; দোহাজারী হতে সাতটা বড় বড় খাদ(গড়) পার হয়ে এখানে আসেন বা এখানে এসে মগ তাড়ানোর জন্য মাটির মধ্যে খন্দক(খাদ, গড়, কেল্লা) তৈরী করেন; যার কোন অস্থিত্ব এখনও খুজে পাওয়া যায়নি বা এলাকার প্রবীণ কারো কাছে এ কথার যথার্থতা পাওয়া যায়নি।
হযরত মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হোসাইনী (রহ এলাকায় বুড়ো মাওলানা (রহ নামে দেশ-বিদেশে বেশ পরিচিত। শরীয়ত, ত্বরিকত এবং মারফতে উনার ব্যাপক দখল ছিল। জাহেরী এলমে( দুনিয়াবী জ্ঞানে) দক্ষ ও প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। আল্লাহর ঝিকিরে তিনি সবসময় নিমগ্ন বা ধ্যানে থাকতেন। ছুফি হিসেবেও তিনি ছিলেন বিখ্যাত। হযরত শাহ সাহেব(রঃ) এর (চুনতির অন্য প্রসিদ্ধ আউলিয়া) দরবারে, সাতগড় গ্রাম থেকে কেউ আসলে শাহ সাহেব তাদেরকে বলতেন "তোমর এলাকায় বুড়ো মাওলানা (রহ নামের একজন বড় মাপের ছুফি আছেন" তাঁর কাছে যাও, এই বলে তাদের(সূফি ভক্ত) ফিরিয়ে দিতেন। ১২১৮ কিংবা ১২১৯ হিজরীর ২২ শাওয়াল মোতাবেক ১১৬৫ মঘী সনের ২৪ মাঘ শনিবার বুড়ো মাওলানা (রহ ইন্তেকাল কনেন। ২০১৪ সালে উনার ২১৫ তম ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর ইন্তেকালের দু’দিন পর অর্থাৎ তৃতীয় দিন সোমবার সকালে তাঁকে দাফন করেন। জনশ্রুতি আছে, বুড়ো মাওলানা (রহ ইন্তেকালের খবর শুনে তৎকালীন রোমের বাদশাহ বা বাদশাহের প্রতিনিধি দল সাতগড় এলাকায় এসে জানাযায় অংশ নেন; যার কারণে মৃত্যুর তৃতীয় দিন জানাজা হয়। অন্য কিংবদন্তী মতে, বুড়ো মাওলানা (রহ কে রোমের বাদশাহ উপহার স্বরূপ একটি তরবারি উপহার দেন। এ তরবারির গোড়ায় একটি অংশ তাঁর বড় ছেলের বংশধরের কাছে রক্ষিত আছে বলে বংশধর সূত্রে জানা গেছে। সাতগড় এলাকায় তাঁর মাজার রয়েছে। ভক্তরা প্রতিনিয়ত তাঁর মাজারে জেয়ারতের উদ্দেশ্যে আসেন। বুড়ো মাওলানা (রহ নিজ হাতে মসজিদ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে, অরণ্যের হাতিসহ অন্যান্য প্রণিরা বুড়ো মাওলানার মাজারে এসে শ্রদ্বা জানাত। অসংখ্য ভক্তরা প্রতিনিয়ত তাঁর মাজারে জিয়ারতের উদ্দেশ্য আসেন। তাঁর বার্ষিক ওরশের অনুষ্ঠানে অসংখ্য মানুষের সমাগম হয়। সাতগড় এলাকায় শাহ আতাউল্লাহ হোসাইনী (রহ এর নামে একটি সড়কের নামকরণ হয়েছে। বর্তমানে তাঁর বংশধর ও ভক্তরা সম্মিলিতভাবে শাহ আতাউল্লাহ হোসাইনী (রহ কমপ্লেক্সের মাধ্যমে মসজিদ, মাদরাসা, দাতব্য চিকিৎসালয়, মাজার ও বার্ষিক ওরশ পরিচালিনা করছেন।
(তথ্যসূত্ত:
১। আনজুমন-২০১০, চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসা ২শ বছর পূর্তি সংখ্যা,
২। জামালুদ্দীন ইউছুপ, দক্ষিণ হরিণা, আধুনগর, লোহাগাড়ায়, চট্টগ্রাম)
৩। লোহাগাড়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য/১২৭পৃ
~তছফিয়াতুল আউলিয়া কিতাব তাঁর বিস্তারিত জীবনী আছে.
~ডঃ সব্বির আহমদ, ডঃ হেলাল উদ্দীন নোমান এবং মঈনুদ্দীন আহমদ খানের সাক্ষাতকার।
(তথ্য যোজন-বিয়োজনের অধিকার রাখে)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:০২