বারবার কাশি হচ্ছে, রাতে কাশি বেশি, কাশতে কাশতে কখনো বমি হয়ে যাচ্ছে, কখনো বা কাশির সঙ্গে গা-হাত-পায়ে ব্যথা। এমনটা তো মাঝেমধ্যেই হয়। লাগাতার সাত-আট দিন কাশি হলে চিন্তা হয় নিশ্চয়ই।
কেন আমরা কাশি?
শরীরকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অনেক ব্যবস্থা আছে। সেসব ব্যবস্থারই একটা হলো কাশি। কাশি হলে বুঝতে হয় শরীর সমস্যায় পড়েছে, সম্ভবত সে সমস্যা শ্বাসনালিতে। শ্বাসনালিকে পরিষ্কার করার জন্য আমরা কাশি।
কাশির সময় কী হয়?
নাক ও মুখের পেছন দিকটা এক, সেখান থেকে দুটি নালি আলাদা হয়ে যায় শ্বাসনালি ও খাদ্যনালি। খাবার খাওয়ার সময় যাতে শ্বাসনালিতে খাবার ঢুকে না যায়, তাই শ্বাসনালির শুরুতে একটা দরজা থাকে। কাশির সময় সেই দরজা বন্ধ হয়, ফলে বুকে ফুসফুসের ভেতরে চাপ বাড়ে। এই বাড়তি চাপে হঠাৎ দরজা খুলে গিয়ে ফুসফুসের বাতাস তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে। তাড়াতাড়ি বাতাস বেরোনোর জন্য কাশির আওয়াজ হয়।
কফ বেরোয় কিভাবে?
কফ আসলে শ্বাসনালির রস। স্বাভাবিক অবস্থায় শ্বাসনালিকে ভিজিয়ে রাখা এর কাজ। শ্বাসনালির ভেতরের আবরণী স্তম্ভ বা থামের আকারের কোষ দিয়ে তৈরি, আর সেই কোষগুলোর ওপরে আছে রোঁয়া বা সিলিয়া। শ্বাসনালিতে রস বা শ্লেষ্মা দুটি স্তরে থাকে-ওপরে তিন ভাগ ঘন জেলির মতো জেল, আর নিচে সাত ভাগ খুব পাতলা সল। সল স্তরে রোঁয়াগুলো ডুবে থাকে আর খাড়া অবস্থায় রোঁয়ার ডগাগুলো ছুঁয়ে থাকে জেলস্তরকে। রোঁয়াগুলো যখন কোনো এক দিকে হেলে যায়, তখন সেদিকে জেলস্তরকে ঠেলে দেয়। শ্বাসনালির রোঁয়াগুলো একদিকেই হেলতে পারে, ভেতর থেকে বাইরের দিকে। ফলে জেলস্তর ফিতের মতো ভেতর থেকে বাইরের দিকে চলে আসে। এই জেলস্তরেই ধুলো আর জীবাণুগুলো আটকে গিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। কফ হলো কাশি হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্দীপক, অর্থাৎ কফ থাকলে কাশি হয়।
কাশি কোনো রোগ নয়
কাশি কোনো রোগ নয়, অনেক রোগের একটা সাধারণ উপসর্গ হলো কাশি। অনেক রোগে কাশি হয়, যেমন-
* শ্বাসতন্ত্রের জীবাণুসংক্রমণ-নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি।
* শ্বাসতন্ত্রের এলার্জি-যেমন হাঁপানি।
* শ্বাসতন্ত্রের ক্যান্সার।
* শ্বাসনালিতে ধোঁয়া, ধুলো ঢুকলে-ধূমপানে,
ধূলিবহুল কর্ম পরিবেশে।
কাজ থেকে কাশি
যেসব কাজের পরিবেশ ধূলিবহুল, সেখানে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের শ্বাসতন্ত্রে ধুলা ঢোকে। বড় ধূলি কণাগুলো নাকের লোমে আটকা পড়ে, তার চেয়ে ছোট কিছু কণাকে শ্বাসনালির রোঁয়া কফের সঙ্গে বের করে দেয়, একদম ছোট কণাগুলো কিন্তু ফুসফুসের হাওয়ার থলিতে ঢুকে ঘায়ের সৃষ্টি করে। এই রোগগুলোকে একসঙ্গে বলা হয় ডাস্ট ডিজিজেস বা পেশাগত অসুখবিসুখ। যেমন, পোশাক কারখানার একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় বাতাস চলাচল করতে না পারায় এবং অক্সিজেনের অপর্যাপ্ততায় যক্ষ্মার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
কাশি হলে কী করবেন?
* প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, এতে কফ পাতলা হবে, কফ বের করা সহজ হবে।
* গরম পানির ভাপ নিন। ভাপ শ্বাসনালিতে গিয়ে জলে পরিণত হবে, কফ পাতলা হবে।
* শুকনো কাশিতে গলা খুসখুস করলে হালকা গরম জলে একটু লবণ দিয়ে কুলকুচি করুন। মুখে সাধারণ যেকোনো লজেন্স, লবঙ্গ বা আদা রাখলেও একটু আরাম পাওয়া যাবে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
* কাশির সঙ্গে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট হলে।
* কফের সঙ্গে রক্ত পড়লে।
* কাশতে কাশতে শরীর নীল হয়ে গেলে।
* কথা বলতে কষ্ট হলে।
* দুধের বাচ্চা দুধ টেনে খেতে না পারলে।
* দুই সপ্তাহের বেশি কাশি হলে।
লিখেছেন :
ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
সহকারী অধ্যাপক, বক্ষব্যাধি, এম এইচ শমরিতা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা।
(সংগৃহীত)