৭ টি মিথ্যা যা মা সব সময় সন্তানদের ভালোর জন্য বলেন ( লেখাটি সংগ্রহীত, বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার জন্য এখানে পোষ্ট করলাম।)
গল্পের শুরুটা ছিল শৈশব দিয়ে।
যখন আমি ছোট.. দরিদ্রতার মধ্যে আমাদের বসবাস... পর্যাপ্ত খাওয়া জুটছিল না। অনেকটা নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। কিছু খাদ্যের সংস্থান হয় যখন... তখন মা আমাকে তার অংশটুকুও আমাকে দিয়ে বলত.. “আমার ক্ষুধা নেই”। আর এটাই ছিল আমার মা'র প্রথম মিথ্যা কথা।
বাড়ন্ত সময়... সন্তানের পুষ্টির কথা সব মা'র ভাবনায়। আমার মা জননী আমার সেই সময়ের পুষ্টিমানের কথা বিবেচনা করে আমার জন্য মাছ রান্নার চেষ্টা করতেন। এমনি একদিন মা আমার মাছ রান্না করলেন। তো, একটা মাছ বাবাকে দেয়া হলো.. আর দুটা আমাকে। আমি একটা মাছ মাকে দিতে গেলাম.. মা নিতে চাইল না। বলল... তোমার এখন বেশী বেশী মাছ খাওয়া প্রয়োজন। আর আমার আসলে মাছ খুব একটা ভালও লাগে না। এটা ছিল আমার মা এর দ্বিতীয় মিথ্যা কথা।
আমার লেখাপড়ার জন্য মা কাজ করছে... কোন এক রাতে মা আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে.. মাকে বললাম.. “মা, তুমি ঘুমাচ্ছ না কেন? কাল তো আবার তোমার কাজে যেতে হবে।”... মা আমাকে বলল.. “বাবা, তুই ঘুমা... আমি আজ খুব একটা টায়ার্ড না”। আসলে তখন আমার স্কুলের সেশন ফি দেয়ার সময় ছিল। আর এই দুশ্চিন্তায় আমার মা’এর চোখে ঘুম ছিল না। এটা ছিল আমার মা এর তৃতীয় মিথ্যা কথা।
আমার এসএসসি পরীক্ষার সময়... মা আমার সঙ্গে কেন্দ্রে গিয়েছেন। পুরোটা সময় রোদ মাথায় নিয়ে অপেক্ষা করেছেন তার সন্তানের জন্য। তখন এখনকার মত কমিশনাররা প্যান্ডেল বানিয়ে দিতো না। তো... বেল বাজার পর আমি মায়ের সাথে কাছে ছুটে এলাম। মা আমার ফ্লাক্সে ভরে গরম দুধ সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। দুধটুকু অবশ্যই আমার মায়ের ভালবাসার চাইতে বেশী ছিল না। এতক্ষণে খেয়াল হলো মা ঘামে ভিজে জবজবে.. আমি কিছুটা খেয়ে মাকে বাকিটা খাওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম... মা বলল.. “বাবা... আমি তেষ্টা পায় নাই”। এটা ছিল আমার মা এর চতুর্থ মিথ্যা কথা।
লেখাপড়া সমাপ্তির পর যখন আমি চাকরিতে জয়েন করলাম। আমার বৃদ্ধ মা কে তার কাজ থেকে অবসর নেওয়ার জন্য অনুরোধ করালাম। মা রাজী হলো না। মাকে কোন টাকা দিলেও তা সাথে সাথে ফেরত দিত... বলত আমার পর্যাপ্ত টাকা আছে। এটা আমার মা এর পঞ্চম মিথ্যা কথা
স্নাতকোত্তর লেখাপড়া সম্পন্ন করার পর যখন একটি হ্যান্ডসাম স্যালারীর চাকরির অফার গ্রহণ করি... এবং মাকে সাথে রাখতে চাই... আমার মা বলে “বাবা... আমি আসলে সাদামাটা জীবনেই কমফোর্ট ফিল করি”। এটা ছিল আমার মা’র ষষ্ঠ মিথ্যা কথা।
আমার মা যখন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী... তখন আমি মা’র কাছ থেকে যোজন যোজন দূরত্বে অবস্থান করছিলাম। আমি দ্রুত বাড়ি ফিরে হাসপাতালে মায়ের কাছে গেলাম। অপারেশনের কারণে তিনি ছিলেন বিছানায় শয্যাশায়ী। মা আমার আমায় দেখে অনেক কষ্টে হাসলেন। কিন্তু এটা ছিল আমার কাছে অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। কজ, মা আমার বিছানায় রোগ শোকে ক্ষীণ, শীর্ণ হয়ে পড়েছেন। মা আমায় বলছিলেন “বাবা, আরে পাগলা ছেলে... কাঁদে না... আমার কোন সমস্যা নেই”। এটা ছিল আমার মা’র সপ্তম মিথ্যা।
যে মা আমাকে দিয়েছে দুনিয়া দেখার অধিকার... যিনি নিজে কেঁদে আমাকে কান্না স্পর্শ করতে দেন নি... যার চোখে সব সময় দেখেছি ভালবাসার আলোকচ্ছটা... সেই স্বর্ণ হৃদয়ের মা.. আজ সে ক্ষীণ শীর্ণ, রোগ শোকে কাতর।
বন্ধুরা.. মা’কে ভালবাস। জীবনের সকল ভালবাসা মা’র জন্য উত্সর্গ করলাম। মা তোমায় ভালবাসি জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে। ভাল থাক আমার মা জননী।
ধন্যবাদ
তৌহিদুল বারী হিমেল
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ১২:৫৯