নতুন ব্যাচলর; চট্টগ্রামের হাটাজারী উপজেলার বাস ষ্ট্যান্ডের পশ্চিম পার্শে ট্রেন লাইনের পূর্বপার্শেই তিন তলা বিশিষ্ট একটি ইমারত।
আমার এক কুয়াশাচ্ছন্ন বন্ধু ঐ রোমের অধিবাসী হিসাবে প্রায় দু'বছর। তার সূত্র ধরে বাসাটা পেতে বেশি বেগ পেতে হলো না। দু'তলায় ছিল রোমটা। চারটি সমান কক্ষের এক কক্ষে আমার চকিটা বসালাম। (১০*১২) ফুটের কক্ষে, রোমের সাথে সংযুক্ত গোসলখানা; থাকতাম তিনজন, চকি ও টেবিল তিনটা করে। বাসা ভাড়া পাচ হাজার। কিন্ত আমার কক্ষে দিতে হয় প্রায় একুশ শত পঞ্চাশ টাকা যা পুরো ভাড়ার দুই-চতুর্থাংশ। এ বৈসম্যের কথা আগে না জানলেও রোমে উঠার পরে জানলাম। এখানেও নাকি মেস প্রধান আছে, তার ইচ্ছায় মেসের সকল আইন তৈরী ও প্রয়োগ হয়; তার কাজে মেসের কেউ কোনো অভিযোগ বা বাধা দিলেই তাকে মেস থেকে বাহির করে দেয়া হয়। এ হলো ব্যাচলর বাসার একটা দিক! এ ব্যাচলর ইমারতে কোনো নিরাপত্তা কর্মি নেই; এমন কি বাসার মালিক প্রবাসে থাকে; তার এক প্রতিনিধি প্রতিমাসে এসে ভাড়া গুলো নিয়ে যায়।
এ বিল্ডিং এর এত সমস্যা দেখে মনে হলো- বাসার মালিক বোধয় ব্যাচলরের কোনো অভিযোগও শোনে না। আমার রোমের সামনেই ছিল ব্যাচলর ডাসবিন। গন্ধ ত গন্ধই। কে শোনে কার কথা। বাসাটিতে উঠার কয়েক দিনের মধ্যেই বড় ধরনের চুরির শিকার হলাম। অনেক কিছুই হারালাম। ব্যাচলর জীবনে প্রয়োজনীয় জিনিস হারার বেদনাটা ছিল, কোন আপন জন হারাবার মতই। যাহোক, মাস দেড়েক থাকার পরে হঠাৎ এক রাতে দেখি পুলিশের পয়ের বুটের আওয়াজ। নিশ্বঃস থমকে গেল! পুলিশ বিভিন্ন রোমে সার্চ করার ঘন্টা দুয়েক পরেই দেখি আমার রোমে পুলিশের হাহাকারী হানা। আমার এক মেসমেটের সাথে, আসা এএসআই পুলিশের সাথে সম্পর্কের দরুণ গ্রেপ্তার থেকে বেচে গেলাম। আমি এক নিরহ ছাত্র; রাজনীতিতে নেই, জঙ্গীনীতিতেও নেই; আছি মানবনীতিতে। তার পরেও পুলিশী ভয় মনে ভর করে সারাক্ষণ।
মেসে আমরা থাকি আটজন। তিনজন লজিনে খায়। বাকি আমরা পাচ জনে মেস করে খাই। এ ঘোলাটে সাংস্কৃতির এলাকায় কোনো বোয়া(কাজের মেয়ে) পাওয়া যায় না। আর বোয়া পেলেও তারা রান্না করতে চায় না। কারণ- পাছে লোকে কিছু বলে এবং সত্যিই বলেও। আর সপ্তাহে দিন হলো ৭টি; মেসে খাই পাচজন। রান্নাও মেস প্রধানের নির্দেশে হয়! মেসে উঠার প্রথম সপ্তাহে মেসমেটদের দয়ায় রান্না করতে হয় নাই। পরের সপ্তাহে ঠিকই রান্না করলাম আনাড়ি হাতের দক্ষ রান্না। প্রথম দিনই রান্নার খ্যাতি আর্জন করলাম; আসলে রান্নাতে দক্ষ ছিলাম না, নিজের অজান্তেই রান্নাটা ভালো হলো। পরের সপ্তাহ- দুপুরের অর্ধেক রান্না সম্পন্ন, হঠাৎ পানি চলেগেল। পানি আর আসে না। কোন মতেই রান্নাটা সারলাম অতি কষ্টে। পানির অপেক্ষায় বিকাল ৪টা। ভাগ্যিস ঐ দিন ক্লাস ছিলনা।
আমার টিউশনি ছিল দু'টা। বিকাল ৫টা থেকে ৮ট পর্যন্ত চলত। হঠাৎ একদিন টিউশনি থেকে ফিরে এসে দেখি মেসমেট সবাই একাকার। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পর ক্ষণে বুঝলাম। মেসে মারামারি হয়েছে এবং দু'জন মেসমেট মিলে মেস প্রধানকে মারছে। মেজে রক্ত দেখলাম। এক সপ্তাহ পরে মেসটা ছেড়ে দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৮