গল্পটা কার জানি না। তবে ঘটনা যে সত্য তাতে কোন সন্দেহ নাই। আর এ ঘটনার সাথে বাংলাদেশে জঙ্গী নির্মূল অভিযানের দহরম-মহরম সম্পর্ক, তা দেখাই যাচ্ছে।
অজানা গল্পটা এই- এক দিন কোন এক বোকা ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল, ঘটনাক্রমে হঠাৎ সাইকেলটা রাস্তার পাশের ঝোপঝাড়াচ্ছন্ন পুকুরেই পড়ে গেল; এ ঘটনায় বোকাটা প্রাণে বাচল ঠিক; তবে মাথা, হাত, মুখ, পায়ে জখমের চিহ্ন দেখে দ্রুত হাতুড়ে ডাক্তারের পরামর্শও নিল; তার পরেও তার অঙ্গব্যথা সরেনি। আর বোকার সহধর্মিণী ছিল খুব চালাক; বোকার অঙ্গব্যথা দূর না হওয়ার কারণ খুজতে গিয়ে, তার স্ত্রী আবিষ্কার করল সেই রহস্যময় গল্পটা। গল্পটা হচ্ছে, হাতুড়ে ডাক্তারের দেয়া ব্যবস্থাপত্রে লিখা ছিল- " মলমটা লাগাবেন, যেখানে ব্যথা পেয়েছেন"। আর বোকা ব্যক্তিটা ঠিকই মলম লাগিয়েছে, যেখানে যেখানে সে ব্যথা পেয়েছে। অর্থাৎ ঐ ঝোপঝাড়াচ্ছন্ন পুকুরে গাছে- বাঁশে, যেখানে সে তার সাইকেলসহ পড়েছিল। এ মলম লাগানোে বিষয়টাতে কি ডাক্তারের দোষ, নাকি বোকা ব্যক্তিটির দোষ? ঠিক একই বিষয়টা বাংলাদেশ সরকারের জঙ্গী নির্মূল ব্যবস্থা পরিচালনায় দেখতে পাচ্ছি। এখানে মূল কথা হচ্ছে- জঙ্গী নির্মূলের জন্য "পিচ টিভি", মাদ্রাসা, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিলে জঙ্গীবাদ দমন হবে? যা বোকার গাছে-বাঁশে মলম লাগার সমতুল্য। নাকি কোত্থেকে জঙ্গীবাদ সৃষ্টি হচ্ছে তা চিহ্নিত করে সুস্থ ও সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে? আর এখানে যদি বোকার স্ত্রীর মত চালকী করা না হয়; তবে আমও যাবে, ছালাও যাবে; তাতে কেউ কাকে দোষী বলারও সময়টুকুও থাকবে না।
এখন যদি বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার 'জাতীয় ঐক্যের অাহ্বান' প্রত্যাখান করা হয়, তাহলে সামনে আমাদের জন্য গুলশান ট্রাজেডি নয়, আরো অনেক বড় বিপর্যয় বা ধ্বংস অপেক্ষা করছে। অন্যদিকে সরকারের বাঘা বাঘা মন্ত্রীরা, জনগণের বিরুদ্ধে বাঘা বাঘা ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে স্বগর্বে ঘুরে বেড়ায়, যা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য লজ্জ্বাজনক। এখানে বিরোধী দলের কথার চেয়ে জনগণের কথা বা মনোভাবই মুখ্য।
বাংলাদেশ সরকার নাকি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের(যদিও নয়) সহায়তা চাচ্ছে এ দেশের জঙ্গীবাদ দমনের জন্যে? জঙ্গী শব্দটা যেমন আতঙ্ক, তেমনি জঙ্গী দমন নীতিও আমাদের জন্য আতঙ্কের; তার চেয়েও বড় আতঙ্ক হলো জঙ্গীবাদ সৃষ্টিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত; তারা কেন জঙ্গী সৃষ্টি করে? সহজ উত্তর হচ্ছে- নিজ পকেটে অর্থ ঢোকার জন্য বা পুজিবাদী ব্যবস্থার কারণেই এ কৌশলের উদ্ভব। আর পুজিবাদের চুড়ান্ত ফল হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ যা এখন যুক্তরাষ্ট্র ও পুজীবাদী দেশগুলোর মধ্যে দেখি।
যাহোক, আমাদের দেশে একটা প্রচলিত কথন আছে যে, "লেবু বেশি কচলে রসের বদলে তিতা বের হয়" কথাটা আসলে সত্যিই প্রতিফলিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী আচরণ যখন আফগানিস্তান, ইরাক ইত্যাদিতে দেখি তখন সহজেই অনুমান করা যায়। কারা জঙ্গী তৈরী করতেছে বা কাদের কারণে জঙ্গীবাদ সৃষ্টি হচ্ছে; আর ভারত হচ্ছে নতুন বালেগ হওয়া পুজিবাদী দেশ; তারাও কিন্তু একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের চলা পথ অনুসরণ করবেই। ভারতের শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী তার পার্শবর্তী দেশ গুলোকে চলে, বলে, কৌশলে তাদের অধীন রাখতে পারাই হলো তাদের কৃতিত্ব। ভারত যেখানে নিজেদের জনগণের টয়লেট নিশ্চিত করতে পারে না, লাশ বহনের জন্য গাড়ি জোগাড় করতে পারেনা। তারা কিভাবে অন্য দেশকে জঙ্গীবাদ থেকে নিরাপদ করবে? যদিও তাদের দেশের জঙ্গীবাদ দমনে তারা নিজেরাও যথেষ্ট দক্ষ বলে মনে হয় না। যদিও তারা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ভারতের দাবি হিসাবে বাংলাদেশ তাদের বন্ধু; আমেরিকা ত চিন্তার চিন্তক!
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জঙ্গীবাদ ফসল কারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা সময়ের পরিবর্তনের সাথে জঙ্গীবাদের নামেরও পরিবর্তন ঘটান। হালের আইএস হলো অতীতের তালেবান, এর আগে ছিল আল-কায়দা, এরও আগে বলা বলা হতো ধর্মের বিদ্বেষ কারী নাস্তিক; যদিও এ শব্দগুলো ভাসা ভাসাভাবে আজও ব্যবহার করে আসছে, যা আমরা প্রতিনিয়ত শোনতে পাই।
যখন দেশের ছেলে-মেয়েরা যৌবন প্রাপ্ত হয়, তখন তারা সামনের দিকে যাওয়ার জন্য তাদের দুটি পথ থাকে; তার একটি হল 'ভাব জগত', অন্যটি হলো 'বস্ত জগত', এ দুয়ের মাঝামাঝি যার অবস্থান, সেটি হলো ভাসমান জগত; যেখানে উপরের দু'দলেরই মিশ্রণ। যাকে আমরা বলতে পারি মধ্যম পন্থা।
ভাব জগৎ হচ্ছে- ধর্ম, ডানপন্থী, দক্ষিণপন্থী, পুজিবাদী,
ঠিক একইভাবে যদি বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জঙ্গীবাদ সৃষ্টির পেছনের কারণ বিশ্লেষণ করা হয়। তখন কিন্তু এ ভাব জগৎ বৃত্তের মানুষই বেশি পাব। আর আজ বামপন্থি বলে যাদের বলে থাকি তারাও নিজেদের চরিত্র হারিয়েছে। বাম ও ডানপন্থীরা নিজেদের চরিত্রকে ঘোলাটে করার ফলই হচ্ছে জঙ্গীবাদ।
আশা করি, রাজনৈতিক প্রতি হিংসা নয়; সুস্থ অভিযান ও সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জঙ্গীবাদের মূল ধ্বংস হোক এ প্রাণের দেশ বাংলাদেশে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৮